পিঁপড়ের মতো ভাবুন, তাহলে এভাবে শেষ হয়ে যাবে না আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়

ভারতের মতো বিরাট দেশে সবসময়ই কোনও না কোনও জায়গায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি, খরা, ভূমিধস এবং শিলাবৃষ্টির মতো দুর্যোগের সম্ভাবনা থাকে

পিঁপড়ের মতো ভাবুন, তাহলে এভাবে শেষ হয়ে যাবে না আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়
ছবি- টিভি নাইন বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 16, 2021 | 7:07 PM

কলকাতা: আমাদের রাজ্যে আমফান যে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা চালাবে, তা আগে থেকে কে জানত। কেই বা জানত নৈনিতালের হড়পা বানের কথা। সেই বানের ফলে যে কত বাড়ি ভেঙেছে, তার ইয়ত্তা নেই। আমরা জীবন বিমা, গাড়ির বিমা এমনকি মোবাইলের বিমার কথা শুনেছি, কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে সারাজীবনের সঞ্চয়কে পুঁজি করে যে বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা দোকান আমরা তৈরি করি তা যদি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়, তাহলে তার কী হবে?

এটা সত্যি যে আমরা কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে, আমরা যদি পিঁপড়ের মতো ভাবি, অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে যেমন পিঁপড়ে নিজের ঘর গোছাতে থাকে, আমাদেরও আগেভাগেই বিপর্যয়ের ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এটা একমাত্র সম্ভব, বাড়ি কিংবা দোকানের বিমা করিয়ে। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিমা। যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে একটা বর্মের মত কাজ করে থাকে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল, সারা দেশের মোট জনগণের এক শতাংশেরও এই গৃহবিমা নেই।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। যা বিশ্বের জলবায়ুর পক্ষে খুব একটা ইতিবাচক নয়। কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএসএসও-এর ৭৭ তম রাউন্ডের রিপোর্ট অনুসারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গৃহবিমা না থাকার ফলে, ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের সম্পত্তির বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। এবং তা পূরণ করার কোনও পন্থাও তাঁদের কাছে থাকে না।

ভারতের মতো বিরাট দেশে সবসময়ই কোনও না কোনও জায়গায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি, খরা, ভূমিধস এবং শিলাবৃষ্টির মতো দুর্যোগের সম্ভাবনা থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণকার্যে এগিয়ে আসে। তবে এর ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের খুব একটা কিছু অবস্থার পরিবর্তন হয় না। সেই কারণেই আমাদের দেশে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান ক্রমাগত বেড়েই চলছে।

কিন্তু আমজনতা কেন এই বিমা কিনতে গড়িমসি করে থাকেন?

বাজাজ ক্যাপিটালের পক্ষে বিনয় তালুজা বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় বাড়ির বিমা করা খুব একটা প্রচলিত নয়। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের কাছে এই বিমার বিষয়টি খুবই জটিল। সেই কারণেই মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষের কাছে এই বিমার সুবিধা নেই। যদি বিমা সংস্থাগুলি এই বিমাকে অনলাইনে নিয়ে আসে, তাহলে জীবন বিমার মতো এই বিমাও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে।” প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত বিমা সাধারণ বা জেনারেল বিমা ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত। প্রায় সমস্ত বিমা সংস্থাই ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিভিন্ন ধরনের পলিসি বিক্রি করে থাকে। নিজের পছন্দ ও সুবিধামতো এর মধ্যে থেকে যে কোনও ব্যক্তি নিজের বাড়ির জন্য উপযুক্ত বিমাটি বেছে নিতে পারেন।

এই বিমাগুলির মধ্যে এমন কিছু বিমা রয়েছে যেগুলিতে সমস্ত ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। কেউ সাধারণ বিমা এবং ব্যক্তিগত দুর্ঘটনাজনিত বিমা কিনেও নিজের বাড়ি কিংবা দোকানকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। ব্যবসায়ীরা দোকানকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের বিমা কিনতে পারেন। যা তাঁদের আগুন থেকে ক্ষতি কিংবা নয়া প্রকল্প চালু করার যে ঝুঁকি, তা থেকেও রক্ষা করবে। সাধারণত বাড়ি কিংবা দোকান বিমার ক্ষেত্রে একবারই প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে হয়, সেই প্রিমিয়ামে ১০-১২ বছর বিমার সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে বলাই যায় এই বিমার মাধ্যমে কম খরচে বড় ঝুঁকির সম্মুখিন হওয়া যায়। যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

মানি৯-এর পরামর্শ

প্রত্যেকেরই তাঁর বাড়ি কিংবা সম্পত্তির মূল্য অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণ বিমা থাকা আবশ্যিক। আজকাল বাড়ি, দোকান থেকে শুরু করে যে কোনওরকম জিনিসের জন্য বিমা পাওয়া যায়। এমনকি কৃষকদের জন্য, ক্ষেতে বীজ বোনা থেকে ফসল ঘরে না আসা পর্যন্ত বিমার সুবিধা পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তাঁর সম্পত্তির মূল্য অনুযায়ী বিমার সুবিধা নেওয়া। আপনি যদি ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনে থাকেন, তাহলে প্রথমেই সেই ঋণের মাসিক কিস্তি ও আনুসাঙ্গিক খরচের বিমা করিয়ে নিন। বিষয়টি অযথা ফেলে রাখবেন না। অন্যদিকে, সরকারের উচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় বাড়ি কিংবা দোকানের বিমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি, এই বিমার প্রেক্ষিতে আয়কর ছাড় সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, তা আমজনতার মধ্যে আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাবে।

আরও পড়ুন- ঠকছেন না তো! ১ কোটি টাকার টার্ম ইনসিওরেন্স নেওয়ার আগে এটা একবার ভেবে দেখুন