‘ভগবান জানেন দিদির পায়ে কীভাবে চোট লাগল’, রানিবাঁধে শাহের কটাক্ষ
রানিবাঁধের সভায় পৌঁছে গেলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। প্রত্যাশা মতোই নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) আগে জঙ্গলমহল এলাকায় বাঁকুড়ার (Bankura) রানিবাঁধের সভা থেকে দিয়ে গেলেন এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি।
বাঁকুড়া: প্রথমে একটা সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দেরি করে হলেও রানিবাঁধের সভায় পৌঁছে গেলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। প্রত্যাশা মতোই নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) আগে জঙ্গলমহল এলাকায় বাঁকুড়ার (Bankura) রানিবাঁধের সভা থেকে দিয়ে গেলেন এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। অমিত শাহ বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে, একটি কমিশন তৈরি করে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।” তবে এরই সঙ্গে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে চোট লাগার বিষয়ে বলেন, “ভগবান জানেন কীভাবে দিদির পায়ে চোট লাগল!”
সোমবার সকাল থেকেই শাহর সভা ঘিরে প্রস্তুতি সব সারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে শোনা যায়, যে কপ্টারে শাহর আসার কথা ছিল, তাতে যান্ত্রিক গোলোযোগ দেখা দিয়েছে। ঝাড়গ্রামে তিনি যাচ্ছেন না বলে খবর হয়। কিন্তু দেরি করে হলেও রানিবাঁধের সভায় পৌঁছে গেলেন অমিত শাহ। দেরি হওয়ার কারণেই সভার শুরুতে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। এরপরই স্বমহিমায় একের পর এক বাণে বিঁধতে থাকেন মমতা প্রশাসনকে।
প্রথমেই দিদির পায়ে আঘাত নিয়ে কটাক্ষ করেন শাহ। মমতাকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে শাহ বলেন, “দিদি আপনার পায়ে চোট পেলেন, আপনার কষ্ট হল। কিন্তু যে বিজেপি কর্মীরা প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদের কথা দিদি কী জানেন? তাঁদের মায়ের কষ্টের কথা দিদি জানেন?” উল্লেখ্য, গত বুধবার নন্দীগ্রামে গিয়ে পায়ে আঘাত পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন তিনি। সে বিষয়টি উল্লেখ করেই কটাক্ষ করেন শাহ।
আদিবাসী আবেগকে স্পর্শ করে শাহ বলেন, “আদিবাসীদের আধিকার দিতেও কাটমানি চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বিজেপি কর্মীরা মারা গিয়েছে, তাঁদের পরিবার, তাঁদের মায়েরা এ বার ভোটের বাক্সে জবাব দেবেন।”
পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের এ দিনের ভাষণের সিংহভাগই জুড়ে ছিল আদিবাসীদের প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শাহের সভাস্থল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জঙ্গলমহলের ভোটব্যাঙ্কের বিষয়টিকেই মাথায় রাখা হয়েছে। কাটমানি ইস্যুতে শাহ বললেন, “আদিবাসীদের সার্টিফিকেট নিতে ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। বিজেপি সরকার এলে আর সেটা দিতে হবে না। আপনার বাড়িতে আধিকারিক শংসাপত্র পৌঁছে দেবে। আমফানের সাহায্য দিদির গুন্ডারা খেয়ে নেয়। হাইকোর্টকে শেষে হস্তক্ষেপ করতে হয়।”
আদিবাসীদের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন শাহ। তাঁর আশ্বাস, ” প্রতিটি তহশিলে মডেল স্কুল তৈরি করবে বিজেপি সরকার। ঝাড়গ্রামে তৈরি করা হবে বিরসা মুণ্ডার স্মরণে আদিবাসী সংগ্রহশালা। বিজেপি সরকার তৈরি করলে, একটি কমিশন তৈরি করে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।” পাশাপাশি এও বলেন, জঙ্গলমহলে যাতে ফোনের যোগাযোগ ভাল হয়, তার দিকে নজর দেবে বিজেপি সরকার।
কেন্দ্রীয় খাতে পাওয়া টাকা রাজ্য সরকার আদিবাসীদের হাতে পৌঁছাতে দিচ্ছে না বলে এ দিন অভিযোগ তোলেন শাহ। অমিত শাহ বলেন, “৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটি পৌঁছতে দেন না। বিজেপি-র প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আয়ুষ্মাণ ভারত প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে লাগু করা হবে।”
আরও পড়ুন: ‘সৌভাগ্যবশত বেঁচে গিয়েছি’, হুইল চেয়ারে ঝালদার জনসভায় বসে বললেন মমতা
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জঙ্গলমহল ও রাঢ়বঙ্গে দলের জনপ্রিয়তা দেখে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছেন তিনি। সেজন্য এখন থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে বলেছেন দলীয় কর্মীদের। লোকসভা নির্বাচনেও দলের কর্মীদেল লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন শাহ। বঙ্গ গেরুয়া শিবির প্রায় ছুঁয়েও ফেলেছিল সেই টার্গেট। ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ১৪৮টি আসন। বাংলায় বিজেপি দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সরকার গড়বে আগেই চ্যালেঞ্জ করেছেন শাহ।