তারকা-ব্যক্তিত্বদের জিয়ানস্ট্যাল জুড়ে আজও বিস্তীর্ণ ব্রিগেড-ময়দান

ব্রিগেড মানে কী? শুধুই রাজনৈতিক সমাবেশ? খোঁজ নিল টিভিনাইন বাংলা। শুধু আগামিকাল ব্রিগেডে উপস্থিত থাকা তারকারাই নন, সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাঞ্চন মল্লিক এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া পায়েল সরকারও জানালেন 'ব্রিগেড' শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁদের নস্টালজিয়া...

তারকা-ব্যক্তিত্বদের জিয়ানস্ট্যাল জুড়ে আজও বিস্তীর্ণ ব্রিগেড-ময়দান
বাঁ দিক থেকে শ্রীলেখা মিত্র, কাঞ্চন মল্লিক এবং পায়েল সরকার।
Follow Us:
| Updated on: Feb 28, 2021 | 3:31 AM

যদি প্রশ্ন করা হয়, ব্রিগেড মানে কী, আভিধানিক উত্তর হবে সৈন্যদল। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক-আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষের কাছে ব্রিগেড কথার অর্থ কি শুধুই অভিধানে আটকে থাকা তর্জমা? নাকি তার মধ্যে মিশে রয়েছে রাজনীতির প্রথম পাঠ, রাস্তায় জ্যাম, স্লোগান-মিছিলে আকাশ ফাটান চিৎকার, একগুচ্ছ অঙ্গীকার আর একরাশ নস্ট্য়ালজিয়া… যৌবনের উদ্দীপনা, বার্ধক্যের অভিজ্ঞতা আর দুনিয়া পাল্টে ফেলার আহ্বান?

কলকাতার ব্রিগেড যেন ‘রামধনু’… কখনও সেখানে ঢল নেমেছে সবুজ পতাকার, কখনও বা সবুজ মাঠে দেখা গিয়েছে গেরুয়ার আস্ফালন। আবার কখনও বা নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা লাল পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে গোটা চত্বর। ব্রিগেডের আগে রাত জেগে দেওয়াল লিখন, ট্রাকভর্তি শয়ে-শয়ে মানুষ, আর সভা শেষে ছড়ানো-ছেটানো প্লাস্টিকের গ্লাস-প্লেট… ব্রিগেড এক অন্য নস্ট্য়ালজিয়া। আগামী ৭ তারিখ নরেন্দ্র মোদী ব্রিগেড জনসভা করবেন। আর এই রবিবার প্রায় দু’বছর বাদে ব্রিগেডে দেখা যেতে চলেছে লাল পতাকার নিশান। এর আগে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে সমাবেশ করেছিল বামফ্রন্ট। ব্রিগেডে কত লোক হবে, ‘টুম্পা’কে নিয়ে ব্রিগেড জমবে নাকি ‘খেলা হবে’… তা বিতর্কের বিষয়, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষে-বিপক্ষে একের পর এক পোস্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে ‘খেলা জমেছে’। বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে হাজির থাকবেন ইন্ডাস্ট্রির বাম-ঘেঁষা অভিনেতাদের একাংশ।

যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরিচালক অনীক দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন-সহ অনেকেই। শ্রীলেখা মিত্র যেমন প্রথমবার ব্রিগেড সমাবেশে যাবেন, অন্য দিকে চন্দন সেনের ছাত্র রাজনীতি জুড়ে জড়িয়ে আছে ব্রিগেডের সমাবেশ আর শহীদ মিনারের নিচে জমায়েত… আর অন্যরা? তাঁদের কাছে ব্রিগেড মানে কী? শুধুই রাজনৈতিক সমাবেশ? খোঁজ নিল টিভিনাইন বাংলা। শুধু আগামিকাল ব্রিগেডে উপস্থিত থাকা তারকারাই নন, সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাঞ্চন মল্লিক এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া পায়েল সরকারও জানালেন ‘ব্রিগেড’ শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁদের নস্টালজিয়া…

শ্রীলেখা মিত্র (অভিনেত্রী, বাম সমর্থক) 

আমি এই প্রথমবার ব্রিগেড যাচ্ছি। বাবার কাছে থেকে শোনা গল্পগুলো কিংবা টিভিতে দেখা—যে শ’য়ে শ’য়ে লোকের জমায়েত, স্লোগান, মাইকিং, এগুলো সব চাক্ষুস করব। ভীষণ এক্সাইটেড। আসলে সিপিএম পার্টিটার তেমন কোনও দেখনদারি ব্যাপারটাই নেই, তাই যাঁরা কাল আসবেন তাঁরা সহজ-সরল মানুষ।

পায়েল সরকার (অভিনেত্রী, বিজেপি নেত্রী)

ছোট থেকেই ব্রিগেড মানে আমি দেখতাম, মা, বাবা একটু আগে অফিসে বেরবে। কারণ রাস্তায় যানজট হবে। আগামিকাল বামপন্থীরা যেটা মনে করছে, করবে। এতে বিজেপির সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। যদিও আমি সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। এটা বলার জন্য দলের সিনিয়ররা রয়েছেন। তবে আমরা যদি বাংলায় পরিবর্তনের এই ভাইবটা গ্রহণ করে নিতে পারি, তাহলে একটা ব্রিগেডের জন্য কিছু চেঞ্জ হবে না।

চন্দন সেন ( বামমনস্ক নাট্যব্যক্তিত্ব )

ব্রিগেড মানে আমার কাছে সম্ভাবনা। শ্রেণীঘৃণাকে ধ্বংস করার প্রস্তুতি। ব্রিগেড মানে বড় গোছের উচ্চারণ। কিছু শপথ। এই যে আগামীকাল এতগুলো ট্রেন বাতিল করেছে… ব্রিগেডে আসতে গিয়ে কতটা মার খেতে হয়েছে কতজনকে। তবে আমার কাছে ব্রিগেডের থেকেও বেশি নস্টালজিক শহীদ মিনার। এক দিক থেকে নকশালদের আক্রমণ এবং অন্যদিক থেকে কংগ্রেসের আক্রমণ… মেয়েরা শাড়ি ছিঁড়ে শুধু ব্যান্ডেজ বাঁধছে। আর ছেলেরা মাথায় ফেট্টি বেঁধে আবার চলে যাচ্ছে আটকাতে।

বাদশা মৈত্র (বামমনস্ক অভিনেতা) বড়বেলায় আমি কোনওদিন ব্রিগেড যাইনি। কোনওদিন পার্টি মিটিংয়ে বসিনি। তবে এবার কিছু নির্দিষ্ট কারণে ব্রিগেড যাচ্ছি এবং এটা ব্যতিক্রম। সিপিএমকর্মীরা যে অর্থে ব্রিগেড যান, আমি তাঁদের মতো নই। তবে ব্রিগেডের গল্প আমার কাছে আছে। আমি মুর্শিদাবাদের ছেলে। যখন ছোট ছিলাম পাড়ার দাদাদের হাত ধরে ব্রিগেড আসতাম তবে ব্রিগেডে আসা আমাদের লক্ষ্য ছিল না। ব্রিগেডে এসে কিছুক্ষণ থেকে, গোটা শহরে দল বেঁধে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়তাম। জেলার ছেলের কাছে কলকাতা তখন একটা স্বপ্নের জায়গা। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে যখন বাড়ি ফিরতাম, তখন দেখতাম গোটা ট্রেনটাই ব্রিগেডযাত্রীদের দখলে। এটাই আমার ব্রিগেড রোমান্টিসিজম।

কাঞ্চন মল্লিক (অভিনেতা, সদ্য তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন) ব্রিগেড মানেই এ-দল, সে-দল নয়। ব্রিগেড মানেই কোথাও একটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ব্রিগেড মানেই বৃহত্তর কিছু। ব্রিগেড মানেই রাজনৈতিক স্লোগান তোলার জায়গা। চিৎকার তোলার জায়গা। দাবি করার জায়গা। ব্রিগেড পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির পীঠস্থান হয়ে রয়েছে। সেটাই নস্ট্যালজিয়া। আর নির্বাচনের আগে ব্রিগেড সমাবেশ হোক না। সবার জায়গা আছে। সবাই সব কিছুই করতে পারে। বলতে পারেন। করুন। কোনও চাপ নেই তাতে। প্রত্যেকেই তাঁদের প্ল্যাটফর্মে করবেন না কেন? নিশ্চয়ই করবেন। করুন। এটা একটা সার্বভৌম দেশ। গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। সবার করা উচিত।

অনীক দত্ত (বাম মনোভাবাপন্ন পরিচালক) আমি বামপন্থী পরিবারে বড় হয়ে উঠিনি। তাই লেফট লিনিয়েজ আমার ছিল না। ব্রিগেড আমি যাইনি। তবে ছোটবেলা থেকেই ব্রিগেড মানে লাল পতাকা, দেওয়াল লিখন… পরবর্তীকালে মাল্টিকালার দিয়ে এক পার্টির তরফে অন্য পার্টিকে ঠুকে লিখতে দেখা গিয়েছে ব্রি-গ্রেড চল। আমি নিজেকে বামপন্থী দাবী করি না। সেই পড়াশোনা বা জীবনযাপন নেই বলে আমি মনে করি। ছোটবেলায় এক বার ব্রিগেড গিয়েছিলাম মনে আছে। আমার বাবার সঙ্গে, বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান যখন কলকাতা হয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই বয়সে অত জনস্রোত দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল। নেমে যাওয়ার আগে মুজিব রহমান বলেছিলেন, “নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেওয়ার কিছু নাই। আছে শুধু ভালবাসা, দিলাম শুধু তাই…”।