Alia-Ranbir Wedding: আলিয়া-রণবীরের বিয়ের কভারেজ; তারকাদের নিয়ে কেন এত মাতামাতি? : বিক্রম বোহরা
Alia-Ranbir: আলিয়া ভাট ও রণবীর কাপুরের বিয়ে চাদরের মতো কভারেজ পেয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে। অন্য সব কিছুকে ঢেকে দিয়েছে। এমনকী ইউক্রেনের যুদ্ধকেও নামিয়ে রাখা হয়েছে প্রথম পাতা থেকে।
বিক্রম বোহরা
আমরা অনেকেই হতাশার জীবন কাটাই। ধূসর রঙের জীবনে আটকে থেকে, ভাগ্যের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে, না-শেষ হওয়া ট্রেডমিলে দৌড়ে চলি। এর কোনও শেষ নেই। এত বছর ধরে একই চিত্র দেখে চলেছি ক্রমাগত।
আলিয়া ভাট ও রণবীর কাপুরের বিয়ে চাদরের মতো কভারেজ পেয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে। অন্য সব কিছুকে ঢেকে দিয়েছে। এমনকী ইউক্রেনের যুদ্ধকেও নামিয়ে রাখা হয়েছে প্রথম পাতা থেকে। কোনও বিখ্যাত মানুষ যদি গতকাল প্রয়াত হতেন, তা হলেও প্রাইম টাইমে জায়গা পেতেন না হয়তো। বিয়েকেই জায়গা দিত মিডিয়া।
অনেকের জিজ্ঞাস্য, কেন সেলেবদের জীবন ও তাঁদের বিয়ে দেখার জন্য সকলে এত উদগ্রীব। কারণ তাঁরা অনেকটা পাহাড়ের মতো। তাঁরা উজ্জ্বল। অবাস্তব। আমাদের সাদা-কালো পৃথিবীতে বড়ই রঙিন। সংবাদমাধ্যমকে জিজ্ঞেস করা হলে, তাঁদের উত্তর, ‘আমরা কী করব, এটাই লোকে দেখতে চায়, এটাই পড়তে চায়’… বিরাট বড় বাজার আছে বাইরে। প্রত্যেকেই এই কল্পলোকের অংশ হতে আগ্রহী। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরনোর একটা রাস্তা বলতে পারেন। আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। কেউ মনেও রাখবে না। কিন্তু থেকে যাবেন তারকারা।
ফ্যান, ভক্ত কিংবা অনুরাগীদের একপ্রকার উন্মাদ ভাবা হয়। কোনওভাবেই এই উন্মাদনাকে শেষ করা যায় না। ফলে যেটা হয়, বিখ্যাত ক্রিকেটার, বিনোদনের জগৎ থেকে উঠে আসা তারকারা, ধনীরা… যাই করুন না কেন, সময় বিশেষে ক্ষমা পেয়ে যান। আর আমরা তাঁদের হন্যে হয়ে খুঁজে চলি। দৌঁড়ে যাই অধরা মরীচিকার দিকে।
অনেকের কাছে বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ আসে না। অনেকে হয়তো সুযোগ পেয়েও সেটা হারিয়ে ফেলেন। ফলে যারা শীর্ষে পৌঁছে যান, তাঁদের হাঁ করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় খুঁজে পান না অনেকেই। মনে হয় মানুষগুলো ঝুলে পড়েছেন। আলিয়া-রণবীরের বিয়ে নিয়ে তৈরি হওয়া আগ্রহও অনেকটা সেরকমই। মিডিয়াই বোঝাতে থাকে অনুরাগীরাও তারকাদের বিয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সন্দেহের অবকাশ নেই একটা বিষয়ে। স্পষ্ট করে বলতে পারি, আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই সেই সব বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে, যা আমাদের কাছে নেই। প্যাভলোভিয়ান ফ্যাশনে আমরা দক্ষ। জাগতিক মোহে আমরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। তাই আমরা বলি, ওই দেখো, ও মার্সিডিজ় কিনেছে। কোনও দম্পতিকে দেখলে বলে উঠি, আহা কি ভাল কাপল দেখো। দেখো ওরা আলিবাগে ফার্ম হাউজ় কিনেছে…!
নিজের অন্তরে তৈরি হওয়া শূন্যতাকে আমরা ভরাতে চাই এইভাবেই। আমাদের নিরাপত্তাহীনতা, অপূর্ণতা এসবের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ফলে তারকাদের পুজো করতে শুরু করেন তাঁরা। ভয়ানক এলাকায় ঢুকে পড়েন তাঁরা। কুৎসিত ঘোরে ঢুকে পড়েন। ১০০ ফুটের বড়-বড় পোস্টার আমাদের জীবনকে ঘিরে ধরে। আমাদের বাড়ির এমনকী, আমাদের বেডরুমের দেওয়াল, স্ক্র্যাপবুক ভরে যায় তারকাদের পোস্টারে। কোনও তারকার প্রয়াণও অসুস্থ করে তোলে আমাদের।
মানুষের এই ধরনের মস্তিষ্ককেই গিলে খেয়ে নেয় মিডিয়া। মিডিয়া বারবার আওড়াতে থাকে, ‘মানুষ চায়, তাই আমরা দিই’। নারকোটিক্সের মতো আরও-আরও দিতে থাকে মিডিয়া। এত বড় ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে ঘটে যাওয়া সামান্য বিয়ের অনুষ্ঠানের পর নতুন দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন সকলে। বিষয়টি বেলুনের মতো ফুলতে শুরু করে। ফুলুক! আপনি যে কোনও সময় পাতা উল্টে দিতে পারেন। চ্যানেল পাল্টেও দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: Ranbir Kapoor-Rishi Kapoor: একাধিক নারীসঙ্গ, ছেলেকে অবহেলা; শিশু রণবীরের কাছে ভিলেন ছিলেন বাবা ঋষিই