Imran Khan: ফেলেছেন ধর্মীয় তাস, প্লেবয়-ক্রিকেটার থেকে ইমরান এখন গোঁড়া ধর্মীয় নেতা

Imran Khan: অধিকাংশ আসনেই এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ইমরান সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরাই। কীভাবে এই জনমোহিনী আকর্ষণ তৈরি করলেন ইমরান? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, যে ইমরান একসময় ছিলেন 'প্লেবয় ক্রিকেটার', জনগণকে নিজের দিকে টানতে, তিনিই এখন রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতায় পরিণত করেছেন নিজেকে।

Imran Khan: ফেলেছেন ধর্মীয় তাস, প্লেবয়-ক্রিকেটার থেকে ইমরান এখন গোঁড়া ধর্মীয় নেতা
বাঁদিকে - জেমাইমার সঙ্গে প্লেবয় ইমরান, ডান দিকে - বুশরা বিবির সঙ্গে রক্ষণশীল নেতা ইমরানImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 10, 2024 | 3:42 PM

ইসলামবাদ: ফের একবার নির্বাচনে জয় পেতে পারেন ইমরান খান। গত বছর, দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জেরে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। তারপর তিনটি মামলায় তাঁর জেল হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর দলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দল হিসেবে নির্বাচন উপরন্ত, পাক সেনার পূর্ণ সমর্থন ছিল নওয়াজ শরিফের প্রতি। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচনের যে ফল সামনে এসেছে, তাতে হাড্ডাহাড্ডি লডা়ই হচ্ছে নওয়াজ শিবির এবং ইমরান শিবিরের মধ্যে। তবে, অধিকাংশ আসনেই এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ইমরান সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরাই। কীভাবে এই জনমোহিনী আকর্ষণ তৈরি করলেন ইমরান? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, যে ইমরান একসময় ছিলেন ‘প্লেবয় ক্রিকেটার’, জনগণকে নিজের দিকে টানতে, তিনিই এখন রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতায় পরিণত করেছেন নিজেকে।

প্লেবয় ইমরান

১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন যে ইমরান, তিনি ছিলেন সেলিব্রিটি এবং তাঁর ভাবমূর্তি ছিল প্লেবয়ের। একের পর এক হাই-প্রোফাইল মহিলার সঙ্গে তাঁর রোম্যান্স নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা হত। তাঁর প্রথম দুই স্ত্রী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জেমাইমা গোল্ডস্মিথ এবং রেহাম খান। দুজনেই ছিলেন পশ্চিমী ভাবধারার। দুই স্ত্রীয়ের বাইরেও বহু মহিলার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে। সেই সময়, ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলিতে তাঁর বাধাধরা জায়গা ছিল। ক্রিকেট পিচের বাইরে তাঁর পরিচয় ছিল উদারপন্থী হিসেবে। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির মতো সামাজিক কাজে দেখা যেত তাঁকে। ১৯৯৬-এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর প্রথম দেড় দশকেও সংস্কারবাদী এবং উদারপন্থী ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন তিনি। তবে, সেই সময় তাঁর দল নির্বাচনে হাতে গোনা আসন পেত।

প্লেবয় ইমরানের ছবি নিয়মিত ছাপা হল ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলিতে

রক্ষণশীল ইমরান

২০১৬ সাল থেকেই নিজেকে একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিলেন ইমরান। নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ রক্ষণশীল মুসলমান হিসাবে তুলে ধরতে দেখা যায় তাঁকে। তাঁর হাতে দেখা যায়, প্রার্থনা করার পুঁতির মালা। বিভিন্ন ইসলামি ধর্মগুরুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা শুরু করেন। প্রকাশ্যেই, তাঁদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা শুরু করেন। আর এর পিছনে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর তৎকালীন আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা তথা বর্তমান স্ত্রী বুশরা মানেকা বা বুশরা বিবির। ২০১৮ সালের শুরুতে এই বুশরা বিবিকেই বিয়ে করেন ইমরান। এটা ছিল তাঁর তৃতীয় বিয়ে। ইমরানের আগের দুই বিয়ের সঙ্গে, এই বিয়ের ছিল আকাশ-পাতাল তফাত। তাঁর তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবি সবসময়ই আপাদমস্তক আবায়ায় ঢেকে রাখেন। নারীবাদ মায়ের ভূমিকাকে অবনত করে, বলে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন ইমরান। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কট্টরপন্থী মুসলিম ধর্মগুরুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, এমনকি, জঙ্গিদের প্রতিও তাঁকে সহনশীল ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। প্লেবয় ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলে, নয়া পাকিস্তানের নয়া ইসলামি ধর্মগুরু হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।

সবসময় আপাদমস্তক আবায়ায় ঢেকে রাখেন ইমরানের বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি

জঙ্গিদের সঙ্গে তিনি বারবার আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। তালিবানের জনক হিসেবে পরিচিত সামিউল হকের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছেন। এই সামিউল হকের মাদ্রাসাতেই একসময় তালিবান নেতা মোল্লা ওমর এবং জালালুদ্দিন হক্কানি শিক্ষা নিয়েছিলেন। আল কায়েদার শাখা, হরকত-উল-মুজাহিদিনও ইমরান খানের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। একইসঙ্গে ইমরান খান বারবার নিশানা করেছেন আমেরিকাকে। চরমপন্থী মুসলিমদের সাধারণ শত্রুকেই তিন পাকিস্তানের সবথেকে বড় শত্রু বলে প্রচার করেছেন। এমনকি, তাঁর সরকারের পতনের পিছনেও আমেরিকার হাত ছিল বলে, অভিযোগ করেছেন। আর এভাবেই, উগ্র ধর্মীয় তাসের জোরেই, সেনার প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও , পাকিস্তানিদের মধ্যে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।