AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ব্রিগেড মঞ্চ থেকে তৃণমূল-বিজেপিকে জোরাল আক্রমণ বাম-কংগ্রেসের, সিদ্দিকির নিশানা অধীরকে

ব্রিগেডে বিপুল জনসমাবেশ, তৃণমূল-বিজেপিকে পরাস্ত করে জোট শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে বঙ্গবাসীর কাছে আবেদন সূর্যকান্ত-সেলিম-অধীর-আব্বাস সিদ্দিকির

ব্রিগেড মঞ্চ থেকে তৃণমূল-বিজেপিকে জোরাল আক্রমণ বাম-কংগ্রেসের, সিদ্দিকির নিশানা অধীরকে
ফাইল ছবি
| Updated on: Feb 28, 2021 | 7:29 PM
Share

কলকাতা: ২০১৯ এর পর ফের ব্রিগেডে সভা করল বামেরা। তবে এবার বামেরা একা নয়। তাদের সঙ্গে এবার কংগ্রেস ও আইএসএফ নেতৃত্ব। যাকে বলা হচ্ছে সংযুক্ত মোর্চা। একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল-বিজেপি দুই শক্তিকে পরাস্ত করে জোট শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য বঙ্গবাসীর কাছে আবেদন করলেন সূর্যকান্ত-সেলিম-অধীর-আব্বাস সিদ্দিকিরা। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পার্ক সার্কাসের ময়দানে যৌথ সভা করেছিল বাম ও কংগ্রেস। একুশের ভোটের আগে ফের ব্রিগেডে একত্রে সভা করল তারা।

তৃণমূল ও বিজেপিকে এক পংক্তিতে ফেলে আক্রমণ:

ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ দেখা যাবে। ব্রিগেডের মঞ্চেও এমনই মন্তব্য করলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর কটাক্ষ, “যদি মমতা বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করেন, তবে তাতে অবাক হবেন না। এটাই ওঁদের সংস্কার।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে ইয়েচুরি বলেন, “বিজেপি তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। নিজের নামে ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানিয়ে নিলেন। কৃষকদের জন্য আলাদা আর বড়লোকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। ওরা জানে না ‘হম’ শব্দে ‘হ’ মানে হিন্দু ‘ম’ মানে মুসলমান।”

“এত বড় সভায়” এই প্রথম বক্তব্য রেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এরপর রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দলকে এক পংক্তিতে ফেলে তাঁর মন্তব্য, তৃণমূল ও বিজেপি-কে যোগ্য জবাব দিতে হবে। অধীরের কটাক্ষ, “দিদি-মোদীর রাজনৈতিক ডিএনএ এক। কোনও তফাৎ নেই।”

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের শানিত আক্রমণ, “কেউ কেউ বলল, খেলা হবে। আর মোদিজী স্টেডিয়ামই দখল করে নিলেন।” তৃণমূলকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, বসন্ত এসে গিয়েছে। লালরঙা ফুল ফোটা কেউ আটকাতে পারবে না। ঝরা পাতার দিন শেষ। কচি পাতা উঁকি দিচ্ছে। তিনি যোগ করেন, রাজ্যে দিদির লুঠ, কেন্দ্রে মোদীর লুঠ, ওরা তোলাবাজি, কাটমানি বন্ধ করার জন্য তৃণমূলত্যাগীরা বিজেপিতে যায়নি। বলেন, “লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে একসঙ্গে লড়তে হবে, তেমনই তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলেও এক হতে হবে।”

ব্রিগেডের মধ্যমণি আব্বাস সিদ্দিকি:

রবিবার বেলা ২.১৫ মিনিট। মঞ্চে তখন বক্তব্য রাখছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আচমকাই স্লোগান উঠল, ‘আব্বাস, আব্বাস… ভাইজান…’ উত্তেজনায় তখন ফুটছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকরা। ‘ভাইজান’কে একবার স্পর্শ করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওঁরা। পরিস্থিতি এমনই যে বক্তব্য থামিয়ে দিতে বাধ্য হন অধীর চৌধুরী। ভিড় সামলে দু’পাশে নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন আব্বাস। এই দৃশ্য রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। স্টেজে বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর, আর আব্বাসকে আলিঙ্গন করে মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছেন মহম্মদ সেলিম। এগিয়ে এসে হাত মেলাতে, আলিঙ্গন করতে দেখা যায় সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। তখনও বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এগিয়ে এসে অধীরকে বলেন, ‘আমি এ বার বক্তব্য শুরু করতে পারেন।’ বলা শুরুও করেছিলেন অধীর, তবে তা দীর্ঘায়িত করেননি। আর তারপরই বলতে ওঠেন আব্বাস। মঞ্চে উপস্থিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়েই বলে গেলেন, “আমি এখানে ভাগীদারি করতে এসেছি। তোষণ করতে আসিনি।”

ভাষণ করতে গিয়ে বারংবার বাম শিবিরকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেও, জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে আগাগোড়া ‘বাম-শরিক’ বন্ধনীর মধ্যে বেঁধে রাখতে দেখা যায় আব্বাসকে। আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলার সময়ও কংগ্রেসের নাম উহ্য রাখেন তিনি। তাঁর কথায়,‘‘যেখানেই বাম-শরিকরা প্রার্থী দেবেন, রক্ত দিয়ে তাঁদের জেতাব আমরা। বিজেপি এবং তাদের ‘বি’ টিম মমতাকে উৎখাত করব আমরা। এ বারের ভোটে মমতাকে শূন্য করে ছাড়ব।’’ অন্যদিকে অধীরকে সামনে রেখেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘ভাগীদারি চাইতে এসেছি, ভিক্ষা করতে আসিনি।’

ব্রিগেডে এদিন কার্যত স্টারের তকমা দেওয়া যায় সিদ্দিকিকে। বিভিন্ন বক্তার মুখে যতবারই আইএসএফ নেতার নাম উঠে এসেছে ততবারই ময়দান থেকে ধ্বনিত হয়েছে মানুষের উচ্ছ্বাস। এমনকি মঞ্চে উঠে যখন সিদ্দিকি বসেছেন, বারবার তাঁকে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। মঞ্চের এক প্রান্তে সূর্যকান্তের পাশে বসেছিলেন অধীর। অন্য প্রান্তে ছিলেন আব্বাস। দৃশ্যতই একে অন্যকে এড়িয়ে গিয়েছেন দু’জনই

ব্রিগেড সংস্কৃতি:

জনতাকে ব্রিগেডমুখী করতে যেমন টুম্পা সোনা প্যারোডি নিয়ে চর্চা, বিতর্ক হয়েছে, তেমনি অর্ক মুখার্জির গাওয়া গানও আছে। সেই সঙ্গে ব্রিগেডে সেই প্রত্যন্ত জেলা থেকে কাতারে কাতারে ছুটে আসা মানুষ, বাড়ি থেকে আনা খাবার ভাগ করে খাওয়া, মিছিল করে ব্রিগেডমুখী হওয়া, গান-স্লোগানের সেই পুরনো ছবি এদিনও অটুট ছিল। মঞ্চে ছিল গণসঙ্গীতের আয়োজন। সেখানে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখা গেল কোরাসে গলা মেলাতেও।

তৃণমূল ও বিজপি দুই তরফেই এবার তারকাদের যোগদানের হিড়িক চলছে। তবে রবিবাসরীয় ব্রিগেডে হাজির ছিলেন বেশ কিছু তারকা। একুশের ভোটে বামেদেরই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। বলেন, রাজ্যে সুদিন আনতে তৃণমূলকে হারান, বিজেপিকে ঠেকান। ভোট দিন, সমর্থন জানান বামেদের। পাশাপাশি, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা বাদশা মৈত্রও বাম বামফ্রন্টকে সমর্থনের বার্তা দেন ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে।

প্রতিক্রিয়া:

আব্বাস প্রসঙ্গে অধীরের বক্তব্য, কোনও সমস্যা হয়নি। সভায় যখন তিনি বক্তব্য রাখছেন সিদ্দিকির আগমনে তখন উত্তেজনায় ফুটছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকরা। তাঁদের সেই উচ্ছ্বাস ধ্বনিতে থেমে যান অধীর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, গায়ক গান গাইতে গেলে অনেক সময় শ্রোতাদের উন্মাদনায় থেমে যান। এই ব্যাপারটা খানিক তেমনই।

আব্বাস সিদ্দিকিও বলছেন, জোট নিয়ে এখনও নিজেদের দরজা খুলে রেখেছেন তাঁরা। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেন তিনি।

এদিকে বাংলার সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড নিয়ে রীতিমত খোঁচা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন ব্রিগেড ভরানো এক কথা আর রাজ্যে ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করা অন্যকথা। বামেদের কিছু নির্দিষ্ট কর্মী রয়েছেন তাঁরা এখনও পর্যন্ত দলীয় নির্দেশ মেন চলেন আর নির্দেশ পালন করতেই ব্রিগেডে আসেন। কিন্তু ভোটে জিততে গেলে মানুষের পাশে থাকা অত্যান্ত জরুরি, যেটা এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসই পারে। আব্বাস সিদ্দিকি ইস্যুতে ফিরহাদ হাকিম রীতিমত কটাক্ষ করেন সংযুক্ত মোর্চাকে। তিনি বলেন, এরাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএম একে অপরের হাত দরে হাঁটার চেষ্টা করছিল। কিন্তু মাঝখান থেকে আব্বাস সিদ্দিকে একটা ক্র্যাচ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। তিনি যোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই মমতা ব্যানার্জিই হবেন।

ধর্মের রাজনীতি নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে বিঁধেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। রবিবার ব্রিগেড ও আব্বাস সিদ্দিকিকে সমর্থন নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে তুলোধোনা করে বিজেপি নেতা বলেন, দু’দলই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। শমীকের আক্রমণ, এই মঞ্চ থেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ শুনলাম। কিন্তু একবারও বন্দেমাতরম শুনলাম না।

আরও পড়ুন: বৈশাখীর পোস্টারে ‘টুম্পা’ লিখে কুরুচিকর মন্তব্য, তির রত্নার দিকে

ব্রিগেড সমাবেশের আগের রাতেও আসন নিয়ে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে একদফা আলোচনা হয়েছে আইএসএফ-এর। তবে তাতেও রফাসূত্র মেলেনি। এর মধ্যে ব্রিডেড জনসমাগমের মধ্যে ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেও সিদ্দিকির আইএসএফ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট সমঝোতারপ জট যে কাটেনি তা সভাতেই ফুটে উঠেছে। জানা গিয়েছে, সোমবার ফের একদফা আলোচনা হবে ঠিক হয়েছে। সিপিএম ইতিমধ্যেই আইএসএফ-কে ৩০টি আসন দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বেঁকে বসেছে কংগ্রেস। আইএসএফ-কে যত আসন দেওয়া হবে, সেই সংখ্যক আসন তাদের পুষিয়ে দিতে হবে বলে গোঁ ধরেছে তারা। তাতেই আসন সমঝোতা আটকে রয়েছে। জট কাটিয়ে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের জট কতটা কাটে সেটাই এখন দেখার।