Titanic: টাইটানিকের পাশেই সলিল সমাধি ‘নিখোঁজ’ ডুবোজাহাজের পাঁচ যাত্রীর
যে টাইটানিক দেখার আশা নিয়ে অতলান্তিকে ডুব দিয়েছিলেন ৫ অভিযাত্রী, সেই বিখ্যাত জাহাজের 'বো' অর্থাৎ, সামনের অংশ থেকে সামান্য দূরেই সলিল সমাধি ঘটল তাঁদের। সরকারিভাবে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করল মার্কিন উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং 'ওশানগেট' সংস্থা।
ওয়াশিংটন: বৃথা আশা জেনেও সকলেই বুক বেঁধেছিলেন। যদি কোনও মিরাকল ঘটে, জীবিত উদ্ধার করা যায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজের যাত্রীদের। অবশেষে সেই আশার আলো নিভল। যে টাইটানিক দেখার আশা নিয়ে অতলান্তিকে ডুব দিয়েছিলেন ৫ অভিযাত্রী, সেই বিখ্যাত জাহাজের ‘বো’ অর্থাৎ, সামনের অংশ থেকে সামান্য দূরেই সলিল সমাধি ঘটল তাঁদের। এর আগে, টাইটানিকের বো অংশ থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটি জলযানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। পাঁচ অভিযাত্রীরই মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করল মার্কিন উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং ‘ওশানগেট’ সংস্থা।
ওশানগেটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, আমাদের সিইও স্টকটন রাশ, শাহজাদা দাউদ এবং তার ছেলে সুলেমান দাউদ, হামিশ হার্ডিং এবং পল-হেনরি নারজিওলেট চিরতরে হারিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা সত্যিকারের অভিযাত্রী ছিলেন। আমরা এই পাঁচ জনের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং আমরা তাঁদের পরিবারের পাশে আছি। আমাদের প্রত্যেক কর্মী গভীরভাবে শোকাহত। বিভিন্ন দেশের একাধিক সংস্থার অগণিত পুরুষ ও মহিলারা তাঁদের সন্ধানে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। পুরো ওশানগেট পরিবার তাঁদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”
মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা জানিয়েছেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছেই এদিন যে জলযানের ধ্বংসাবশেষটি পাওয়া গিয়েছিল, তাতে ওশানগেটের টাইটান সাবমেরিনের পাঁচটি বড় টুকরো শনাক্ত করা গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নোজ কোন’ বা একেবারে সামনের অংশ, ‘প্রেসার হলে’র বাইরের অংশ, ‘ল্যান্ডিং ফ্রেম’ এবং ‘রিয়ার কভার’ বা পিছনের ঢাকনার অংশ। ইউএস কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার বলেছেন, ‘ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হচ্ছে, প্রেসার চেম্বারের কোনও ক্ষতির কারণে সাবমেরিনটি ধ্বংস হয়েছে। কোস্ট গার্ড এবং সমগ্র ইউনিফাইড কমান্ডের পক্ষ থেকে, আমি নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, নিহতদের দেহাবশেষ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ঘটনাস্থলের পরিবেশ অত্যন্ত প্রতিকূল। তবে, সাগরের নীচে এরপরও অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ঠিক কখন সাবমেরিনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা জানা এক প্রকার অসম্ভব বলে জানিয়েছেন মাগার। তবে গত সোমবার থেকে তাঁদের ‘সোনার বয়া’গুলি জলে রয়েছে। সেগুলিতে কোনও বিস্ফোরণের শব্দ ধরা পড়েনি। তাই তাঁর অনুমান, তার আগেই ওই বিপর্যয় ঘটেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবমেরিনটিতে ফাটল ধরেছিল এবং জলের অত গভীরে প্রচণ্ড চাপে গোটা ডুবোজাহাজটি ফেটে যায়। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাহাজটিতে থাকা পাঁচ যাত্রীর মৃত্যু হয়। কারণ, ওই গভীরতায় জলের চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে অন্তত ৪০০ গুণ বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক দিন ধরেই এই ধরনের কিছু ঘটেছে বলে অনুমান করছিলেন। এখন সেই অনুমান সঠিক হওয়ার পর তাঁরা বলছেন, একটাই স্বান্ত্বনা, কোন রকম কষ্ট না পেয়েই, কিছু বোঝার আগেই, আক্ষরিক অর্থে কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ অভিযাত্রীর।