একটু একটু করে অসুস্থ করে তুলছে জলবায়ুর পরিবর্তন! কীভাবে?

সূর্য, বায়ু এবং জলপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগানোর কথা ভাবতে হবে। তাহলেই কমবে দূষণ। ক্রমশ পৃথিবী ফিরে যাবে তার পুরনো অবস্থানে।

একটু একটু করে অসুস্থ করে তুলছে জলবায়ুর পরিবর্তন! কীভাবে?
আমাদের হাতেই রয়েছে পরিবেশ আর পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করার ভার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 06, 2021 | 4:55 PM

একদিকে যেমন আমরা বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করছি, অন্যদিকে, আমরা ধীরে ধীরে নষ্ট করছি আমাদের সুজলা সুফলা পৃথিবীকে! মানবসৃষ্ট দূষণের প্রভাবে পরবর্তন ঘটছে জলবায়ুর। আর জলবায়ুর পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে আমাদের স্বাস্থ্যে। আর তা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, সত্যিটা জানলে আপনার রাতের ঘুম অবধি উবে যেতে বাধ্য। কীভাবে? আসুন দেখা যাক—

গ্রিন হাউজ এফেক্ট

বাতাসে ক্রমশ বেড়ে চলেছে কার্বনডাই অক্সাইড। ফলে পৃথিবী যে তাপ ছাড়ছে তা আটক পড়ছে বায়ুমণ্ডলেই! ছেড়ে দেওয়া তাপ ফিরে আসছে ফের ভূ-পৃষ্ঠে। এভাবেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কবজায় চলে এসছে আমাদের সুন্দর সবুজ পৃথিবী। ফলে বেড়েই চলেছে খরা, বন্যা, ঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়! এখানেই শেষ নয়। আমাদের অগোচরেই মানুষ ক্রমশ হয়ে পড়ছে রোগগ্রস্ত! একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য!

বায়ু দূষণ

গাড়িতে, কলকারখানায় এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে জীবাশ্ম থেকে পাওয়া জ্বালানি অর্থাৎ পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা। এই ধরনের জ্বালানি পুড়লেই বাতাসে হু হু করে মিশছে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড। ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে বায়ুমণ্ডলের গুণগত মান! বাতাসে বাড়ছে এমন কিছু কণার মাত্রা যা দূষণের মানদণ্ডে ভয়াবহ রকমের ক্ষতিকর! প্রতি মহূর্তে শ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে সেই সমস্ত সূক্ষ্ম ‘পার্টিকল’ বা বিষবৎ কণা। ধ্বংস করে দিচ্ছে ফুসফুসের কোষগুলিকে! কম বয়সেই দেখা দিচ্ছে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো কঠিন দুরারোগ্য অসুখ! এমনকী এখন বায়ু দূষণের সঙ্গে অ্যাকিউট কার্ডিওভাসকুলার ইভেন্ট এবং করোনারি আর্টারি ডিজিজ হওয়ার সম্পর্কও পাওয়া যাচ্ছে!

আরও পড়ুন: ভিডিয়ো কলে ডাক্তার দেখানোর সময় যে ১০টি বিষয় আপনি মাথায় রাখবেন

হিট-ওয়েভ

সার বিশ্ব জুড়েই ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। পরিবেশে বৃদ্ধি পেয়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রা। নানা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ছোটখাট নানা শারীরিক জটিলতা যেমন হিট এলার্জি, হিট ইডিমা, হিট ক্রাম্পস এবং পেশির টান ধরার মতো সমস্যা তৈরি করে। তবে ছোটখাট এমন সমস্যা ছাড়াও হতে পারে বড় অসুখ যেমন হিট সিনকোপি (তীব্র গরমে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা), হিট একজশ্চন, হিট স্ট্রোক। মনে রাখবে হবে, এই ধরনের সমস্যা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়

জলবায়ুর এহেন পরিবর্তনে সবচাইতে বেশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভুগছে এশিয়া মহাদেশ! অন্তত ‘ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক এক বিরাট আকারের প্রকল্প যা মানবজাতির স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে কাজ করছে, সেই প্রকল্পের অধীনে এক রিপোর্ট থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন অনাবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প, দাবানলের মতো সমস্যা প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের অকালে প্রাণহানি ঘটার পিছনে দায়ী থাকছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলছে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব।

সংক্রামক অসুখ

গবেষকরা বলছেন, পরিবেশের ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রা ক্রমশ সংক্রামক অসুখ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে! বিশেষ করে নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের বংশবৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এমনকী নানা পোকা যেমন মশা-মাশির বংশবৃদ্ধিতে অনুঘটকের কাজ করছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। এই কারণেই বাড়ছে ডেঙ্গুর মতো রোগ!

পানীয় জলের অভাব

খরা হওয়ার ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-নালা! বৃষ্টি হচ্ছে না! মাটির নীচে জলের স্তর নেমে যাচ্ছে হু হু করে। যেটুকু জল মিলছে ভূপৃষ্ঠে, সেখানেও বাড়ছে নানা ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা! পরিষ্কার পানীয়জলের অভাবে জলবাহিত অসুখ যেমন ডায়ারিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এমনকী শস্যের ফলন হ্রাস পাচ্ছে যা ভবিষ্যতে খাদ্যসঙ্কট দেখা দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে।

আমাদের হাতেই রয়েছে পরিবেশ আর পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করার ভার। বিজ্ঞানীরা বলছেন এখন থেকেই বন্ধ করা দরকার জীবাশ্ম থেকে পাওয়া জ্বালানির ব্যবহার!