Mutual Fund Profits: সব মিউচুয়াল ফান্ড একই লাভ দেয় না, কীভাবে মিউচুয়াল ফান্ড কাজ করে রইল তারই হদিশ

মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund Profits) বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী মাধ্যম। বিনিয়োগের জন্য আদর্শ মাধ্যমও বটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যেক পরিবারের ন্যূনতম একজনের উচিত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা

Mutual Fund Profits: সব মিউচুয়াল ফান্ড একই লাভ দেয় না, কীভাবে মিউচুয়াল ফান্ড কাজ করে রইল তারই হদিশ
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের নিয়মকানুন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 17, 2021 | 2:10 PM

কলকাতা: টালিগঞ্জের বাসিন্দা শ্রেয়া ভট্টাচার্য সম্প্রতি একটি সফটওয়্যার সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন। প্রায় দশ মাস চাকরি করার পর শ্রেয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিছু বিনিয়োগ করা জরুরি। সেই সময়ই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন। এসআইপি-র মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে যে বিনিয়োগ করা যায় সেই কথা ওই বন্ধুর কাছ থেকেই জানতে পারেন শ্রেয়া। শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিশেষ কিছুই জানেন না শ্রেয়া, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Fund) বিনিয়োগ করলে যে বেশি লাভ মিলছে, তা বুঝেই সেখানে লগ্নি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যতটা সহজ শুনতে লাগে ততটা সহজ বিষয় নয়। এটা একটা বড় গোলমেলে বিষয়। সব মিউচুয়াল ফান্ড কেন একই লাভ দেয় না? এই প্রশ্নই শ্রেয়ার মাথায় প্রথম আসে।

প্রত্যেকেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে একই পদ্ধতিতে। একই বাজারে বিভিন্ন সংস্থায় লগ্নি করেন সকলে। কিন্তু তারপরেও লার্জ ও মিড ক্যাপ ফান্ডে দুই কিংবা তিন বছর সময়ে লাভের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। মূলত, লার্জ ক্যাপ হল বড় সংস্থার শেয়ার, মিড ক্যাপ হল মাঝারি সংস্থার শেয়ার ও স্মল ক্যাপ হল ছোট বা ক্ষুদ্র সংস্থার শেয়ার। এক-দুই ও তিন বছরের ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৪.২২ শতাংশ, ২১.৬২ শতাংশ এবং ১৭.৬২ শতাংশ।

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী মাধ্যম। বিনিয়োগের জন্য আদর্শ মাধ্যমও বটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যেক পরিবারের ন্যূনতম একজনের উচিত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা। কারণ, অনলাইনে খাবার অর্ডার করার চেয়েও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেক সহজ। মিউচুয়াল ফান্ড কিংবা অন্য যে কোনও বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় কিংবা লাভ বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এগুলি হল- কোন ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে, কতদিন ধরে লগ্নি করা হয়েছে, শেয়ার বাজারের ওঠাপড়া এবং সর্বোপরি ফান্ড ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কতটা।

ফিসডমের কর্ণধার আনন্দ ডালমিয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিটি ফান্ড ম্যানেজার তাঁর নিজের কৌশল অনুযায়ী বিনিয়োগ করেন। সেই কারণেই একই ধরনের ফান্ডে লগ্নি করা সত্ত্বেও লাভের অঙ্ক আলাদা হয়। একই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলেও কেন লাভের বা আয়ের অঙ্ক ভিন্ন হয়। বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে তিনটি কারণকে মূলত চিহ্নিত করেছেন।

প্রথম কারণ

ফান্ড ম্যানেজারও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভুল করে থাকেন। তাঁর সিদ্ধান্ত বেশ কিছু জটিল অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যদি তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক না হয় তা হলে তার প্রভাব বিনিয়োগের উপরও পড়বে। ফলে লাভের অঙ্কের হেরফের হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় কারণ

ফান্ড ম্যানেজাররা ঝুঁকির সঙ্গে লাভের অঙ্কের একটা ভারসাম্য বজায় রাখেন। কারণ, সব ফান্ডের লাভের অঙ্কও এক নয়। ফান্ডভেদে লাভের অঙ্ক বদলে যায়। মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই কারণেই বেশ কিছু মিউচুয়াল ফান্ডে লাভের হার বেশ চড়া, আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে তা বেশ খানিকটা কম। মূলত লাভের অঙ্কের উপর দাঁড়িয়েই মিউচুয়াল ফান্ডের এই চরিত্র নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই একই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লাভের অঙ্ক ভিন্ন হয়।

তৃতীয় কারণ

মিউচুয়াল ফান্ডে আয়ের পরিমাণ কম হতে পারে যদি ফান্ড ম্যানেজার অনেক বেশি পরিমাণ টাকা ফান্ড চালাতে খরচ করেন। অথবা যখন আপনি মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করছেন, তখন যদি বেশি পরিমাণ টাকা সেখান থেকে কাটা হয়। একেই এক্সিট লোড বলে। তবে সাধারণত, একজন ফান্ড ম্যানেজার চেষ্টা করেন বিনিয়োগ থেকে লাভের পরিমাণ সর্বোচ্চ রাখতে। কিন্তু পাশাপাশি, তিনি ঝুঁকির পরিমাণও কম রাখতে সচেষ্ট থাকেন। কেউই বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখিন হতে চান না। তবে যে কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সময় অনেক সমস্যা তৈরি হয়। হয়তো আপনারা ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলেটন-এর ধসে যাওয়ার খারাপ খবর শুনে থাকবেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে, এই ফান্ডের ট্রাস্টিরা ছটি স্কিম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরেই সংস্থাটি সঙ্কটের মুখে পড়ে, কারণ, তাদের টাকার যোগানে ঘাটতি দেখা দেয়। বিনিয়োগ করা টাকা তোলার হুজুগ দেখা দেয় গ্রাহকদের মধ্যে। যার কারণে এই ফান্ড পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ফলে সংস্থা ওই ছটি স্কিম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এখনও বহু বিনিয়োগকারী এখানে জমা টাকা ফেরতের আশায় দিন গুনছেন।

যে ছটি স্কিম বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেগুলি হল- ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া লো ডিওরেশন ফান্ড, ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া ডায়নামিক অ্যাকুরাল ফান্ড, ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া ক্রেডিট রিস্ক ফান্ড, ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া শর্ট টার্ম ইনকাম প্লান, ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া আল্ট্রা শর্ট বন্ড ফান্ড এবং ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া ইনকাম অপরচুনিটিজ ফান্ড। আমরা শ্রেয়ার বিনিয়োগের কথা থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্কলিনের গল্পে চলে এলাম, এতে আমরা যা বুঝলাম তা হল, সব মিউচুয়াল ফান্ড একই চরিত্রের নয়। ফলে তাদের লাভের পরিমাণও ভিন্ন। তাহলে শেষ পর্যন্ত শ্রেয়া কীভাবে সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড বাছাই করলেন,

Money9 পরামর্শ

প্রত্যেকের উচিত, নিজের লক্ষ্য ও কৌশল অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড বাছাই করা। কত দিন ধরে কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, তার উপর নির্ভর করে ফান্ড বাছাই করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ডেট ফান্ডে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে, কিন্তু ইকুইটি কিংবা ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগের মেয়াদ তত দীর্ঘ নাও হতে পারে। পাশাপাশি, যে ফান্ডে বিনিয়োগ করা হবে তার সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। এই ধরনের ফান্ড গত কয়েক বছরে কেমন ফল করেছে, সেটাও জানতে হবে। আপনি যদি ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ফর্মুলা গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, মানি৯-এর সঙ্গে থাকুন ও বাজারের সাতকাহন-এর পরবর্তী পর্বের দিকে নজর রাখুন। কারণ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার জ্ঞানই হল সফলতার চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন- পিঁপড়ের মতো ভাবুন, তাহলে এভাবে শেষ হয়ে যাবে না আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়