বলা তো যায় না আবার কখন কোন লেখা ভাইরাল হয়ে যায়, ‘টুম্পা সোনা’র প্যারোডি লিখে ভাইরাল সৌম্যদীপ সৎপতি

"ভাবিইনি এত কিছু হবে। এমনিই লিখে ফেলেছিলাম।"

বলা তো যায় না আবার কখন কোন লেখা ভাইরাল হয়ে যায়, ‘টুম্পা সোনা’র প্যারোডি লিখে ভাইরাল সৌম্যদীপ সৎপতি
সৌম্যদীপের প্যারোডি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়
Follow Us:
| Updated on: Dec 15, 2020 | 5:14 PM

সোহিনী চক্রবর্তী:  ‘ও টুম্পা সোনা, দুটো হাম্পি দেনা’…

পুজোর আগে থেকে এই গানই গান গুনগুন করছে আট থেকে আশি। কেউ-কেউ তো বলছেন, আলোর গতির চেয়েও দ্রুত ভাইরাল হয়েছে এই গান। তবে ‘টুম্পা সোনা’ নিয়ে আমজনতার উৎসাহে নতুন মোচড় এই গানের প্যারোডি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘টুম্পা’ গান লিখলে কেমন হতো, সেটাই লিখেছেন বাঁকুড়ার সৌম্যদীপ সৎপতি। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও মুগ্ধ সৌম্যদীপের প্যারোডিতে। ফেসবুকে তিনি শেয়ারও করেছেন বাঁকুড়ার তরুণের লেখা। সৃজিতের পোস্টের পরই ভাইরাল হয়েছে সৌম্যদীপের প্যারোডি। তবে রাতারাতি এত ‘বিখ্যাত’ হয়ে যাওয়ার পরও লাজুক হেসে সৌম্যদীপ বলছেন, “ভাবিইনি এত কিছু হবে। এমনিই লিখে ফেলেছিলাম।”

তবে প্যারোডি লেখার শখ সৌম্যদীপের অনেকদিনের। ছোট থেকেই লেখালিখি করেন তিনি। উৎসাহ দিয়েছেন পরিবারের সবাই। ছেলের লেখা নিয়ে এত চর্চা হওয়ায় খুশি তাঁরাও। আর এমন খুশির আবহে ‘বিজ্ঞানের নীরস ছাত্র’ সৌম্যদীপের সঙ্গে আড্ডা দিল টিভি৯ বাংলা ডিজিটাল।

প্রশ্ন- হঠাৎ মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন? মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বা অন্য কেউ নয় কেন?

প্যারোডি সাধারণত বিখ্যাত কোনও লেখার অনুকরণেই লেখা হয়। এক্ষেত্রে ‘টুম্পা সোনা’ গানটা আক্ষরিক অর্থেই হাল্কা চালের, চলতি কথায় বললে ‘ক্যাওড়া’। আর ঠিক এর বিপরীত ভাবনার লেখার কথা বললে অনেক বাঙালির মতো আমার মনেও প্রথম মাইকেল মধুসূদন দত্তর নামটাই এসেছিল। শুধুমাত্র মজা করেই এই লেখাটা লিখেছি। জাস্ট একটা খেয়াল মাত্র। ভাবিওনি যে এত মানুষের নজরে লেখাটা আসবে বা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট মানুষ শেয়ার করবেন। এই প্যারোডি লেখাকে কেউ আমার দুঃসাহস ভাববেন না।

প্রশ্ন- ‘টুম্পা’ ইতিমধ্যেই দারুণ জনপ্রিয় গান, সবার মুখে-মুখে ঘুরছে, সেই জন্যই কি এই গান বেছে নিলেন?

হ্যাঁ গানটা জনপ্রিয় তো সন্দেহ নেই। তবে প্রথমে গানটা শুনে কিন্তু ভাবিনি প্যারোডি লিখব। একদিন পাশের বাড়িতে গানটা বাজছিল। তখনই মাথায় আসে। লিখেও ফেলি তখনই। তবে ফেসবুকে দেব কি না, মনস্থির করতে পারছিলাম না। পরে দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন- এর আগেও প্যারোডি লিখেছেন?

আমি লেখালেখি শুরু করি ক্লাস ফাইভ থেকে। বাবা-মা আর বিশেষত আমার ইংরেজি শিক্ষক সুব্রতবাবুর উৎসাহে। আমার প্রথম লেখা ছাপা হয় আমাদের স্কুল ম্যাগাজিন ‘জিয়নকাঠি’-তে, কবিতাটি ছিল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’-র প্যারোডি। সেই-ই আমার প্রথম প্যারোডি লেখা। এরপর কবিগুরু থেকে নজরুল, সুকান্ত থেকে মধুসূদন, অনেকের লেখার অনেকগুলো প্যারোডিই লিখেছি গত কয়েক বছরে। কিছু লেখা ছাপা হয়েছে। কিছু ফেসবুকে শেয়ার করেছি। আর বাকিগুলো সযত্নে নিজের ডায়েরিতে রেখে দিয়েছি।

প্রশ্ন- হঠাৎ এই প্যারোডি লেখার শখ এল কোথা থেকে? বাড়িতে গানের চর্চা রয়েছে?

আমি সদ্য কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে বিএসসি পড়া শেষ করেছি। এখন এমএসসি পড়ছি। লোকে আমায় বিজ্ঞানের নীরস ছাত্র ভাবতে পারেন। আসলে সেভাবে পরিকল্পনা করে কখনই কিছু লিখিনি। তবে লিখতে ভাল লাগত। ছোট থেকেই গল্পের বইয়ের প্রতি অদ্ভুত নেশা রয়েছে। মা সঙ্গীতচর্চা করতেন, গান শিখেছিলেন একসময়। তবে আমার লেখালেখির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান আমার ঠাকুমার। অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তি ওঁর। ছোটবেলায় পড়া কৃত্তিবাসী রামায়ণ এখনও লাইন বাই লাইন মুখস্থ। মূলত ঠাকুমার মুখে গল্প শোনার মাধ্যমেই কল্পনার জগতে আমার প্রবেশ। জীবনে প্রথম যে লেখাটা লিখেছিলাম, তার প্রথম পাঠক ছিলেন উনিই।

প্রশ্ন- আপনার লেখা প্যারোডি এখন ভাইরাল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও শেয়ার করেছেন, রাতারাতি কি সেলেব-সেলেব ফিলিং আসছে?

প্রথমেই বলে রাখি, প্যারোডি হিসেবে এই লেখাটির মান সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র উচ্চ ধারণা নেই। এর চেয়ে অনেক ভালো মানের প্যারোডি আমিই লিখেছি এর আগে। সত্যিই এই লেখা এভাবে ভাইরাল হবে ভাবিনি। আমার কাছে ব্যাপারটা নেহাতই কাকতালীয়। ফেসবুকে “A group where we live in Bangla Sahityo Multiverse” নামে একটি গ্রুপে প্রথম লেখাটা দিয়েছিলাম। এর আগেও দু-একটি প্যারোডি ওই গ্রুপে দিয়েছিলাম। সেগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু এই লেখাটা ভাগ্যক্রমে সৃজিতবাবুর নজরে পড়ে যায়। উনিও এই গ্রুপের সদস্য। অতএব লেখাটা যে ভাইরাল, তার পিছনে যাবতীয় কৃতিত্ব কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। আর ওই ফেসবুক গ্রুপ এবং বাকি যাঁরা আমার লেখা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের। এতে আমার ‘সেলেব’ ফিল হওয়ার বোধহয় কোনও কারণ নেই।

প্রশ্ন- এই মুহূর্তে আর কোনও প্যারোডি লিখছেন? বা আগামী দিনে কিছু লিখবেন কি না ঠিক করেছেন?

কেরিয়ারের চাপে আমি প্রায় আড়াই বছর লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম। এখন পড়াশোনার চাপ আরও বেড়েছে। তাই নিয়মিত হয়তো লেখালেখি হবে না। মাথায় কিছু এসে গেলে লিখে ফেলব। তবে পূর্ব-পরিকল্পিত কিছু নেই। কিন্তু এই ক’দিনে একটা জিনিস বুঝলাম এবার তাড়াহুড়ো করে নয়, ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে লিখব। বলা তো যায় না আবার কখন কোন লেখা ভাইরাল হয়ে যায়…