‘ক্ষমতায় আসতে পারবেন না, তাই ভোটটা তৃণমূলকে দিন’, বামপন্থীদের বার্তা মমতার

ইস্তাহার প্রকাশের সময় বামপন্থীদের (CPIM) তৃণমূলকে (TMC) ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন দলীয় সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)

'ক্ষমতায় আসতে পারবেন না, তাই ভোটটা তৃণমূলকে দিন', বামপন্থীদের বার্তা মমতার
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 18, 2021 | 2:40 AM

কলকাতা: একুশের বঙ্গ যুদ্ধে (West Bengal Assembly Electoion 2021) সরকার তৈরির চাবিকাঠি কি তবে ৭ শতাংশের হাতে? প্রথম দফার ভোটে ১০ দিন আগে এই প্রশ্নটা উঠত না। কিন্তু উঠল, কারণ ইস্তাহার প্রকাশের সময় বামপন্থীদের (CPIM) তৃণমূলকে (TMC) ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন দলীয় সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে যে শব্দবন্ধগুলি রাজনৈতিক মহলে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচার। শহরে জায়গায় জায়গায় অরাজনৈতিক ব্যানারে পোস্টার লাগিয়ে আবেদন জানানো হচ্ছে বিজেপিকে একটিও ভোট না দেওয়ার জন্য। যা মূলত বামপন্থীদের উদ্যোগেই। ইস্তাহার প্রকাশের সময় এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “যারা বামপন্থী বন্ধুরা আছেন, যারা নো ভোট টু বিজেপি বলছেন তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই। সঙ্গে যারা জানেন যে তাঁরা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না, তারা যেন নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভোট অন্য দলকে দিয়ে নষ্ট না করেন। তাঁরা যাতে তৃণমূলকে ভোটটা দেন এই আবেদন আমি বামপন্থী বন্ধুদের কাছেও করছি।” নেত্রীর আরও সংযোজন, “আমরা সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। বাংলায় কখনও ভাগাভাগি হয়নি। বাংলা তার প্রমাণ বারবার দিয়েছে। জীবনেও তা হবে না এটা আমি বিশ্বাস করি।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের ওজন রাজনৈতিকভাবে কতটা তা বোঝার জন্য চোখ রাখতে হবে বিগত কয়েক বছরের ভোট ভাগীদারির উপর। ২০১১ সালে পালাবদলের বছরে ৩৮.৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই সময় বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩০.০৮ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আরও ধস নামে বামেদের ভোটবাক্সে। এক ধাক্কায় ২০ শতাংশের ঘরে নেমে আসে আলিমুদ্দিনের প্রাপ্ত ভোটের হার। এই ১০ শতাংশের পতনের ফলে তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেস, তিন শিবিরই লাভবান হয়। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়ে হয় প্রায় ৪৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন: TMC Manifesto 2021: বছরে সাধারণ পরিবারকে ৬ হাজার, ওবিসি-তপসিলিদের ১২ হাজার টাকা ভাতা

কিন্তু, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বহু হিসেব উল্টে দেয়। দেখা যায়, একধাক্কায় ১০ শতাংশ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার। অন্যদিকে, যে বামফ্রন্টের ভোট ২০১৬ সালেও ২০ শতাংশ ভোটের ঘরে ছিল, তাদের ভোট নেমে দাঁড়ায় ৭ শতাংশে। অর্থাৎ ক্ষতি হয় দ্বিগুণের বেশি। কংগ্রেসেরও ভোটের হারেও ৭ শতাংশ পতন লক্ষ্য করা যায়। সেবার লোকসভা আসনের নিরিখে তৃণমূলের বিরাট ক্ষতি হয়েছিল বটে। কিন্তু, ভোট শতাংশের হিসেবে সামান্যই ওঠা-নামা হয়ে। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল সামনে আসার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বুঝতে বাকি ছিল না, ২ লোকসভা আসন থেকে কোন ‘মন্ত্রে’ আচমকা ১৮-তে পৌঁছে গেল বিজেপি।

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, এ বারও যদি ২০১৯ সালের মতোই একই প্রবণতা দেখা যায় তবে ২ মে রাজ্য গেরুয়া ঝড় কার্যত অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে বঙ্গে। সেই কারণেই এ বার বামপন্থীদের ভোট ঘাসফুলের দিকে টানার আবেদন জানিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বামপন্থীরা তাঁর আবেদনে সাড়া দিল কিনা সেটা বোঝার জন্য ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুন: তৃণমূলেই থেকে শিশির বললেন, ‘কে বলল আমি তৃণমূলে আছি?’