Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Exclusive-World Theatre Day: মোবাইল-ল্যাপটপের ‘আওয়াজ করা’ পৃথিবীতে মেন্টাল জিমেরও প্রয়োজন: থিয়েটার থেরাপিস্ট অভিজিৎ অনুকামিন

Abhijit Anukameen-Muktodhara-Theatre Therapy: নেশায় ডুবে যাওয়া, সংশোধনাগারে নিত্য লড়ে-যাওয়া প্রান্তিক মানুষদের মূলস্রোতে ফেরানোর গুরুভার অভিজিৎ অনুকামিনের কাঁধে। পদ্ধতির নাম থিয়েটার থেরাপি। বিশ্ব নাট্য দিবসে একান্ত সাক্ষাৎকারে TV9 বাংলার মুখোমুখি অভিজিৎ অনুকামিন।

Exclusive-World Theatre Day: মোবাইল-ল্যাপটপের 'আওয়াজ করা' পৃথিবীতে মেন্টাল জিমেরও প্রয়োজন: থিয়েটার থেরাপিস্ট অভিজিৎ অনুকামিন
অভিজিৎ অনুকামিন, 'মুক্তধারা' নাট্যদলের জনক, থিয়েটার থেরাপিস্টও।
Follow Us:
| Updated on: Mar 27, 2022 | 1:56 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

কলকাতার নাট্যদল ‘মুক্তধারা’। সেই দলের জনক অভিজিৎ অনুকামিন। অল্প বয়স। নাটক নিয়েই মেতে থাকেন সারাক্ষণ। কিন্তু তাঁর নাটক কেবল নাটক নয়—নেশায় ডুবে যাওয়া, সংশোধনাগারে নিত্য লড়ে-যাওয়া প্রান্তিক মানুষদের মূলস্রোতে ফেরানোর গুরুভার তাঁর কাঁধেই। তাঁর এই পদ্ধতির নাম ‘থিয়েটার থেরাপি’। আজ বিশ্ব নাট্য দিবসে একান্ত সাক্ষাৎকারে TV9 বাংলার মুখোমুখি অভিজিৎ অনুকামিন।

থিয়েটার থেরাপির কতখানি প্রয়োজন আছে?

প্রত্যেক মানুষেরই প্রয়োজন। স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার জন্য আমরা জিম করি। ডায়েট করি। মেন্টাল জিমেরও প্রয়োজন আছে। এই ‘আওয়াজ করা’ পৃথিবীতে সেটা কিন্তু আমরা করে উঠতে পারি না। ফলে জীবনের ছন্দপতন ঘটে। জীবনের সুর মুছে যায়। সুতরাং, জীবনের সুরকে ফিরিয়ে আনার জন্য থিয়েটার থেরাপি খুবই দরকার বলে আমি মনে করি। মোবাইল-ল্যাপটপের দুনিয়ায় আমাদের কল্পনার পৃথিবী ছোট হয়ে যাচ্ছে। ভাল কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা হারাচ্ছি প্রত্যেকেই। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই একই সমস্যা দেখছি। ফলে যেটা হচ্ছে, সমস্যায় পড়লে নিস্তারের পথ বের করতে পারছেন না তাঁরা। অনেক হটকারি সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলছেন কেউ-কেউ। অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছেন।

সহিষ্ণুতাও তো কমে যাচ্ছে ধীরে-ধীরে…

এর কারণ ধৈর্য কমে যাওয়া। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই আপনাকে। একটা সময় যোগাযোগের জন্য মানুষ চিঠি লিখত। তারপর অপেক্ষা করত। অপেক্ষায় থাকত ৭ দিন, ১০ দিন বা আরও বেশি। টেকনোলজির যুগে সেই সবুর কারও নেই। দু’ সেকেন্ডের মধ্যে রিপ্লাই চলে আসে এখন। অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন লোকে। দেখছেন, মেসেজ পাঠানোর পর ব্লু টিক হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? তাই নিয়ে কী চিন্তা! এভাবেই ধৈর্য কমে যাচ্ছে। সেই থেকে সহ্য ক্ষমতা কমছে। অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন মানুষ। যখন দেখছে বিষয়টা চিন্তাভাবনার বাইরে চলে গিয়েছে, আর গ্রহণ করতে পারছে না।

আপনি সংশোধনাগারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁদের অনেককেই মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছেন। কীভাবে থেরাপি করান?

পুরোটাই অভ্যাসের ব্যাপার। রোজই প্রতিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। কোনও মানুষ রাতারাতি রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে যান না। অভ্যাসের মধ্য দিয়েই পরিবর্তন আসে মানুষটির মধ্যে। সংশোধনাগারে যাই প্রথমে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নিজেকে পাল্টাতে চান না ইনমেটরা। আমাকে ওঁরা বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। ধীরে-ধীরে বোঝাপড়ার জায়গায় আসি আমরা। থিয়েটার থেরাপির প্রথম কাজ সম্পর্ক তৈরি করা। সেই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হলেই অন্যান্য পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করা হয়। ছন্দ, সুর—এই সমস্ত কিছুকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি ধীরে-ধীরে। সেই মানুষটাও দেখি ধীরে-ধীরে নিজেকে চিনতে চেষ্টা করে। আশপাশের মানুষগুলোকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু হয় তাঁর।

পুরোটাই তা হলে একটা প্রসেস…

সাইকো-কাউন্সেলিং যে ভাবে হয়, এটাও সেরকমই।

সাইকো-কাউন্সেলিং এবং থিয়েটার থেরাপির মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

সাইকো-কাউন্সেলিং একটা ছোট প্রসেস। থেরাপি লম্বা প্রসেস। যে কোনও থেরাপিই কিন্তু তা-ই। প্রভাবটাও অনেকদিনই থেকে যায়। কাউন্সেলিংয়ে অ্যাক্টিভিটি থাকে না। থিরেটার থেরাপিতে থাকে।

আপনি নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘মুক্তধারা’ দেখেছেন? সেখানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর যে চরিত্র, বাস্তবে সেটাই কি আপনি?

আমি ছবিটা দেখেছি। কিন্তু যা বুঝেছি, নিজের সঙ্গে কোনও মিল পাইনি। দুটো দু’রকমের বিষয়।

কিন্তু সিনেমার নাম ও আপনার দলের নাম দুটোই ‘মুক্তধারা’… এর কি কোনও যোগসূত্র আছে?

এর জন্য আমার খুব অসুবিধা হয় জানেন। আমি কিন্তু ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দলের নাম রাখিনি। যাঁদের যা ধন্দ আছে, আপনার এই সাক্ষাৎকারে আমি মিটিয়ে দিতে চাই। নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘মুক্তধারা’ সিনেমা তৈরি করার বহু আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামের এক ভদ্রলোক একটি নাটক লিখেছেন। এবং সেই নাটকের নাম ছিল ‘মুক্তধারা’। সেখানে অভিজিৎ নামের একটি চরিত্র ছিল। সেই জন্যই আমার মনে হয়েছিল আমি রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’র অভিজিৎ। সেই ভাবনা থেকেই দলের নাম রেখেছি ‘মুক্তধারা’।

সিনেমায় দেখানো পদ্ধতির সঙ্গে আপনার পদ্ধতি কীভাবে আলাদা?

সিনেমায় যেটা দেখানো হয়েছে, সেটা কিন্তু থিয়েটার থেরাপি নয়। সেটা কোথাও বলাও হয়নি। আমার থেরাপি সব সময় যে অভিনয়ই হবে, তা কিন্তু নয়। থিয়েটারের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিকে কাজে লাগিয়ে এই থেরাপি। এর একটা জার্নি আছে আর সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

কত জন মানুষকে মূল স্রোতে ফিরিয়েছেন?

বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ… এই তিন রাজ্যে আমি ঘুরে-ঘুরে কাজ করি। মাদকের নেশায় ডুবে যাওয়া মানুষদের নিয়েই মূলত কাজ করি। জেলায় যে কাজগুলো করি, ১০০ শতাংশ মাদকাসক্তদের নিয়েই। অনেকে কিন্তু থিয়েটার থেরাপিতেই সুস্থ হয়েছেন। কর্মজীবনেও ফিরে গিয়েছেন।

এই কাজ করে নিশ্চয়ই আনন্দ পান?

খুব ভাল লাগে জানেন। মনে হয় আরও বেশি কাজ করা দরকার।

এই কাজে কেন এলেন?

থিয়েটার থেরাপির মূল কাজ নিজেকে চেনা। আমার মনে হয়, নিজেকে না চিনলে অন্য মানুষকেও চিনে ওঠা যায় না। নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলাম: কী করছি, কেন করছি।

আচ্ছা… আমাদের সাংবাদিকতাতেও এই নিয়ম রয়েছে: কী লিখছি, কেন লিখছি!

লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজটা শুরু করার আগে দেখতাম, অ্যাকাডেমি কিংবা এই ধরনের প্রেক্ষাগৃহে নির্দিষ্ট শ্রেণির লোক আসেন। সকলের সেখানে প্রবেশ নেই। থিয়েটারে বিষয়ে যাঁদের কথা বলা হয়, তাঁরাও তো নাটক দেখতে আসে না। একদিন আমার মনে হল, সকলকে নিয়ে নাটক করব। তখনই থিয়েটার থেরাপির বিষয়টাকে নিয়ে পথ চলতে শুরু করি। আমার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, আমার থিয়েটারে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নিজ-নিজ শ্রেণির কাছে গিয়েই নিজেদের কথা ব্যক্ত করবেন। তা হলেই পরিবর্তন আনতে পারবেন। সমাজকে বদলাতে পারবেন।

এই কাজ করতে গিয়ে পুরনো স্পেস খুঁজতে শুরু করলাম, পুরনো রাজবাড়ি, ভাঙা মন্দির… সেখানে বাধাও পেয়েছি। কারা বাধা দিয়েছে বলুন তো? সেই সব জায়গাগুলোকে যাঁরা নেশার আখড়া হিসেবে ব্যবহার করত। একটা সময় বাধা দেওয়া মানুষগুলোই আমার কাছে থেরাপি নিয়েছে। ওঁরা এখন ভাল আছেন।

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee Demise: ওর মনে একটা খুব কষ্ট ছিল আমি জানি… মনে মনে গুমরে থাকত: অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

আরও পড়ুন: RRR-Puneeth Rajkumar: ‘আরআরআর’-এর রিলিজ় ছাড়ল না মৃত অভিনেতাকেও… নিন্দার ঝড় বইছে!

আরও পড়ুন: Jalsa: সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত শিশুকে দিয়েই বাজিমাত বিদ্যা-শেফালির ছবি, ‘জলসা’খ্যাত শিশুশিল্পী ‘আয়ুশ’ আসলে কে?