Lata Mangeshkar Death: ‘টানা ৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রেকর্ডিং শেষ করেছিলেন লতাজি!’ স্মৃতিচারণায় ‘রঙ দে বাসন্তী’র পরিচালক
ছবির কাহিনি যেমন নয়া প্রজন্মের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছিল, তেমনি মন ছুঁয়ে গিয়েছিল কিংবদন্তী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের এই বিখ্যাত দুই গান। তবে সিনেমার আরও একটি গান আছে, যেটি এখনও মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে।
ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের জীবনাবসানের পর তাঁর নানান কীর্তিই এখন বেশি উজ্জ্বল। ১৬ বছর পরেও স্মৃতি যেন এখনও টাটকা। পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মিশ্রের রং দে বাসন্তী সিনেমা যখন মুক্তি পেয়েছিল, সেইসময় এআর রহমানের মাস্তি কি পাঠশালা, খালবালি গান দুটি সব প্রজন্মের কাছেই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ছবির কাহিনি যেমন নয়া প্রজন্মের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছিল, তেমনি মন ছুঁয়ে গিয়েছিল কিংবদন্তী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের এই বিখ্যাত দুই গান। তবে সিনেমার আরও একটি গান আছে, যেটি এখনও মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। ফিল্মে একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল, মাধবন তথা অজয় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধব তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে শ্মশানঘাটে উপস্থিত হয়েছেন। সেই শোকবিহ্বল দৃশ্যে আবহসঙ্গীতে দুই কিংবদন্তীর যুগলবন্দিতে ঘটে গিয়েছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ যে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, সেই গানটির জন্য লতা মঙ্গেশকরের নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা দেখে অবাক হয়েছেন পরিচালক থেকে স্টুডিয়োর সকলেই। ‘লুকা চুপি ‘ গানটির সুর ও কথা এখনও মন ছুঁয়ে যায়। আবেগঘন মুহূর্তে এই গান কানে এলেই দুচোখ বয়ে জল বয়ে যাওয়া কোনও অস্বাভাবিক নয়। কারণ গানটির প্রতিটি লয়ে, ছন্দে কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পীর কর্মনিষ্ঠা একাত্ম হয়েছে। তবে এই গানটি রেকর্ডিং করার সময় লতাজির কিছু বিশেষ কীর্তি নাকি এখনও ভাবিয়ে তোলে। পরিচালকের কথায়, সিনেমার একটিমাত্র গানটি রেকর্ডিং করার জন্য তিনি নাকি চারদিন ধরে রিহার্সাল করেছিলেন।
ছবির ১০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক বৈঠকে পরিচালক মেহরা গানটি নির্মাণের পিছনে একটি কাহিনি বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, লুকা চুপি গানটির জন্য লতাদিদির সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেও গানটির জন্য সবকিছু ঠিকঠাক ছিল না। পরে তিনি তাঁকে ফোন করে ছিলেন ও খুব সহজেই গানটি গাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেই সময় ফোনে বলেছিলেন, ‘হাঁ বেটা, ক্যায়সা হ্যায় গানা? ভিজওয়া তো দো মুঝে। ‘তখন আমি বলেছিলাম এই গানের ব্যাপারে শুধুমাত্র রহমান স্যারই জানেন। ‘গান বানতে বানতে বনেগা অর প্রসূন লিখতে লিখতে লিখেঙ্গে।” তবে ইতোমধ্যেই এটির শ্যুটিং শুরু করে দেওয়া হয়েছে। ‘ এমন কথা শুনে লতাজি বলেছিলেন, ‘অ্যায়সা ভি হোতা হ্যায় আজকাল! আমি বলেছিলাম, হাঁ, অ্যায়সা হোতা হ্যায়।’
মেহরার কথায়., ‘১৫ নভেম্বর গানটি রেকর্ড হওয়ার কথা ছিল। তখন লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, তিনি ৯-১০ নভেম্বরের মধ্যে চেন্নাই আসবেন, কারণ সেখানেই রহমানের স্টুডিয়োটি রয়েছে।’ পরিচালক ভেবেছিলেন, তিনি অন্য কাজ নিয়ে অনেক আগেই চেন্নাইয়ে আসছেন। কিন্তু না, এমনটা মোটেই ছিল না। কারণ তিনি প্রতিদিন স্টুডিয়োতে এসে গানের রিহার্সাল শুরু করতেন । ”আমি দেখতাম, এই গানের জন্য লতাজি প্রতিদিন এসে কীভাবে গানের মহড়া দিতেন। মোট ৪দিন ধরে তিনি রিহার্সাল দিয়েছেন। ” মেহরা আরও জানিয়েছেন, আজকাল বেশিরভাগ গায়ক আসেন আর কী কারণে ও কী হচ্ছে তা না জেনেই গানটি রেকর্ড করে ফেলেন। তাই এমন একজন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন না স্টুডিয়োর অন্যান্যরাও। ব্যতিক্রম নন পরিচালকও। গানের আগে রিহার্সালকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া এমন শিল্পীকে দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক।
এখানেই শেষ নয়, তিনি সেই সময় জানিয়েছিলেন যে রেকর্ডিংয়ের দিন, লতা মঙ্গেশকর টানা আট ঘণ্টা স্টুডিয়োর মাইকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। পুরো সময়টা তিনি দাঁড়িয়ে রেকর্ড করে গিয়েছেন। ”রেকর্ডিংয়ের আগে স্টুডিয়োতে রহমানের সঙ্গে কথা বলেন লতাজী। তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর আমরা রুমে ছিলাম। তাঁর কাছে তাঁর জন্য কিছু ফল, জলের বোতল, একটি চেয়ার রেখেছিলাম। ৮ ঘণ্টা ধরে তিনি সমানে গানটি গেয়েছিলেন। ৮ ঘণ্টা তিনি সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন।”
লতা মঙ্গেশকরের স্মৃতিতে পরিচালকের এই সুমধুর অভিজ্ঞতা নয়া প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্য সৌজন্যে- দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন: Live: করোনার কাছে হার মানলেন সুর সম্রাজ্ঞী, শোকের ছায়া দেশজুড়ে