COVID Community Transmission: ‘আমরা যে কোভিড গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে রয়েছি, তা দ্রুত মেনে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন!’ সাবধানবাণী বিশেষজ্ঞের
এখনই গোষ্টী সংক্রমণ হিসেবে করোনার এই নয়া ভেরিয়্যান্ট নিয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এমনটাই মত ভেলোরের সিএমসি-র ক্লিনিকাল ভাইরোলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান তথা অবসারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. টি জেকব।
ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড ওমিক্রণ ভাইরাস। গোটা দেশে করোনার তৃতীয় তরঙ্গে যে গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, তা দ্রুত স্বীকার করে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেক চিকিত্সক। কারণ যে হারে লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। এখনই গোষ্টী সংক্রমণ হিসেবে করোনার এই নয়া ভেরিয়্যান্ট নিয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এমনটাই মত ভেলোরের সিএমসি-র ক্লিনিকাল ভাইরোলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান তথা অবসারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. টি জেকব। তাঁর কথায়, মহামারীর শুরু থেকেই এই ভাইরাসকে আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হিসেবে মেনে নিয়েছি। তাই এবার নয়া কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসে গিয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন নিউজ নাইনের সঙ্গে। অকপট কথোপকথনে উঠে এসেছে নয়া তথ্যও।
গত ১০ জানুয়ারি, দেশে সাপ্তাহিক কোভিড ১৯ আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে প্রায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ থাকাকালীন এই সংখ্যাটি কি নিরাপদ?
~ এখন কেন? আমরা প্রথম থেকেই গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে দিয়েই চলেছি। তা সে স্বীকার করতে চাই বা না চাই। আপনি একটি গোষ্ঠী সংক্রমণ হিসেবে ব্যাখ্যা করবেন, আর তার উপরই সব কিছু নির্ভর করবে। আমি এটা বিশ্বাস করি যে আমরা অনেক দিন ধরেই এই অবস্থাতে রয়েছি। অবশ্যই ওমিক্রনের জন্য ও ডেল্টার জন্য। গোষ্ঠী সংক্রমণ না থাকলে আমরা যে করোনা তরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করেছি, তা কখনও হত না।
আপনি ভারতের এই গোষ্ঠী সংক্রমণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
– এই ধরনের ট্রান্সমিশন যখন ঘটে, তখন আমরা এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে এই সংক্রমণের আগের অবস্থা কি ছিল। এর মানে এই যে আমরা সঠিকভাবে ট্রান্সমিশন চেইন খুঁজে বের করে পিছনের দিকে ট্র্যাক করতে সক্ষম হই। মানে এই গোষ্ঠী সংক্রমণের জন্য যে কেউ দায়ী থাকতে পারে। এখন আর এটা নেই যে ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এরজন্য চেইনের পূর্ব পরিচিত কেউ সংক্রমণের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। এই সংক্রমণের কারণে এখন কে দায়ী আর কে দায়ী নয় তা বলা অপ্রাসঙ্গিক। তাই এই অবস্থাকে গোষ্ঠী সংক্রমণ হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত।
আমরা যে সত্যিই গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে রয়েছি আর তা স্বীকার করে নিলে অতিমারির বিরুদ্ধে আরও কীভাবে লড়াই করতে সাহায্য করবে?
– গোষ্ঠী সংক্রমণ আমাদের শত্রু নয়। সিস্টেমের ব্যর্থতাও নয়। আবার দুটোই। তাই এই মতের ল়ড়াইয়ে গেলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তবে তার থেকে এটা ভাবা উচিত, কীভাবে এই অবস্থার সঙ্গে লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। গোষ্ঠী সংক্রমণের যে হয়েছে তা স্বীকার করে নিয়ে সামাজিক মিশ্রণ ও অন্যান্য কারণের প্রেক্ষাপটে ভাইরাস কী কী করতে পারে তা বিবেচনা করা সহজ হবে। ভাইরাস রুখতে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে যাতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খুব আলাদা কিছু হয়।
যে মুহূর্তে আমরা এটা স্বীকার করে নেব যে আমরা গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে রয়েছি, তার ফলে পরীক্ষা, কোয়ারানটাইন ও চিকিত্সাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সবটাই বদলে যাবে। উদাহরণস্বরূপ ওমিক্রণ বিপজ্জন কিন্তু ডেল্টার তুলনায় কম। তাই আমাদের লক্ষ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালগুলিকে স্বাস্থ্যের কাঠামো উন্নত করা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে একটি মানুষ যতবেশি সংক্রামিত , য়ে তত বেশিই সংক্রমণযোগ্য। তাই দ্রুততার সঙ্গে আমরা রেকর্ডও তৈরি করতে পারি। আবার দ্রুত বেগে আক্রান্তের সংখ্যাও কমাতে পারি।
সমস্ত ভাইরাল অতিমারিঅ একটা সময়ে শীর্ষে পৌঁছে মারা যায়। কারণ সংক্রামিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সংবেদনশীল ব্যক্তি তারপর আর বাকি থাকে না। যখই আপনি একটি গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে থাকেন, তখন আপনার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই থাকবে এই রেকর্ডটি স্থগিত করা। জিনিসগুলিতে ধীরে ধীরে নিম্নগামী করা ও যত্নের প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এছাড়া সুযোগ-সুবিধাগুলিকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে। যো কোনও দরকারি জিনিস পেতে যেন বেশি ছোটাছুটি করে হয়রান হতে না হয়। এমন নয় যে শুধুমাত্র হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদেরই সনাক্ত বা পরীক্ষা করাতে হবে। এটা স্বীকার করে নিতে হবে আমরা সকলেই এখন গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে রয়েছি। আর তার জন্য অন্য পদ্ধতিতে কাজ শুরু করা দরকার।
আমরা সকলেই যে গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যে রয়েছি, তা নীতিনির্ধারকরা কেন এটা মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করছেন?
– সমস্যা হচ্ছে কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। সমস্যা হল আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে টিকমত প্রাধান্য দিচ্ছি কিনা। এমন অনেক সংক্রমণ রয়েছে যা আমাদের একেবারে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম নয়। এক অর্থে, এটা স্বীকার করতে হবে যে আগের তুলনায় ভাইরাসের ভয়াবহতা কমে গিয়ে এক ধাপ ভালোর দিকে গিয়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ বন্ধ করা উপায় তবে নেই। একবার আমরা এটি গ্রহণ করলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আরও প্রসারিত হবে। ওমিক্রন-ডেল্টা ভেরিয়েন্ট এখন গোষ্ঠী সংক্রমণ রয়েছে বলে সরকারি সংস্থাগুলিকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার দরকার নেই। তাতে কোনও উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। কিন্তু এটি কীভাবে দূর করা যায়, সমস্যাগুলিকে কীভাবে সমাধান করা যায় তার কৌশল বের করা সম্ভব। যদি এটা আমরা না ভাবি তাহলে এই সমস্যা যে সম্পূূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয়, তা আশা করতেই পারি। আমাদের দেশের একটি বিশাল পরিমাণ টাকা শুধুমাত্র পরীক্ষা করাতেই ব্যয় করে ফেলেছিষ তাই যখন গোষ্ঠী সংক্রমণ রয়েছে, তখন সেই পরীক্ষাগুলির উপর নজরদারি করা উচিত। আমরা সৌভাগ্য যে INSACOG আছে, তার সিকোয়েন্সিং হল সেই পদ্ধতি যা তারা ব্যাপকভাবে নিযুক্ত করেছে। যদি নীতি নির্ধারকরা বলে যে ভারতে কোন সিটি নেই, তাহলে এই প্রতিটি কেস কোথা থেকে আসছে তা ট্র্যাক করার জন্য সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করা হত এবং তারপরে এটি বন্ধ করার চেষ্টা করা হত। যদি তা না হয়, তাহলে স্পষ্টতই আমরা জানি যে আমরা সিটিতে আছি কিন্তু এটা মেনে নিতে প্রস্তুত নই। পদ্ধতিটি একটি মানসিক পদ্ধতি। আমি এটিকে গোষ্ঠী সংক্রমণ হিসাবে গ্রহণ করব কিনা তা প্রশ্ন নয়। গোষ্ঠী সংক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত এবং সেই হিসেবে কৌশল অবলম্বন করা উচিত।