না বলা অনেক কথা বলে দিল একটি ছবি, নীরবেই ‘আসল’ পঞ্জশীরের পরিচয় করালেন মাসুদ

নিজের শেষটুকু দিয়েও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পাঠ দিয়ে গিয়েছেন আহমেদ শাহ মাসুদ। তাঁর নেতৃত্বে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পঞ্জশীরের বাসিন্দারা, তার সামনে টিকতে পারেনি রুশ বাহিনী। ব্যর্থ হয়েছিল ৯৬' সালের তালিবান বাহিনীও।

না বলা অনেক কথা বলে দিল একটি ছবি, নীরবেই 'আসল' পঞ্জশীরের পরিচয় করালেন মাসুদ
পঞ্জশীরের অন্য রূপ তুলে ধরলেন আহমেদ মাসুদ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 06, 2021 | 3:00 PM

পঞ্জশীর: কথায় আছে একটি ছবিই হাজারটা কথা বলে। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা একটা ছোট্ট উপত্যকা। মাঝখান দিয়ে একে বেঁকে বয়ে যাচ্ছে নদী। পাশেই রয়েছে শস্যক্ষেত। ছবিটি দেখে কোনও সিনেমার চিত্রপট বলে মনে হতেই পারে, কিন্তু এটিই আসল পঞ্জশীর। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা মানুষরাও কিন্তু অতি সাধারণই। তবে বাকিদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য় একটাই, বিনা প্রতিরোধে তারা নিজেদের অধিকার ছেড়ে দিতে রাজি নন। পঞ্জশীরের প্রতিরোধের সঙ্গে বিশ্ববাসী পরিচিত হলেও এ বার অন্য রূপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল তাদেরই নেতা আহমেদ মাসুদ।

গোটা দেশ যখন সাদা-কালো পতাকায় ঢেকেছিল, তখনও এই প্রদেশে উড়ছিল কেবল আফগানিস্তানের পতাকা। কার্যত বিনা যুদ্ধেই রাজধানী কাবুল দখল নিয়েছিল তালিবানরা, সেখানেই এক চুল জমিও ছাড়তে নারাজ ছিল পঞ্জশীরের প্রতিরোধ বাহিনী। গোটা দেশ যেখানে তালিবানের সামনে মাথা নুইয়েছে, সেখানেই কোথা থেকে প্রতিরোধের শক্তি পাচ্ছে পঞ্জশীর?

রাজধানী কাবুল দখলের পরই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন  প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তার আগেও তালিব বাহিনীকে বিভিন্ন প্রদেশ দখল করা থেকেও বাধা দেয়নি আফগান সেনা। সেখানেই ব্য়তিক্রম হয়ে দাঁড়াল পঞ্জশীর। আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ বাহিনী সাফ জানিয়ে দিল, তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। যতদিন প্রাণ রয়েছে, তারা তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

পঞ্জশীরের বাসিন্দাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন মাসুদ পিতা-পুত্রই। নিজের শেষটুকু দিয়েও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পাঠ দিয়ে গিয়েছেন আহমেদ শাহ মাসুদ। তাঁর নেতৃত্বে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পঞ্জশীরের বাসিন্দারা, তার সামনে টিকতে পারেনি রুশ বাহিনী। এখনও পঞ্জশীরের আশেপাশে রুশ বাহিনীর ফেলে যাওয়া গাড়ি, সামরিক বিমান দেখতে পাওয়া যায়।

১৯৯৬ সালে যখন তালিবান প্রথমবার আফগানিস্তান দখল করেছিল, সেই সময়ও রুখে দাড়িয়েছিল পঞ্জশীরই। আল কায়েদার হাতে আহমেদ মাসুদ নিহত হলেও পঞ্জশীরের দখল নিতে পারেনি তালিব বাহিনী। ২০ বছর বাদে ফের আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবান। তবুও পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই পঞ্জশীরই। কারণ আহমেদ শাহ মাসুদের দেখানো পথেই তাঁর ছেলে আহমেদ মাসুদও তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলেছে।

তালিবানরা বারংবার যখন পঞ্জশীর দখলের দাবি জানিয়েছিল, তখন শান্ত গলায় আহমেদ মাসুদ একটাই জবাব দিতেন, “আমরা মাথা নোয়াবো না, তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করব না”। শান্তির বার্তা তিনিও দিয়েছিলেন, কিন্তু তালিবানরা তা গ্রাহ্য করেনি। বিদেশি শক্তি ও নানা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাহায্য নিয়ে লাগাতার হামলা চালিয়েছে। এ দিন যখন গভর্নরের দফতরে তালিবানি পতাকা লাগিয়ে পঞ্জশীর দখলের ঘোষণা করল তালিবান। তার কয়েক মিনিট বাদেই মাসুদ একটি ছবি পোস্ট করলেন। পঞ্জশীরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের ছবি। কোনও কথা লেখেননি তিনি। কেবল তিনটি হ্য়াশট্যাগ, সেভ পঞ্জশীর, রেসিসটেন্স পঞ্জশীর ও পঞ্জশীর প্রভিন্স। বিনা শব্দ খরচেই যে অনেক অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া যায়, তা শেখালেন মাসুদ। ছবির মতো সুন্দর একটি জায়গা তালিবানের দখলে চলে গেলে কী হতে পারে, তারই আভাস দিলেন আহমেদ মাসুদ।

পঞ্জশীর নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে শক্তি। পার্সি থেকে অনুবাদ করলে এই শব্দের অর্থ দাঁড়ায় পাঁচটি সিংহ। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে এই প্রদেশে রয়েছে ৭টি জেলা, ৫১২টি গ্রাম। প্রায় দুই লক্ষ জনসংখ্য়ার এই প্রদেশই গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে তালিবানের বিরুদ্ধে  রুখে দাঁড়িয়ে। পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকা আসলে অনেকটা দূর্গের মতো। কোনও দেশের সঙ্গে সীমান্ত না থাকায় অনুপ্রবেশের যেমন চিন্তা নেই, তেমনই আবার চারিদিকে পাহাড় থাকায় সহজে হামলা চালানোও সম্ভব নয়।

সুখে-শান্তিতে থাকা এই পঞ্জশীরেই অশান্তি ডেকে এনেছে তালিবান। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়ে তারা পঞ্জশীরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। তবে প্রতিরোধ বাহিনী কিন্তু হারিয়ে যায়নি। সূত্রের খবর, মাসুদ সহ প্রতিরোধ বাহিনীর বাকি সদস্যরা ওই পার্বত্য অঞ্চলেই লুকিয়ে রয়েছেন। অপেক্ষা করছেন সঠিক সময়ের। তাই মুখে পঞ্জশীর দখলের আনন্দ প্রকাশ করলেও তালিবানের মনের ভিতরে যে মাসুদ বাহিনীর ভয় রয়েছে, তা একের পর এক মিথ্যা দাবিতেই স্পষ্ট। আরও পড়ুন: তালিবানের বন্দুকের সামনে ভেঙে গুড়িয়ে গেল প্রতিরোধ, পঞ্জশীর দখলের পরই নিখোঁজ মাসুদ!