TV9 Explained: ‘ডিজিটাল রুপি’ কী? কতটা বদলে যাবে আর্থিক লেনদেনের অভ্যাস?

RBI Digital Currency: মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) ভারতের প্রথম ডিজিটাল রুপি পাইলট প্রকল্প চালু করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কী এই ডিজিটাল রুপি? এর সুবিধাই বা কী কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে কোথায় আলাদা এই ডিজিটাল রুপি?

TV9 Explained: 'ডিজিটাল রুপি' কী? কতটা বদলে যাবে আর্থিক লেনদেনের অভ্যাস?
ডিজিটাল রুপি পাইলট প্রকল্প চালু করল আরবিআই
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 30, 2022 | 11:28 AM

নয়া দিল্লি:১ নভেম্বর ভারতের প্রথম ডিজিটাল রুপি পাইলট প্রকল্প চালু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ঠিক তার এক মাস পরেই, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রিটেইল ডিজিটাল মুদ্রার প্রথম পাইলট প্রকল্পটি চালু হবে। মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর এই ঘোষণা করে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, এই পাইলট প্রকল্পটি নির্বাচিত কয়েকটি স্থানে এবং গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এতে পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করবে আটটি ব্যাঙ্ক। প্রথম ধাপে চারটি ব্যাঙ্ক অংশ নেবে। এই ব্যাঙ্কগুলি হল, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক। এছাড়া, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক পরবর্তীকালে এই পাইলট প্রকল্পে যোগ দেবে। তবে সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, কী এই ডিজিটাল রুপি? এর সুবিধাই বা কী কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে কোথায় আলাদা এই ডিজিটাল রুপি? আসুন জেনে নেওয়া যাক –

ডিজিটাল রুপি কি?

ডিজিটাল রুপি বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) হল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জারি করা মুদ্রা নোটগুলির ডিজিটাল রূপ। এই ডিজিটাল মুদ্রা যোগাযোগহীন লেনদেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করার সময়ই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছিলেন, শীঘ্রই আরবিআই তার ডিজিটাল মুদ্রা চালু করবে। ব্লক চেন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলবে আরবিআইয়ের ডিজিটাল রুপি। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হতে হয়েছে সেই ডিজিটাল মুদ্রা, ই-রুপি।

সিবিডিসির দুই প্রকার

১) খুচরো (সিবিডিসি-রিটেইল): খুচরা সিবিডিসি সকলেই ব্যবহার করতে পারবেন।

২) পাইকারি (সিবিডিসি-হোলসেল) এই ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা নকশা করা হয়েছে নির্বাচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবহারের জন্য।

ডিজিটাল রুপি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্য

ক্রিপ্টোকারেন্সি হল ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে নকশা করা একটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল সম্পদ। বিকেন্দ্রীকৃত, অর্থাৎ কোনও ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই চলে এর কর্মকাণ্ড। তাই, এই ডিজিটাল সম্পদ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, আরবিআই-এর জারি করা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি বা সিবিডিসি, ডিজিটাল মুদ্রা হলেও, এর আইনি বৈধতা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। সরকার সমর্থিত বলেই, এটি বিটকয়েন, ইথেরিয়াম বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে আলাদা। দ্বিতীয়ত, সরকারি সমর্থনের কারণে প্রকৃত টাকার সমতুল্য হবে ডিজিটাল মুদ্রা।

ডিজিটাল রুপি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি থেকে কতটা আলাদা?

প্রথমত ডিজিটাল রুপি এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির মধ্যে এক মৌলিক ফারাক রয়েছে। তা হল – ডিজিটাল রুপি হল সেন্ট্রালাইজড এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির ক্ষেত্রে কোনও সেন্ট্রালাইজড মডেল নেই। অর্থাৎ, এর উপর কোনও একক প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। আরবিআই ডিজিটাল রুপি ইস্যু করছে। তবে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এমন কোনও ইস্যু করার প্রতিষ্ঠান নেই।

আরও একটি বড় পার্থক্য হল যে ডিজিটাল রুপি অর্থের ট্রেইল তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, একটি লেনদেনের ক্ষেত্রে তার যাবতীয় তথ্য খুঁজে বের করতে পারে এই ডিজিটাল রুপি। কে অর্থ পাঠাচ্ছেন, কার কাছে পাঠাচ্ছেন – এই তথ্য হাতে আসার ফলে ডিজিটাল রুপির জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির ক্ষেত্রে কেবব এনক্রিপ্ট করা নম্বর এবং অক্ষরের দীর্ঘ স্ট্রিং পাওয়া যায়। আর এই পার্থক্যটাই ক্রিপ্টোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল রুপিকে আলাদা করে তোলে।

ডিজিটাল রুপির সুবিধা-

ডিজিটাল রুপির ব্যবহারে প্রথমত লেনদেনের খরচ অনেকটা কমবে।

অনুমোদিত পরিসরে ঘটা সমস্ত লেনদেনের উপর নজর রাখা সরকারের পক্ষে সহজ হবে। সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে বেআইনি লেনদেন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই বিদেশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের উপরও সরকারের আরও ভাল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাজেট বা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আরও ভালভাবে করা যাবে।

ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার, ডিজিটাল মুদ্রার ক্ষেত্রে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকার প্রয়োজন নেই।

ডিজিটাল মুদ্রার কোনও মেয়াদ থাকে না। আজীবন ব্যবহার করা যায় এই ডিজিটাল মুদ্রা। পাশাপাশি ডিজিটাল মুদ্রা কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্টও হবে না। বিটকয়েনের মতো মুদ্রায় যে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে, তা ই-রুপির ক্ষেত্রে থাকে না।

ডিজিটাল মুদ্রার ছিঁড়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়ার মতো ক্ষতি হবে না। কাগজের নোটের আয়ু সীমাবদ্ধ হলেও, ডিজিটাল মুদ্রার আয়ু হবে অনির্দিষ্টকালের।

ই-রুপির ব্যবহারে সরকারের টাকাও সাশ্রয় হবে অনেকটা। কারণ কাগজের নোটের ক্ষেত্রে ছাপানো, বন্টন ও জমা রাখার জন্য খরচ থাকবে না। কাগজের উপর নির্ভরশীলতা কমায় পরিবেশও রক্ষা হবে।

কোন কোন ব্যাঙ্কে পাওয়া যাবে ই-রুপি?

এক বিজ্ঞপ্তিতে আরবিআই জানিয়েছে ডিজিটাল রুপির পাইলট প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য তারা ৯টি ব্যাঙ্ককে চিহ্নিত করেছে – স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং এইচএসবিসি।