Gen Waker-Uz-Zaman: জেনারেল জামানের বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছিল ভারত, কানে নেননি হাসিনা
Gen Waker-Uz-Zaman: এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট, বাংলাদেশে হত্যা করা হয়েছিল সেই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তথা জাতির জনক হিসেবে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমানকে। আগেই তাঁকে সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে সতর্ক করেছিল ভারত। তিনি কথা শোনেননি। হাসিনাকেও একইভাবে জেনারেল জামানের বিষয়ে সতর্ক করেছিল ভারত। কথা কানে নেননি হাসিনাও।
নয়া দিল্লি ও ঢাকা: এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট, বাংলাদেশে হত্যা করা হয়েছিল সেই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তথা জাতির জনক হিসেবে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমানকে। এক সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সফল না হলেও, প্রাণ গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যর। তবে, তার আগে এই ধরনের একটা সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হতে পারে বলে বারংবার সাবধান করেছিল ভারতীয় গোয়েন্দারা। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা আরএনডি সাবধান করেছিল, পদাতিক বাহিনীর মধ্য থেকে এই ধরনের একটা চেষ্টা করা হতে পারে। তবে, সেই কথা কানে নেননি শেখ মুজিব। তার বিরাট মাশুল দিতে হয়েছিল তাঁকে। ২০২৩-এর জুনে নয়া সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়োগ করেছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবারও সতর্ক করেছিল ভারত। কিন্তু বাবার মতো হাসিনাও সেই সতর্কবার্তা কানে তোলেননি।
ওয়াকার সম্পর্কে কী জানিয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা? তাঁরা বলেছিলেন, ওয়াকারকে সেনাপ্রধান করে বিপদ ডেকে আনছেন হাসিনা। তিনি সুযোগ পেলেই চরমপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন বলে জানানো হয়েছিল হাসিনাকে। কিন্তু, হাসিনা শোনেননি। ওয়াকারকেই নয়া সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। বাংলাদেশ সেনায় প্রায় চার দশক ধরে আছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি উচ্চশিক্ষিত। পাশপাশি, তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়ও বটে। হাসিনার কাকার জামাই তিনি। তাই সম্ভবত তাঁর উপরই ভরসা রেখেছিলেন হাসিনা। তবে, তাঁর এই সিদ্ধান্ত, তাঁর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পতনে বড় অবদান রেখেছে বলে, মনে করছেন বেশ কিছু বিশ্লেষক।
শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে, গত রবিবারই বেঁকে বসেছিলেন সেনাপ্রধান। তিনি জানিয়েছিলেন, আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চালাবে না সেনা। কারণ বাংলাদেশি সেনা সেই দেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে। এরপরই পরিস্থিতির দ্রুত পাল্টে যায়। সোমবার সকালে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে একপ্রকার হুঁশিয়ারি দেন জেনারেল জামান। কঠোর অবস্থান নেন তিনি। পরিষ্কার জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে হবে। সূত্রের খবর, হাসিনা দুদিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁকে সেনাপ্রধান সময় দেন মাত্র ৪৫ মিনিট। তারমধ্যেই বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়লে, তবেই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে সেনা। নাহলে বিক্ষোভরত জনতার হাত থেকে তাঁদের রক্ষার কোনও দায় নেবে না বাংলাদেশি সেনা। এরপরই হাসিনা ও রেহানা ভারতে চলে আসেন।
এদিকে, হাসিনার ইস্তফার পর সেই দেশের রাজনৈতিক ছবিটাও সম্পূর্ণ ঘুরে গিয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি-র প্রধান নেত্রী, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে সেনাবাহিনী। হাসিনা দেশত্যাগ করার পরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিন, জেলের বাইরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শুধু, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়াই নয়, বিএনপি এবং জামাতে ইসলামির যে সকল নেতা-কর্মী জেলে রয়েছেন, সকলকেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি-জামাতের নেতাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে জামাতে ইসলামি, ইসলামি ছাত্রশিবির-সহ ইসলামপন্থী দলগুলিই। আর এতে মদত রয়েছে বাংলাদেশি সেনার, বা বলা ভাল সেনাপ্রধান জেনারেল জামানের।