Raju Srivastava Death: এই রাজু কোনও দিন তথাকথিত ‘জেন্টলম্যান’ হতে চাননি, কৌতুক শিল্পীর মৃত্যুতে বললেন আরজে অগ্নি

Bengali RJ & Social Media Influencer Agni: তিনি বিহারের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। আর তাতে তিনি খুব গর্ববোধ করেছেন। তাঁর মজার ক্ষেত্রটা কোনওদিনই অমিতাভ বচ্চন বা শত্রুঘ্ন সিনহাকে মিমিক্রি করা নয়

Raju Srivastava Death: এই রাজু কোনও দিন তথাকথিত ‘জেন্টলম্যান’ হতে চাননি, কৌতুক শিল্পীর মৃত্যুতে বললেন আরজে অগ্নি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 21, 2022 | 8:45 PM

মহুয়া দত্ত

‘হাঁ, ইয়ে কর লো পহলে’—মাথার পিছনে হাত দিয়ে আর বলবেন না রাজু শ্রীবাস্তব। কৌতুক-অভিনেতা তিনি। মানুষকে হাসিয়ে কঠিন এক লড়াই লড়ে চলে গেলেন। ৫৮ বছর বয়সে তাঁর লড়াই থামল। ১০ অগস্ট থেকে চলছিল তাঁর জীবনযুদ্ধ। অনেকের ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই মানুষটিকে নিয়ে। যার মধ্যে আরজে অগ্নি—জেন জ়েড যুগের বাচিক শিল্পী তথা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। তিনি নিজেও যথেষ্ট মজার মানুষ। নিয়মিত তাঁর সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে নিয়ে মানুষকে হাসান। রাজু শ্রীবাস্তবের চলে যাওয়ায় তিনি ফিরে গেলেন ছোটবেলায়। সেই সঙ্গে বাচিক শিল্পী হিসেবে কাজ করতে শুরু করে কীভাবে রাজু শ্রীবাস্তবকে বুঝলেন, তা উঠে এল স্মৃতিচারণায়।

“এই যে জোড়া নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্ত, এত বৃষ্টি হচ্ছে, উইকেন্ডে শপিংয়ের প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে, বাঁশ পড়ে গিয়েছে, কিন্তু ত্রিপলটা আর পড়ছে না… এই সব দেখে না আমার আবহাওয়াকে রাজু শ্রীবাস্তবের মতো দু’টো হাত পিছনে জড়ো বলতে ইচ্ছে করছে ‘হাঁ, ইয়ে কর লো পহলে’। ইন ফ্যাক্ট, রাজু শ্রীবাস্তবের এই যে আইকনিক লাইনটা, সেটা নিয়ে একটা মিম তৈরি হয়েছিল সম্প্রতি, তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর। আর সেটা খুব ভাইরাল হয়েছিল। সেই মিমটা আমাদের অনেক পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছিল। খুব ছোটবেলায় তাঁকে আমরা একটা লাফটার রিয়্যালিটি শোতে দেখি। উনি লোক হাসাচ্ছেন। তখনও তো অত কিছু বুঝতাম না। নির্মল আনন্দে হেসে গড়িয়ে পড়তাম। ছোটবেলায় মা-বাবা কয়েকটা শো দেখা নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতেন আমার উপর, কিন্তু রাজু শ্রীবাস্তবের শো দেখা নিয়ে কখনও বারণ করেননি। বরং আমার মা-বাবা-দাদু-দিদাও আমার সঙ্গে বসে দেখতেন। এবং তাঁরাও সমানভাবে হেসে গড়িয়ে পড়তেন।

যত বড় হয়েছি, তত বুঝেছি, এই কাজটা কী অসম্ভব কঠিন। ৮ থেকে ৮০—সব বয়সের মানুষকে একসঙ্গে সোফায় বসিয়ে রেখে কোনও নন-ভেজ টাচ না দিয়ে, বিলো দ্য বেল্ট জোকস না-বলে, ধর্মীয়, রাজনৈতিক আর যৌন সুড়সুড়ি না দিয়ে নির্মল হাস্যরস সৃষ্টি করা কী অসম্ভব কঠিন। উনি একজন ‘ভাঁড়’। আমরা খুব সহজে লোককে অভিহিত করতে পছন্দ করি। যেমন, রবি ঘোষ শুধুই একজন কমেডিয়ান, অভিনেতা নন। তেমনই ধরেনি রাজু একজন ‘ভাঁড়’। যিনি নিজেকে নিয়ে, তাঁর আশপাশের মানুষজনকে নিয়ে মজা করতে পারেন। আর এখানেই তাঁর আসল দক্ষতা, জিনিয়াস তিনি। পেশাগত কারণে বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি… কিন্তু আমার মনে হয়েছে রাজু শ্রীবাস্তব একজন জ্বলন্ত ব্যতিক্রম। কেন? তার কারণ তিনি গ্রামের সেই সোঁদা গন্ধটাকে আজীবন বুকের মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন।

তিনি বিহারের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। আর তাতে তিনি খুব গর্ববোধ করেছেন। তাঁর মজার ক্ষেত্রটা কোনওদিনই অমিতাভ বচ্চন বা শত্রুঘ্ন সিনহাকে মিমিক্রি করা নয়, বরং তাঁর মজার ক্ষেত্রটা হচ্ছে, নিজের গ্রামের চণ্ডী মণ্ডপে কাকে দেখেছেন, কিংবা গ্রামের পুরোহিত, রিক্সাচালক, দুধ দিতে-আসা সমস্ত মানুষগুলো… যাঁদের দেখেছেন, তাঁদের নিয়ে শোগুলো সেট করতেন। আর তাতে তাঁর কিচ্ছু এসে যেত না। আজকে আমরা যাঁদের স্ট্যান্ড-আপ কমেডি করতে দেখি—কাউকে ছোট না করেই বলছি—সেই দু’টো ধর্মীয়, তিনটে রাজনৈতিক, ক্রিকেট, যৌনতা উদ্রেককারী জোকস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আসে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে রাজু শ্রীবাস্তব, যিনি ‘সো-কলড নট আ জেন্টলম্যান’… তিনি একজন গ্রাম্য মানুষ, আজীবন সেই পরিচয়েই বেঁচেছেন এবং সেটা দিয়েই তাঁর নিজস্ব কমেডি তৈরি করেছেন। ৮ থেকে ৮০-র মানুষকে ওইভাবেই হাসিয়েছেন।

আমার ভাবতে ভাল লাগছে তিনি ‘লিভিং লেজেন্ড’ থেকে আজকে ‘লেজেন্ড’ হয়ে গেলেন। এবার তিনি উপরে গিয়েছেন। ভগবান তাঁর পাপের হিসেব-নিকেশ নিচ্ছেন, চিত্রগুপ্তের খাতা খোলা হয়েছে… ভগবান জিজ্ঞাসা করছেন: ‘বলো তুমি সারা জীবনে কত পাপ করেছো বা কত লোককে আনন্দ দিয়েছো?’ আর রাজু শ্রীবাস্তব মাথার পিছনে হাত দিয়ে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ‘সিগনেচার মার্ক’ নিয়ে বলছেন: ‘হাঁ, ইয়ে কর লো পহলে…’”