Decreasing Savings Rate: EMI-নির্ভর জীবনে সঞ্চয় কমছে দেশবাসীর, এটা ভাল নাকি খারাপ ইঙ্গিত?

Loan Rate: সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়েছে। এদিকে বাড়ছে ধারের পরিমাণ। আর এতেই বিপদ সঙ্কেত দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, এটা যে ভাল নয়, তা তো সকলেরই জানা। তাহলে কেন এই ভুল করছেন দেশবাসী?    

Decreasing Savings Rate:  EMI-নির্ভর জীবনে সঞ্চয় কমছে দেশবাসীর, এটা ভাল নাকি খারাপ ইঙ্গিত?
প্রতীকী চিত্রImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 01, 2023 | 11:43 AM

কলকাতা: ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সঞ্চয় প্রয়োজন। এদিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্রমশ সঞ্চয় কমছে দেশবাসীর। বিগত পাঁচ দশকে দেশবাসীর সঞ্চয় সবথেকে কমে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়েছে। এদিকে বাড়ছে ধারের পরিমাণ। আর এতেই বিপদ সঙ্কেত দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, এটা যে ভাল নয়, তা তো সকলেরই জানা। তাহলে কেন এই ভুল করছেন দেশবাসী?

সম্প্রতিই দেখা গিয়েছে,  সংসারে হরেক খরচের পর মধ্যবিত্তের হাতে যে টাকা পড়ে থাকে, তার পরিমাণ কমছে। যারা সরকারি চাকরি করেন, তাদের কাছে  না হয় ভরসা হিসাবে পেনশন রয়েছে। কিন্তু যারা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, তাদের মূল ভরসা এই সঞ্চয়ই। সন্তানের উচ্চশিক্ষা থেকে চিকিত্‍সা ও অবসর জীবন যাপনের খরচ- সব কিছুর জন্য সঞ্চয়ই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের পরিমাণই কমতে কমতে তলানিতে ঠেকছে।

অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ বলছেন, এই লক্ষ্মণ মোটেই ভাল নয়। তাদের মতে, সঞ্চয় হ্রাসের অন্যতম কারণ হল সুদের হার কম হওয়া। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে সরকার গতবছর মে থেকে ধাপে ধাপে রেপো রেট বাড়ালেও তার প্রভাব সরাসরি পড়েছে সঞ্চয় এবং ঋণের সুদে। আগে সুদের হার অনেকটা কম ছিল। গত দু’টি অর্থবর্ষে যেভাবে সুদের হার সার্বিকভাবে কমেছে, তাতে কম সুদে গৃহঋণ নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। যে টাকা তাঁরা সঞ্চয় করতেন, তা দিয়েই মিটিয়েছেন কিস্তি।

এর অর্থ হল, বর্তমান সময়ে সঞ্চয় প্রকল্পে কম টাকা জমলেও তা ঘুরপথে সাধারণ মানুষের সম্পদ সৃষ্টিতেই কাজে লাগছে। সেটা ভবিষ্যতেরই সঞ্চয়। স্টেট ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ যদি এক টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনেন, তা ১৪ বছর পরে তাঁর কাছে ২ টাকা ১২ পয়সার সম্পদ হয়ে ফিরছে। মানে আজ যদি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কেনা হয়, তা ১৪ বছর পর ৬৪ লক্ষ টাকায় পৌঁছতে পারে। ওই ৩০ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য ১৪ বছরে সুদ দিতে হবে কমবেশি ২২ লক্ষ টাকা। অর্থাত্‍ সেক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষই লাভবান হচ্ছেন। গোটা দুনিয়ায় ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনাকে খারাপ বিনিয়োগ বলে ধরা হলেও, ভারতে  ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনা-কে গুড ইনভেস্টমেন্ট বলা হয়।

তবে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অনন্ত ভি নাগরাজন কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁর মতে, বাজারে কেনাকাটা বাড়ছে, আর্থিক বাজারে গতি রয়েছে অথচ সঞ্চয় কমছে, এটা দারুণ খবর। কারণ, সাধারণ মানুষ প্রথাগত সঞ্চয়ের পরিবর্তে বর্তমানে বাজারে টাকা খাটাচ্ছেন। মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন তারা। সাধারণ মানুষ এসআইপি ও শেয়ারে লগ্নি করছেন। তাই ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য প্রথাগত পথে কম টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়িতে যে নগদ টাকা রাখেন বা ব্যাঙ্কে সেভিংস ও এফডি-তে যে টাকা রাখেন বা সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পে যে লগ্নি করেন, তাকে হাউসহোল্ড সেভিংস বলে ধরা হয়। এরমধ্যে শেয়ার, এসআইপি, ঋণ বা ডেবট ফান্ডে লগ্নিকে ধরা হয় না।

সঞ্চয়ের পাশাপাশি ভারতবাসীর গড় ঋণও বাড়ছে বলে জানিয়েছে আরবিআই। রিপোর্ট বলছে, ঋণের বোঝা জিডিপির ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সাধারণ মানুষের মোট সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৫.১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সাধারণ মানুষের মোট সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৭.২ শতাংশ। ১৯৭৬-৭৭ সালের পর আমজনতার সঞ্চয়ের হার কখনও এত কমেনি। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ সালে মানুষের মোট দেনা জিডিপির সাপেক্ষে ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে মানুষের মোট দেনা জিডিপির সাপেক্ষে ৬.৭ শতাংশ বেড়েছিল। তারপর গত দেড় আর কখনও মানুষের দেনার হার এত বেশি হারে বাড়েনি।

গরিব মানুষের সঞ্চয় কম হয়। বড়লোক সঞ্চয় করে বেশি। আয় না বেড়ে যদি ধার বেড়ে যায় তাহলেও বিপদ। ফলে একইসঙ্গে সঞ্চয় কমা এবং ধার বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়। সহজ যুক্তিতে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অনেকের মতে করোনার পর মানুষের আয় কমেছে। তাই সঞ্চয় কমেছে। কিন্তু উল্টো দিকে জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই মানুষকে বাঁচার জন্য ধার করতে হচ্ছে। তবে এর উল্টো যুক্তিও আছে, যা সরকার বলছে। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশও মতে, মানুষ ধার করে গাড়ি-বাড়ি ও নানা ভোগ্যপণ্য কিনছেন।  ইএমআই নির্ভর জীবন হয়ে যাওয়ায় ধারের পরিমাণ বাড়ছে। টাকা না জমিয়ে ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনাকে মানুষ ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে দেখছেন। আর ব্যাঙ্ক ঋণ বেড়ে চলার মানে সেই ঋণ শোধও হচ্ছে। কারণ আগের ঋণ শোধ না হলে তো ব্যাঙ্কগুলি আর নতুন করে ঋণ দিত না।