স্বাধীন ভারতে প্রথম বার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘জন গণ মন’ নয়, গাওয়া হয়েছিল কোন গান?
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, কোটি কোটি ভারতবাসীর চোখে ফেটে পড়েছিল আনন্দ্রাশ্রুতে তখন লালকেল্লার সামনে বাজেনি 'জন গণ মন'... বেজেছিল অন্য এক গান। সেই গানেই উদ্বেলিত হয়েছিল ভারতীয় হৃদয়। কী সেই গান?
আজ থেকে ১১০ বছর আগে ‘জন গণ মন’ প্রথমবার গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। সে দিন ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন। সে বার কলকাতায় আয়োজিত হয়েছিল কংগ্রেসের এই অধিবেশন। আর সেই অধিবেশনেই প্রথমবার গাওয়া হয় ‘জন গণ মন’। এরপর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল এই গানের প্রথম স্তবক। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, কোটি কোটি ভারতবাসীর চোখে ফেটে পড়েছিল আনন্দ্রাশ্রুতে তখন লালকেল্লার সামনে বাজেনি ‘জন গণ মন’… বেজেছিল অন্য এক গান। সেই গানেই উদ্বেলিত হয়েছিল ভারতীয় হৃদয়। কী সেই গান?
শুনতে অনেকটা জন গণ মন-র মতোই। তবে কথা কিছুটা আলাদা। গানের নাম ‘শুভ সুখ চ্যান কি বরখা বরষে…’। গানটির কথাই যখন তখন গানের পিছনে যে মানুষটির অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি তিনি রাম সিং ঠাকুরি। ইতিহাস যাকে মনে রেখেছে ‘সিঙ্গিং সোলজার’ হিসেবে। রবিঠাকুরের জন গণ মনকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে যিনি সুর দিয়েছিলেন ‘শুভ সুখ চ্যান কি বরখা বরষে…’র। কীভাবে সৃষ্টি হল এই গান? আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্তর্গত এই সেনার উপরেই এই গুরুদায়িত্ব দিলেন কে?
রাসবিহারী বসু ও জেনারেল মোহন সিং গঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশেনাল আর্মি ভেঙে পড়ার পর তাকে নতুন ভাবে গঠন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সে সময় তাঁর সেনাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সুভাষ এমন এক গানের খোঁজে ছিলেন যে গান হবে সবার, যাতে থাকবে দেশের প্রতি ভালবাসা, থাকবে সৈনিকের দুঃসাহস, যে গান স্বপ্ন দেখাবে মুক্তির, আশ্বাস জোগাবে স্বাধীনতার।
সুভাষ যখন এমনটা ভাবছেন তখন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে আগমন ঘটে রাম সিং ঠাকুরির। ১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাপান সিঙ্গাপুর দখল করে নেয়। জাপানিদের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কাজ করা রাম সিং যোগ দেন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে। সেখানেই রাম সিংয়ের গানের উপর আশ্চর্য দক্ষতা অবাক করে সুভাষকে। বহু বছর পর রাম সিং বলেছিলেন, ‘মনে পড়ে উনি বলেছিলেন,” রাম সিং যে দিন আজাদ হিন্দ বাহিনী সিঙ্গাপুরের ক্যাথে বিল্ডিং দখল করবে সে দিন শুভ সুখ চ্যায়েন কি বর্ষে শোনা যাবে। গানটির প্রভাব এমন হওয়া উচিত যাতে যে ক্যাথেও যাতে দুভাগে ভেঙে পড়ে। আকাশ দেখা যায়। ভারতের জাতীয় পতাকার উপর যাতে ওই আকাশ থেকে দেবদেবী পুষ্প বর্ষণ করে।”
প্রধানের বলা ওই কথাগুলো বিফলে যেতে দেননি তিনি। হিন্দি ও উর্দু– এই দুটো ভাষার সংমিশ্রণে মুমতাজ হুসেন ও আবিদ হাসান লিখলেন একটি গান। আর কবিগুরু ও মার্গারেট কাজিনস-এর তৈরি করা মূল নোটেশন একই রেখে সেই গানেরই সুর দিলে রাম সিং। জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে’ গানটিকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে ধরে, লেখা হল ‘শুভ সুখ চ্যান কি বরখা বরষে’, যে গানের পোশাকি নাম ‘কোয়ামি তারানা’’।
ব্যস, ওই শুরু। পরবর্তীতে রাম সিং ঠাকুরি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানিবাসে প্রতিটি সকাল শুরু হতো এই গান দিয়ে। পরে যা ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। আর সেই কারণেই স্বাধীনতার দিন যখন লালকেল্লার মাথায় জয়ের নিশান উড়ছে তখন ডাক পড়ে তাঁরও। নিজের অর্কেস্ট্রা গ্রুপ সমেত লালকেল্লায় গিয়ে রাম সিং ঠাকুরি গেয়ে উঠলেন… ‘শুভ সুখ চ্যান কি বরখা বরষে…’ ।
TV9 News Network কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগ #AzadiKaAmritMahotsav | Rashtragaan-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত। আসুন, নিজের গলায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে www.rashtragaan.in-এ আপলোড করে এই মহতী উদ্যোগে অংশগ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন- ‘জন গণ মন’- একটি রাগাশ্রয়ী গান, কবে, কোথায় প্রথম গাওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রগান?
আরও পড়ুন- ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছিল ‘জন গণ মন’, স্বরলিপি রচয়িতা ছিলেন কে?