বেশিরভাগ মানুষের কাছে সুন্দরের যা সংজ্ঞা, তার একটু এ দিক-ও দিক হলেই ট্রোলিং শুরু হয়ে যায়: জয়ীতা

সোশ্যাল মিডিয়ায় বডি শেমিং এখন কার্যত 'ট্রেন্ড'-এ পরিণত হয়েছে।

বেশিরভাগ মানুষের কাছে সুন্দরের যা সংজ্ঞা, তার একটু এ দিক-ও দিক হলেই ট্রোলিং শুরু হয়ে যায়: জয়ীতা
সৃষ্টি (বাঁ দিকে) এবং স্রষ্টা (ডান দিকে)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 09, 2020 | 11:46 AM

সোহিনী চক্রবর্তী: একে কালো, তা-য় মোটা। এ দিকে পরেছে ছাই রঙা শাড়ি। বৌভাতে এমন কে সাজে রে!’

২৬ নভেম্বর অনির্বাণ ভট্টাচার্য-মধুরিমা গোস্বামীর বিয়ের পর নেটিজেনদের একাংশের কমেন্টস-এ এভাবেই ‘বডি শেমিং’ হয়েছে মধুরিমার। নেট দুনিয়ায় এযাবৎ যেসব ছবি বা ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, তার প্রায় প্রত্য়েকটিতেই দেখা গিয়েছে ‘বিবাহ অভিযান’ বেশ উপভোগ করেছেন এই জুটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বডি শেমিং (Body shaming) এখন কার্যত ‘ট্রেন্ড’-এ পরিণত হয়েছে।

সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে রয়েছেন এমন কেউ-কেউ, যাঁরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হিসেবে ‘বডি শেমিং’-কেই বেছে নিয়েছেন কাজের বিষয়বস্তু হিসেবে। এমনই একজন শিল্পী জয়ীতা। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে জয়ীতার ফলোয়ারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাঁর কাজের বিষয় ‘বডি শেমিং’। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে একঝলক চোখ বুলিয়ে নিলেই হদিশ পাওয়া যাবে জয়ীতার শিল্পীসত্ত্বার। বোঝা যাবে রঙ, তুলির টানে ঠিক কী বোঝাতে চান তিনি।

1

জয়িতা ‘বডি শেমিং’-কেই বেছে নিয়েছেন কাজের বিষয়বস্তু হিসেবে।

নারী না পুরুষ, কে বেশি টার্গেট?

বডি শেমিংয়ের শিকার যেমন মহিলারা হন, তেমনই এই ট্রোল যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যেও মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। আর আমার মতে বডি শেমিংয়ের শিকার নারী-পুরুষ সকলেই। এক্ষেত্রে কোনও ভেদাভেদ নেই। সমাজের বেশিরভাগ মানুষের কাছে সুন্দরের যা সংজ্ঞা, তার একটু এ দিক-ও দিক হলেই ট্রোলিং শুরু হয়ে যায়। আর যদি কোনও কাপল-এর ক্ষেত্রে পার্টনার মিসম্যাচিং হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

অনির্বাণ-মধুরিমার বিয়ের পর কি নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বডি শেমিংয়ের ব্যাপারটা চাগাড় দিয়ে উঠল?

হ্যাঁ কিছুটা তো বেড়েইছে। তার মধ্যে এখন করোনা আবহে একশ্রেণির মানুষের হাতে অনেক সময়। সেইসঙ্গে তাদের জীবনে হতাশা চরম পর্যায়ে রয়েছে। এই দুই মিলিয়েই বোধহয় হঠাৎ করে ব্যাপারটা বেড়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে, অতএব যা পারো, লিখে দাও। তবে করোনার আগেও এই জিনিস ছিল। আসলে একজন মানুষকে যারা তাঁর শারীরিক গঠন দিয়ে বিচার করে, মানুষকে সুন্দর ভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই যাদের নেই, যারা জাজমেন্টাল, তারা আমার কাছে কুৎসিত মানুষ।

2

জয়িতার কাজ 

সেলিব্রিটি বলেই কি ‘টার্গেট’ করা সহজ?

অবশ্যই। একদল লোকের ধারণাই যেন এটা যে, সেলিব্রিটি দেখলেই যা-ইচ্ছে-তাই বলা যাবে। আড়ালে থেকে, অন্য় একজনকে এতটুকুও না-জেনে তাঁকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করা যায়। ট্রোলিং আজকাল ভীষণ ক্যাজুয়াল একটা ব্যাপার। এইসব ঘটনায় আজকাল অবাক হই না। কারণ এটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। আসলে বুঝে পাই না একজন স্বাস্থ্যবতী হলে সমস্যাটা কোথায়? আর যাঁকে তুমি জান না, চেন না, তাঁর ব্যাপারে এমন কুৎসিত মন্তব্য আসে কীভাবে? তবে হ্যাঁ দিন-দিন সোশ্যাল মিডিয়ার এই খারাপ দিকটা প্রকট হয়ে যাচ্ছে।

এই ট্রোলারদের কী বলবেন?

এদের কিছু বলে বোধহয় কোনও লাভ নেই। কারণ আমার মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা এই ধরণের জঘন্য মন্তব্য করে, তারা ওই নির্দিষ্ট সময়টুকুতেই ওটা নিয়ে ভাবে। কারণ তারা জানে যাই-ই হয়ে যাক, খুব বেশি হলে লোকজন বলবে, ‘এরকম বলা উচিত নয়’, ‘ওরকম করা উচিত নয়।’ দু’দিন ঝড় উঠবে, তারপর সব ঠাণ্ডা। আর ট্রোলড হওয়া তারকা তো ট্রোলারদের খুঁজে-খুঁজে বের করবেন না। অতএব তারকাদের নিশানা করা সবচেয়ে সোজা। তবে আমি বিশ্বাস করি যেসব তারকা ট্রোলড হন, তাঁরা নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। একটাই কথা বলার যে ট্রোল, বডি শেমিং আগেও ছিল, এখনও আছে। আমাদেরকেই সতর্ক থাকতে হবে। এসব জিনিসকে এড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে।