পোয়াবারো আম্বানি-আদানির, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে লাভবান হচ্ছেন দুই ভারতীয় ধনকুবের?

কীভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে লাভবান হচ্ছেন মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি?

পোয়াবারো আম্বানি-আদানির, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে লাভবান হচ্ছেন দুই ভারতীয় ধনকুবের?
ছবি: ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 18, 2022 | 9:41 PM

মুম্বই: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গোটা বিশ্বজুড়েই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। তীব্র মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে কীভাবে লড়াই করা যায়, সেই কৌশল তৈরিতে ব্যস্ত রাষ্ট্র থেকে সাধারণ মানুষ। অথচ, এই একই সময়ে যুদ্ধের ভরপুর ফায়দা লুঠছেন ভারত তথা এশিয়ার দুই ধনীতম ব্যক্তি – মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি। দুই ধনকুবেরই এর আগে প্রকাশ্যে জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানির ব্যবসার অভিমুখ পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে নিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। তবে, যুদ্ধের আবহে লাভের মুখ দেখে, আপাতত সেই পরিকল্পনা অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে, আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড সংস্থার লাভ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। একই সময়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এক ত্রৈমাসিকে সবথেকে বেশি লাভ করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে রিলায়েন্স এবং আদানি এন্টারপ্রাইসের শেয়ারের দর বেড়েছে যথাক্রমে ১৯ শতাংশ এবং ৪২ শতাংশ। ‘ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স’ অনুযায়ী যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, আদানির সম্পত্তি বেড়েছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, এই সময়ে আম্বানির সম্পত্তি ৮ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্বজুড়ে মন্দার বাজারে, কীভাবে এত লাভ করলেন এই দুই ধনকুবের? উত্তর একটাই, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের জেরেই ইউরোপ-সহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশই রুশ জ্বালানি তেল বর্জন করেছে। বর্তমানে বিকল্প জ্বালানির উত্সের সন্ধানে রয়েছে তারা। চলতি মাসেই, জি৭ গ্রুপের দেশগুলি রুশ তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, পর্যায়ক্রমে কার্বন নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও, এখন ফের কয়লার মতো জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানির দিকে নজর ঘুরেছে উন্নত দেশগুলির।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে চলেছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই চাহিদা বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু তাইই নয়, চলমান যুদ্ধের ফলে জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানি আগামী ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরেই পৃথিবীতে রাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই কার্বন-ভিত্তিক জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধির ফসলই নিজেদের ঘরে তুলছেন আম্বানি-আদানি।

এর আগে, আদানি এবং আম্বানি দুজনেই, পরের কয়েক দশকে পর্যায়ক্রমে তাদের চিরাচরিত কয়লা এবং জ্বালানি তেল-এর ব্যবসা থেকে দূরে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সবুজ শক্তি ক্ষেত্রে এই দুই ধনকুবেরের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের সম্মিলিত পরিমাণ ছিল ১৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, কয়লা ও জ্বালানি তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবসার অভ্যাস থেকে সরে আসা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এটাও মাথায় রাখতে হবে, তাঁদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের ভিত্তিই হল এই জীবাশ্ম-জ্বালানি।

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে আদানিদের একটি কয়লা খনি রয়েছে। এই খনি পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে দাবি করেছেন গ্রেটা থানবার্গের মতো পরিবেশ রক্ষা কর্মীরা। চাহিদা বাড়তেই সেই বিতর্কিত খনির সম্প্রসারণ করা শুরু করেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হাতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনগার। তিন বছর পর পর বাধ্যতামূলকভাবে সেই পরিশোধাগারটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়। কিন্তু, বর্তমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই কাজ পিছিয়ে দিয়েছে রিলায়েন্স। বদলে, সুযোগ বুঝে তারা অনেক কম মূল্যে অপরিশোধিত তেলের কার্গোগুলি কিনে নিচ্ছে।

তবে, শুধু এই দুই ভারতীয় ধনকুবেরই পণ্যের চড়া মূল্যের লাভ ঘরে তুলছেন, তা নয়। মার্কিন তেল ও গ্যাস টাইকুন হ্যারল্ড হ্যাম, রিচার্ড কিন্ডার, মাইকেল এস. স্মিথ, ইন্দোনেশিয়ার কয়লাখনি মালিক লো টাক কোয়াং – বিশ্বব্যাপীই জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানী ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটছে। প্রত্যেকেরই চলতি বছরে অনেকগুণে বেড়েছে সম্পদ।