Income Tax Abolishment Explained: আয়কর তুলে দিলে দেশের কী লাভ হতে পারে? ক্ষতিই বা কতটা…
Income Tax: অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন, নিজের খেটে রোজগার করা টাকার থেকে আয়কর আবার কেন দিতে যাবেন সরকারকে! তাহলে জেনে নিন আয়কর ব্যবস্থা উঠে গেলে কী হতে পারে।
নয়া দিল্লি : মঙ্গলবার গোটা দেশের নজর থাকবে রাজধানীতে। সংসদ ভবনে। কী কী থাকবে নির্মলার ঝুলিতে তার দিকে নজর থাকবে সবার। কতটা নির্মল হবে নির্মলার বাজেট? তাই নিয়েই এখন আশায় বুক বাঁধছে আমজনতা। প্রত্যেক বছর বাজেটে চাকরিজীবীদের সবথেকে বড় আশার জায়গা থাকে আয়করের স্লাব (Income Tax Slab) নিয়ে। আয়করের স্লাবে কোনও বদল হচ্ছে কি না, সেই সব দিকে তো নজর অবশ্যই থাকবে মঙ্গলবার। কিন্তু অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন, নিজের খেটে রোজগার করা টাকার থেকে আয়কর (Income Tax) আবার কেন দিতে যাবেন সরকারকে! তাহলে জেনে নিন আয়কর ব্যবস্থা উঠে গেলে কী হতে পারে।
প্রথম কথা হল – সরকারের কোনও নিজস্ব অর্থ সেই হিসেবে থাকে না। বা যে দল ক্ষমতায় থাকে, তা সে যত ধনী দলই হোক না কেন – সেই দলের টাকায় সরকার চলে না। সরকার গঠন করে আমজনতা (নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে), আর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পও চলে আমজনতার টাকাতেই। নির্মাণ ক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প – এই সবই চলে আমজনতার টাকাতেই। আর সেই কারণেই, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কর দরকার হয়। প্রাথমিকভাবে সরকার থেকে খরচ করে কোনও প্রকল্প চালু হলে, পরে তা বিভিন্ন করের মাধ্যমে আমজনতার থেকেই আবার সরকারের কাছে ফিরে যায়। কর ছাড়া এই সব কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে ঋণও নিয়ে থাকে সরকার। আর এই বিভিন্ন করগুলির মধ্যে সরকারের আয়ের একটি অন্যতম বড় উৎস হয় আয়কর।
দেশের মাত্র ১ শতাংশ নাগরিকই আয়কর দেন
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে সরকারের বিভিন্ন কর থেকে যত টাকা আয় হয়েছিল, তার মধ্যে ২৮ শতাংশ উঠেছিল শুধুমাত্র নাগরিকদের আয়কর থেকেই। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, মাত্র এক শতাংশ ভারতীয়ই নিজেদের আয়কর দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, দেশের মাত্র এক শতাংশ নাগরিকই সরকারের কর থেকে মোট আয়ের এক চতুর্থাংশ দিচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশিষ্ট রাজনীতিক সুব্রমনিয়ান স্বামী বিজনেস টুডেকে জানিয়েছিলেন, এই আয়কর ব্যবস্থাটাকেই তুলে দেওয়া উচিত। তাঁর মতে, ভারতের ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ হতে গেলে আর্থিক উন্নতির গতি থাকতে হবে ১৪.৮ শতাংশ। আর এটা সম্ভব হবে একমাত্র আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উঠে গেলে।
গত আর্থিক বছরে আয়কর জমা পড়েছে ৪.৭১ লাখ কোটি টাকা
ভারতীয় কর ব্যবস্থায় মূলত দুটি ভাগ রয়েছে। ‘ডিরেক্ট’ কর এবং ‘ইনডিরেক্ট’ কর। ডিরেক্ট অর্থাৎ সরাসরি যে করগুলি দেওয়া হয় – যেমন আয়কর, কর্পোরেশন কর, সম্পত্তি কর ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করদাতা সরাসরি সরকারকে কর দিচ্ছে। এখানে কোনও তৃতীয় কিছু থাকে না। অন্যদিকে জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা কর, কাস্টমস কর, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি হল ইনডিরেক্ট বা পরোক্ষ কর। সম্প্রতি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে কেবল কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত করের থেকে আয় করেছিল বিশাল অঙ্কের টাকা। একদিকে কর্পোরেট করের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থাগুলি সরকারি কোষাগারে ৪.৫৭ লাখ কোটি টাকা জমা করেছিল। অন্যদিকে আয়কর বা ব্যক্তিগত কর থেকে সরকারের কাছে জমা পড়েছিল ৪.৭১ লাখ কোটি টাকা। এমনকী ২০২০ সালে প্যানডেমিক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রত্যক্ষ করের গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
দেখতে গেলে সংস্থাগুলি নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে আয় করে। সংস্থার কর্মীদের যৌথ উদ্যোগের ফলে সংস্থাগুলিতে যে লাভ হয়, সেই লভ্যাংশের একটি অংশ সরকারকে কর হিসেবে দেয় সংস্থাগুলি। আপাতভাবে এটিই হয় উচিত বলে মনে হয়। কিন্তু অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকই বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, কারও ব্যক্তিগত আয়ের উপর কর চাপানো এক কঠোর সিদ্ধান্ত। আর তা যদি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক-দুই শতাংশ হয়, তাহলে তা আরও নির্মম বলে মনে হতে পারে। অর্থাৎ, এই এক-দুই শতাংশ নাগরিকই নিজেদের পকেট থেকে সরকারকে ৪.৭১ কোটি টাকা দিয়েছে। আমাদের দেশে আয়করে স্লাব ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। একজন করদাতাকে তাঁর আয় অনুযায়ী, তার উপর ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর দিতে হয়।
আয়কর বন্ধ হলে বাড়তে পারে জিডিপি
ভারতে করদাতাদের সংখ্যা এত কম কেন? কারণ, মূলত দুটি। প্রথমত একটি অংশ, যাঁদের কাছে অনেক অর্থ রয়েছে, তাঁদের আইন ও বিধির ফাঁকফোকড় খুঁজে নিয়ে, নিজেদের আয় লুকিয়ে দেন। ফলে তাঁদের আয়কর জমা পড়ে না। আর দ্বিতীয়ত, একটি বড় অংশের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সরকার নির্ধারিত আয়কর রিটার্নের সীমা থেকে কম অর্থ আয় করেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই আয়কর দেওয়ার চাপ সবথেকে বেশি পড়ে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে। আর এদের মাধ্যমেই দেশের উন্নতির গতি নির্ধারিত হয়। যদি এদের আয়কে করের আওতা থেকে বাদ দেওয়া যায়, তাহলে তাঁরা এই অতিরিক্ত টাকা বাজারে খাটাতে পারবেন বা বিনিয়োগ করতে পারবেন। যাতে দেশীয় অর্থনীতি আরও বেশি সচল হয়ে উঠবে এবং সবথেকে বড় কথা – জিডিপি বাড়বে।
আয়কর বন্ধ হলে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা
যে কোনও দেশের অর্থনীতি চলে সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের উপর ভর করে। মানুষের কাছে ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে, তার প্রভাবও দেখা যাবে অর্থনীতিতে। ফলে সাপ্লাই এবং উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লে, তা আবার আয় বাড়াবে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে গতি আসবে। আবার আয়কর ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হলে, মানুষের আর তাতে ফাঁকি দেওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না। ফলে মানুষ আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। ফলে সোনা এবং রিয়েল এস্টেট ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বাড়বে। উল্লেখ্য, কর ফাঁকি দেওয়া টাকার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি তা লুকানো হয় – সোনা এবং রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে। NCAER -এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ২৮ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু করে ৩৬ লাখ ৫৭ হাজার কোটির কালো টাকা থাকার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে, যা ভারতের জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের ধারণা, এই বিশাল অঙ্কের কালো টাকার অনেকটাই লুকানো হয় এই উচ্চ কর স্লাবের কারণে। এ ক্ষেত্রে আয়কর যদি তুলে দেওয়া হয়, তাহলে এই বিশাল অঙ্কের কালো টাকা বাজারে ঘুরতে শুরু করবে।
এর পাশাপাশি আরও একটি সুবিধা রয়েছে। আমাদের আয় করা টাকা গচ্ছিত রাখার একটি মূল আধার হল ব্যাঙ্ক। আমাদের গচ্ছিত টাকা থেকেই ব্যাঙ্ক আবার বাজারে ঋণ দেয়। আয়কর তুলে দিলে, সেই অতিরিক্ত টাকা মানুষ যদি ব্যাঙ্কে জমা রাখেন, তাহলেও তার সরাসরি প্রভাব দেখা যাবে অর্থনীতিতে।
আয়কর বন্ধ করার হিসেব এতটাও সহজ নয়
কিন্তু, দেশের পিছিয়ে পড়া নাগরিকরা, যাঁরা আর্থিকভাবে তুলনামূলকভাবে পিছনের সারিতে – তাঁদের দেখভালের দায়িত্বও সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারের থেকে অনেক জনহিতকর প্রকল্প করা হয়, তাঁদের কথা মাথায় রেখে। যেমন, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও ভাতা। গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে শুরু করে ট্রেনের টিকিট, বিদ্যুতের মাশুল থেকে শুরু করে বিনামূল্যে রেশন – এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে। আর এই প্রকল্পগুলির উপর ভরসা করেই দেশের একটি বড় অংশের মানুষ আজও নিজেদের দু’বেলা খেতে পান। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক রিপোর্ট বলছে, ভারতে এখনও ২২ কোটিরও বেশি মানুষের দৈনিক আয় ৩২ টাকা। আর এখানেই এই প্রকল্পগুলির গুরত্ব। এখন যদি আয়কর বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়বে এই প্রকল্পগুলির উপর।
বিশ্বের যে দেশগুলিতে আয়কর বন্ধ বা নামমাত্র আয়কর রাখা হয়েছে
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রেক্ষিতে দেখলে, আয়করের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত অনেক দেশই নিয়েছে। অনেক দেশেই আয়কর পুরোপুরি উঠিয়ে দিয়েছে বা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে একটু ভাল করে নজর দিলেই বোঝা যায়, সেই সব দেশগুলিতে হয় আয়কর ছাড়া অন্যান্য করগুলি অনেকটা বেশি। বা ওই দেশগুলির আয়ের অন্য কোনও উৎস রয়েছে। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বা কুয়েত – পেট্রোলিয়াম রফতানি করেই সরকার চালানোর টাকা তুলে নেয়। আবার সিঙ্গাপুরের মতো দেশে, সেখানে উন্নয়ন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে সেখানে সরকারকে কোনও ভাতা চালু রাখার দরকার পড়ছে না। সেই কারণে, ওখানে আয়কর অনেকটা কম থাকলেও সমস্যা হয় না। আবার অন্যদিকে বাহামাস বা বেলিজ়ের মতো ছোট দেশগুলি পর্যটন দ্বারা সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এই দুই দেশের জনসংখ্যাও অনেকটা কম। আবার আমেরিকায় আয়কর কম, তবে সেখানে সামাজিক সুরক্ষা কর এবং অন্য়ান্য সুবিধার জন্য কর নেওয়া হয়ে থাকে, যা অনেকটাই বেশি।
আরও পড়ুন : Budget 2022: ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতির লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রয়োজন পরিবর্তমমূলক বাজেট – মোহনদাস পাই