Shehbaz Sharif: দাদা নয়, পাকিস্তানের ‘কাঁটার মুকুট’ মাথায় নিলেন ছোট শরিফ!
Shehbaz Sharif Pakistan PM: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরলেন শেহবাজ শরিফ। নবগঠিত পাক সংসদে এদিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সহজেই জয় পেলেন তিনি। ফের একবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরলেও, এক প্রকার কাঁটার মুকুট পরলেন তিনি। সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি।
ইসলামাবাদ: রবিবার দ্বিতীয়বারের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরলেন শেহবাজ শরিফ। নবগঠিত পাক সংসদে এদিন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সহজেই জয় পেলেন তিনি। ৩৩৬ সদস্যের মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি জোট সরকারের ২০১ জনই তাঁর পক্ষে ভোট দেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ইমরান খানের দলের ওমর আয়ুব খান। মাত্র ৯২ ভোট পেয়েছেন তিনি। পিএমএলএন এবং পিপিপি দুই দলই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে চেয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ভোটে জয়ও পেয়েছিলেন নওয়াজ। কিন্তু, তাঁর মেয়ে মরিয়ম জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে চান না নওয়াজ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এর আগের তিন দফায় তিনি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন। এবার অবশ্য, নির্বাচনে ২৬৪ আসনের মধ্যে মাত্র ৮০ আসনে জিতেছে পিএলএল(এন)।
নওয়াজের মতো রাজনীতিবিদ নন শেহবাজ শরীফ। বরং, তাঁকে পাকিস্তান বেশি চেনে দক্ষ প্রশাসক হিসেবেই। এর আগে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, ১৬ মাস ধরে তিনি জোট সরকার চালিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, তিনবার সেই দেশের বৃহত্তম প্রদেশ, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, তাঁকে জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর স্বল্প মেয়াদে তাঁর সবথেকে বড় সাফল্য ছিল ঋণ খেলাপির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের জন্য আইএমএফ-এর সহায়তা এনে দেওয়া। গত বছরের জুনে, আইএমএফ-এর প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন শেহবাজ শরিফ। তারপরই এই চুক্তি পেয়েছিল পাকিস্তান।
তবে, তাঁর সরকারের আমলেই পাকিস্তানের মূল্যবৃদ্ধির ৩৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মন্দার জন্য তিনি পূর্ববর্তী ইমরান খান সরকারকেই দায়ী করেছিলেন। শেহবাজ শরিফ দাবি করেছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক আগে আইএমএফ-এর সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করেছিলেন অমরান খান। শেহবাজ শরিফ দাবি করেন, অর্থনীতিতে স্থিতি ফেরাতে তাঁর সরকারকে বেশ কয়েকটি সংস্কার করতে হয়েছে। ভর্তুকি চালু করতে হয়েছে। এটাই পাকিস্তানের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণ। শেহবাদ শরিফের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমর্থনও রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ফের একবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরলেও, এক প্রকার কাঁটার মুকুট পরলেন তিনি। এখনও তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান। আইএমএফ-এর সহায়তার পরও, পাকিস্তানের মূল্যবৃদ্ধি ৩০ শতাংশে রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আটকে আছে মাত্র ২ শতাংশে। আইএমএফ-এর দেওয়া সহায়তাও প্রায় শেষ। আগামী মাসেই ফের এক স্বল্পমেয়াদী ঋণ নিতে হতে পারে আইএমএফ-এর কাছ থেকে। নতুন চুক্তি করতে হতে পারে পাকিস্তানকে। ন্যাশনাল এয়ারলাইন্স-সহ বেশ কিছু পরিষেবার বেসরকারীকরণ এবং বিদেশী লগ্নি টানতে হবে অর্থনৈতিক সংকট কমাতে। সৌদি আরব এবং কাতারের সঙ্গে শরিফদের সুসম্পর্ক এই ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে।
তবে, তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা। বরাবরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেসামরিক বাহিনীই। তিন মেয়াদে নওয়াজ শরিফ বারবারই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। শেহবাদ শরিফ কিন্তু পাক সেনা জেনারেলদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। তিনি অনেক বেশি সেনা অনুগত বলে মনে করা হয়। সেনার সমর্থন হারানোই কিন্তু ইমরানের পদচ্যুতির প্রধান কারণ ছিল। প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ নীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে সামরিক বাহিনী। এর পাশাপাশি, একবগ্গাভাবে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরাল করার বদলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতির মোকাবিলা করতে হবে।