Dengue: পেঁপে পাতার রসে ডেঙ্গি সেরে যায় না কারণ বিজ্ঞানে কোথাও একথা বলা নেই, মেডিসিন চিকিৎসক রাহুল জৈন

Dengue Outbreak: রাজ্যে ডেঙ্গির লেখচিত্র ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার পুজোর মরশুম জুড়েই চলবে ডেঙ্গি।

Dengue: পেঁপে পাতার রসে ডেঙ্গি সেরে যায় না কারণ বিজ্ঞানে কোথাও একথা বলা নেই, মেডিসিন চিকিৎসক রাহুল জৈন
Follow Us:
| Updated on: Sep 26, 2022 | 4:55 PM

শেষ কিছুমাস কোভিড আতঙ্ক থেকে রেহাই পেলেও নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই সাধারণ মানুষের। অগস্ট থেকেই শহরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গি। অবশ্য গত দু’বছরে যে ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি এমনটা নয়, কোভিডের কারণে তা অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। চলতি মরশুমে পুজোর আগেই যে ভাবে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকেরা। রাজ্যে ডেঙ্গির লেখচিত্র ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে ডেঙ্গির দাপট। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার পুজোর মরশুম জুড়েই চলবে ডেঙ্গি। অর্থাৎ দুর্গাপুজো-কালীপুজো পেরিয়েও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে এর প্রকোপ। সম্প্রতি চলতি বছরেরর ৩৮তম সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে কলকাতায় যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৫২ জন সেই সংখ্যা এবারে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫২৫-এ। এক সপ্তাহের মধ্যেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬৭ জন। কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগণা এবং শিলিগুড়িতে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ক্রমশ ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে জেলা থেকেও। সেই সঙ্গে যত্রতত্র জমা জল, খামখেয়ালি বৃষ্টিতে সমস্যা আরও বাড়ছে। কেন এভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গি, আক্রান্তদের মধ্যে কী-কী উপসর্গ থাকছে, সেরে উঠলেও বা কতটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে—এই নানাবিধ বিষয় নিয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল বেলভিউ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক রাহুল জৈনের সঙ্গে। ডেঙ্গি সংক্রান্ত সাধারণ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁর কাছে। উত্তরে তিনি যা বললেন, তাই-ই তোলা থাকল পাঠকদের জন্য।

ডেঙ্গির কোন ভ্যারিয়েন্ট এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে?

সম্প্রতি যে কয়েকটি রিপোর্ট সামনে এসেছে তাতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক হল DEN 3। ভাইরাসের সেরোটাইপ (Serotype) নিয়ে এখানে কাজ হয় না। ফলে কে, কোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে, তা বলা মুশকিল। তবে এখন সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে DEN 3 স্ট্রেন।

সাধারণ ভাবে লক্ষণ কী-কী থাকছে?

হেমারেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever) এবার থাকছে না। থাকলেও তা খুব কম। অধিকাংশের ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া, পেটে ব্যথা, বমি, খেতে না-পারা, গলব্লাডারে ব্যথা—মূলত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI Symptoms) সবথেকে বেশি। প্রাথমিকভাবে বোঝাও যাচ্ছে না যে, তা ডেঙ্গি। পেটের সংক্রমণ নিয়ে রোগী হাসপাতালে আসছেন। জ্বর ৯৯-১০১। এ দিকে টেস্ট করায় রিপোর্ট আসছে ডেঙ্গি পজিটিভ। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা এবার বেশি ভোগাচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে এই সমস্যা। প্রভাব পড়ছে লিভার ফাংশনেও।

dengue

প্লেটলেট কি লাগছে?

এইবার যাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকের ক্ষেত্রেই প্লেটলেট দিতে হচ্ছে। প্লেটলেট কাউন্ট ঠিকই থাকছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে অন্ত্রে। পেটের সমস্যা, বমি, খেতে না-পারা—এসবই ভোগাচ্ছে বেশি। এই উপসর্গকে চিকিৎসা পরিভাষায় আমরা বলছি Expanded dengue syndrome।

কেন লাগামছাড়াভাবে বাড়ছে ডেঙ্গির সংক্রমণ?

এর জন্য মূলত দায়ী আবহাওয়া। খামখেয়ালি বৃষ্টিতেই বাড়ছে অসুখ। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি ফলে জমা জলের পরিমাণ বাড়ছে। পরিষ্কার জলে কখনওই ডেঙ্গির মশা জন্মায় না। যত্রতত্র আবর্জনাও বেড়েছে। গত ২ বছর মানুষ অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। মাস্কের ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, আশপাশ পরিষ্কার রাখা এসব ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে চলেছেন। কোভিডের টিকা নেওয়ার পর অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে হাইব্রিড ইমিউনিটি। কোভিড নিয়ে মানুষ আর আতঙ্কিত নন। ফলে মানুষের মধ্যেও বেড়েছে গাফিলতি। মশারি না-টাঙানো, জমা জলের সমস্যা থেকেই বাড়ছে ডেঙ্গি।

কতটা কার্যকরী হবে ডেঙ্গির টিকা?

এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। বেশ কিছু সংস্থা দাবি করেছে যে তারা ডেঙ্গির টিকা বানাচ্ছে। কিন্তু সেই টিকা বাজারে না আসা অবধি কিছুই বলা যাচ্ছে না। কবে আসবে সেই বিষয়েও স্পষ্ট জানা নেই।

dengue

কোভিড আর ডেঙ্গি কি একসঙ্গে হচ্ছে?

গত বছরও এই রকম কিছু রোগী পেয়েছিলাম, যাঁরা একই সঙ্গে কোভিড-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এই বছর সংখ্যাটা কম। যাঁদের কোভিড হচ্ছিল, তাঁদের উপসর্গ খুবই সামান্য। জ্বর-সর্দি ছাড়া অন্য কোনও সমস্যা নেই। প্রায় সব মানুষেরই অজান্তে দু’-একবার কোভিড হয়ে গিয়েছে। কোভিড-ডেঙ্গি একসঙ্গে হলেও চিকিৎসার পর তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এই মুহূর্তে যাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত অথচ বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা কী মেনে চলবেন?

লিক্যুইড ডায়েট মেনে চলতে হবে। কোনও রকম মশলাদার খাবার চলবে না। বাইরের খাবার তো নৈব নৈব চ। ওআরএস, ডাবের জল, ঘোল, দই-ভাত, খিচুড়ি এই সব খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কোনও রকম কার্বোনেটেড ড্রিংক ভুলেও নয়। আরও একটি কথা আমি বলতে চাই, পেঁপেপাতার রসে ডেঙ্গি সেরে যায় না। প্লেটলেটও বাড়ে না। বিজ্ঞানে কোথাও বলা নেই, এমনকী এর কোনও প্রমাণও নেই। দয়া করে ডেঙ্গি রোগীকে এই পেঁপে পাতার রস খাইয়ে আনবেন না। বা খাবেন না। এতে পরিস্থিতি বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে। GI Symptoms বাড়ার জন্যেও দায়ী এই পেঁপেপাতা। এর ফলে চিকিৎসাতেও সমস্যা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন থেকে প্ররোচিত হয়ে আজকাল অনেকেই গিলয় খান। এই গিলয় মারাত্মক ক্ষতিকারক। থেকে যায় প্রাণহানির আশঙ্কা। কোনও রকম self-medication চলবে না।