Cotton Industry: তাঁত বাঁচাতে কী করছে রাজ্য সরকার?

দুর্গাপুজোর আর মাত্র কিছুদিন বাকি তবুও এখন ঠিক সময়ে স্নান খাওয়া করতে পারছেন তাঁতিরা। এ দৃশ্য অতিমারীর আগে ভাবা যেত না! আজ থেকে দু বছর আগেও বছরের এই সময়ে দিন রাত এক করে কাজ করে চলতেন তাঁতিরা।

Cotton Industry: তাঁত বাঁচাতে কী করছে রাজ্য সরকার?
শুনশান তাঁতঘর গুলো থেকে কচ্চিত কদাচিৎ খটাখট শব্দ আসছে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2021 | 7:42 AM

তাঁতের চরকা একসময়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে আসমুদ্র হিমাচলকে এক সুতোয় বেঁধেছিল চরকা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল তাঁত শিল্প। এবারের জাতীয় তাঁত দিবস ৭ অগস্টে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে তাঁতকে “দেশের গর্ব” বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, এখন বিপন্ন দেশের গৌরব। আমাদের রাজ্যের ফুলিয়া, শান্তিপুর, নবদ্বীপ, ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, ধনেখালি, বেগমপুর কিংবা রাজবলহাটের বয়ন শিল্পীদের পরিস্থিতি এখন সঙ্গিন।

দুর্গাপুজোর আর মাত্র কিছুদিন বাকি তবুও এখন ঠিক সময়ে স্নান খাওয়া করতে পারছেন তাঁতিরা। এ দৃশ্য অতিমারীর আগে ভাবা যেত না! আজ থেকে দু বছর আগেও বছরের এই সময়ে দিন রাত এক করে কাজ করে চলতেন তাঁতিরা। কেউ সুতো কাটতেন, কেউ সেই সুতো প্রক্রিয়াকরণ করতেন, সুতো রঙ করতেন কেউ কেউ, কেউ জ্যাকার্ডের জন্য নকশা কাটতেন বাকিরা তাঁত চালাতেন। পুজোর বাজারে শাড়ি পৌঁছে দিতে নাওয়া খাওয়ার সময় থাকত না।

আর এখন কোথায় কী ! শুনশান তাঁতঘর গুলো থেকে কদাচিৎ খটাখট শব্দ আসছে। বেশিরভাগ তাঁতিই কর্মহীন হয়ে বসে। অতিমারির আগে সরকারি সংস্থা তন্তুজ তাঁত সমিতিগুলোর থেকে যেখানে গড়ে ২০০০টির থেকে ৪০০০টি শাড়ি কিনত। সেই সংখ্যা এখন কমে হয়েছে গড়ে ২০০ টির থেকে ৪০০টি। একদিকে তাঁতিদের থেকে কম শাড়ি কিনছে তন্তুজ, অন্যদিকে অতিমারি আবহে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় হওয়ায় খুচরো ক্রেতাদের ভিড়ও কমেছে তাঁতিদের ঘরে। এর ফলে অনেক বয়ন শিল্পী বাধ্য হয়েই পাট কিংবা ধান চাষের মজুর হিসাবে কাজ করছেন। শান্তিপুর আর ফুলিয়া অঞ্চলের হাজার হাজার তাঁতঘর এখন খাঁখাঁ করছে। তাঁত শিল্পীদের অনেকে আবার পেশা পরিবর্তনও করছেন। চাষী বা শ্রমিক হিসাবে পরিযায়ীও হচ্ছেন অনেক তাঁত শিল্পী। খদ্দের নেই তাই বিক্রিও নেই নদিয়ার তাঁতঘর গুলোতে। তাই কাজও কমেছে বয়নশিল্পীদের। নদিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ যাঁরা তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন পরিবার চলবে কী করে? শিল্পীরা বিষন্ন এবং বিপন্নও একই সঙ্গে।

বীরেন কুমার বসাক বাংলার তাঁত শিল্পে উজ্জ্বল নাম। তাঁতের কাপড়ে সুক্ষ কারুকাজ তাঁর তৈরি কাপড়কে তুলে নিয়ে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। স্বীকৃতি এসেছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড থেকেও। সামগ্রিকভাবে তাঁত শিল্পের এই পরিস্থিতির কারনে বিষন্ন তিনিও। এই বিষয়ে সম্প্রতি মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের সঙ্গে নবান্ন সভাঘরে সাক্ষাৎও করেন বীরেন কুমার বসাক। তিনি জানালেন এবার বাংলার তাঁত ও বয়ন শিল্পকে উজ্জীবিত করতে সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোষাক তৈরি হবে তাঁতের কাপড় দিয়ে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পুনরুজ্জীবিত হবে বাংলার তাঁত। তাঁতের কাপড়ে তৈরি স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাবে ছাত্রছাত্রীরা। এরফলে একদিকে যেমন স্থানীয় শিল্পীদের পাশেও থাকা হবে অন্যদিকে দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতিও ছোট থেকেই শ্রদ্ধাশীল হবে আগামী প্রজন্ম।

ফুলিয়ায় বীরেন কুমার বসাকের পুরোনো দোকানের পাশাপাশি তাঁর পুত্র অভিনব বসাক এবছরই শুরু করেছেন একটি নতুন আউটলেট। সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে তৈরি এই শো-রুম। সমস্ত তাঁত শিল্পীদের টিকাকরন করেছেন তাঁরা। টিকাকরন হয়েছে তাঁতশিল্পীদের পরিবারের সদস্যদেরও। রাজ্য সরকারের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় এসেছেন তাঁতিরা। এই অবস্থায় করোনার তৃতীয় তরঙ্গের দিকে তাকিয়ে আছেন বাংলার বয়ন শিল্পীরা। যদি তৃতীয় তরঙ্গ মারণ রূপ ধারণ না করে তবেই আবার চাঙ্গা হবে বাজার। আবার মাকুর খটাখট শব্দে মুখরিত হবে তাঁতঘরগুলো।