বিশ্লেষণ: এই প্রথম কি কোনও মহিলার হাতে জাপানের শাসন ভার?
কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সানাই তাকাইচি ১৯৯৩ সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে তিনি প্রথম শিনজো আবের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন।
টোকিও: তবে কী এই প্রথম জাপানের শাসনভার পেতে চলেছেন কোনও মহিলা নেত্রী? সম্ভবনা সেই রকমই। জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার উত্তরসূরী হিসেবে উঠে আসছে সানাই তাকাইচির নাম। জাপানের প্রাক্তন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী সানাই তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছের কথা গোপন করেননি। জাপানের মসনদে তাকাইচির বসা সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন সে দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
কে তাকাইচি?
কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সানাই তাকাইচি ১৯৯৩ সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে তিনি প্রথম শিনজো আবের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। জাপানের শাসক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় নির্বাচন এই মাসের শেষেই হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম হেভিওয়েট তথা জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সর্মথন তাকাইচির পিছনে রয়েছে। কট্টর রক্ষণশীল মতবাদের সমর্থক তাকাইচি বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর আলাদা পদবী ব্যবহারের বিরোধী। তাকাইচির নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের একটি দল বিবাহিত দম্পতিদের ভিন্ন পদবি ব্যবহারের আইনের বিরোধিতা করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল এই ধরনের আইন জাপানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধী।
নেপথ্যে আবে?
আনুষ্ঠানিকভাবে এই লড়াইতে অংশগ্রহণ করার জন্য কমপক্ষে ২০ জন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন যা ইতিমধ্যেই জোগাড় করে ফেলেছেন তাকাইচি। আবের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির সমর্থন ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন আবে। তাঁর আমলেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জাপান উঠে আসে। ২০ জন সাংসদ তাঁর হয়ে সনর্থনপত্রে সই করবেন সেই বিষয়ে তাকাইচি আত্মবিশ্বাসী।
কেন তাকাইচি এগিয়ে?
দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার সুবাদে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে শিনজো আবের। আবের সমর্থন জোগাড় করটাই ছিল তাকাইচির ‘মাস্টারস্ট্রোক’। তিনি জানতেন আবের সমর্থন পেলে জাপানের মসনদে বসা আরও সহজ হয়ে উঠবে। এবং দেশবাসীর কাছে সহজেই প্রমাণ করতে পারবেন শিনজো আবের আদর্শের সঙ্গে তাঁর মিল রয়েছে। প্রতিরক্ষা এবং কূটনীতির বিষয়ে রক্ষণশীলদের পছন্দেরও তাকাইচি।
তাকাইচির কূটনীতি
অভ্যন্তরীণ ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী থাকাকালীন ইয়াসুকুনি মঠ পরিদর্শনে গিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসেন তাকাইচি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সেনাকর্মীদের শ্রদ্ধার্ঘ্যের প্রতীক হিসাবে মানা হয় ইয়াসুকুনি মঠ। উল্টোদিকে ওই মঠকে জাপানের সামরিকতান্ত্রের প্রতীক মনে করে চিন ও দক্ষিণ কোরিয়া। কূটনীতিকদের মতে, ইয়াসুকুনি পরিদর্শন করে চিন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে কড়া কূটনৈতিক বার্তা দিয়ে ছিলেন সেদিন।
জাপানের শাসক দল এলডিপির প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে তাকাইচির এই সম্ভাবনা তাঁর রাজনৈতিক অতীতকে পুণরায় প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। জাপানে উদ্ভুত নতুন এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সানাই তাকাইচি কবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন সেই দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। আরও পড়ুন ‘আর কেউ সমস্যা তৈরি করতে চাইলেই…’, পঞ্জশীর দখল করেই হুংকার তালিবানের, খোঁজ শুরু প্রতিরোধ বাহিনীর