Robotic surgery: একটা কিডনি নেই, জানতেনই না রোগী, কীভাবে বাজিমাৎ করল কৃত্রিম হাত?
Kidney Problem: চিকিৎসকদের কাছে পুরো অপারেশনটাই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিডনিকে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে টিউমারটি বের করে এনে সেলাই পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না
১৫ বছরের দীপালি আজ থেকে ২ বছর আগেও জানতেন না যে তিনি মাত্র একটা কিডনি নিয়েই বেঁচে আছেন। ছোট থেকেই দীপালির বাঁ দিকের কিডনিতে একটা ব্যথা ছিল। তবে সেই ব্যথা খানিকটা চিমটির মতো, ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হত না। এই নিয়ে বহু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছে দীপালির পরিবার। হঠাৎ করেই দীপালির ব্যথা বাড়তে থাকে। এরপর যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়, তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন দীপালির শরীরে কিছু অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে। ওর ডানদিকের কিডনির কোনও অস্তিত্ব নেই, মাত্র একটাই কিডনি আছে (বাঁ দিকে)। অর্থাৎ এতদিন দীপালি একটা কিডনি নিয়েই বেঁচে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্গে কিডনিতে একটা সিস্টও ছিল টেনিস বলের আকারের, যা এতদিন ধরা পড়েনি। এরপর নয়াদিল্লির BLK-ম্যাক্স সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষ এক ধরনের রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে সিস্টটি বাদ দেওয়া হবে। অবশেষে অস্ত্রোপচার সফল হয় এবং দীপালিকে কিডনি প্রতিস্থাপন এড়িয়ে নতুন একটি জীবন দেন চিকিৎসকেরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং সার্জন ডাঃ সুরেন্দর দাবাস যেমন বলেছেন, “আমার ৩০ বছরের কেরিয়ারে সবচেয়ে জটিল সার্জারি ছিল এটা। দীপালি একটা মাত্র কিডনি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। ডান দিকের কিডনি তার ছিলই না। সেই জায়গায় ছিল 10X10 সেমি মাপের বিশাল বড় একটি সিস্ট। যে সিস্টটির জন্য দ্রুত অস্ত্রোপচারের দরকার ছিল। সিস্টের অবস্থানগত ত্রুটির কারণে তা মূত্রনালী, রেনাল ধমনী এবং শিরাগুলির উপর চেপে বসে গিয়েছিল। এর ফলে তার পুরো রেচনতন্ত্রই জটিল অবস্থায় ছিল। ঠিকমতো কাজ করতে পারত না।” এমনভাবেই একটার উপর আরেকটা শিরা চেপে ছিল, যেখান থেকে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল। যেহেতু একটিমাত্র কিডনি তার, তাই যদি কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হত, তাহলে জীবন আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে যেত। চিকিৎসকদের কাছে পুরো অস্ত্রোপচারটাই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিডনিকে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে টিউমারটি বের করে এনে সেলাই পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা আদৌ সহজ কাজ ছিল না।
অস্ত্রোপচারের সময় কিছু সময়ের জন্য রেনাল ধমনী বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল। মাত্র ১২-২০ মিনিটের ব্যবধানে পুরো অস্ত্রোপচারটাটি করা হয়েছে। এই কঠিন অস্ত্রোপচারের জন্য পদ্ধতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল রোবোটিক সার্জারি অর্থাৎ । কৃত্রিম হাতের উপর এই জটিল অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব দেওয়া না-হলে এত সূক্ষ্মভাবে তা করা সম্ভব হত না। একমাত্র রোবোটিক সার্জারি করা হয়েছিল বলেই কিডনি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ডাঃ সুরেন্দর দাবাস গত ২০ বছর ধরে ক্যানসার সার্জারি এবং ১০ বছর ধরে রোবোটিক সার্জারির সঙ্গে যুক্ত। তবে এই ৩০ বছরে তিনি দীপালির মতো এমন জটিল কোনও কেসের সম্মুখীন হননি। সার্জারি বিষয়ে ডাঃ দাবাস আরও বলেন, ‘দীপালির ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কোপিক সার্জারির সুযোগ ছিল না, যা আমরা এমন কেসে করে থাকি। এক্ষেত্রে ফায়ারফ্লাই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সিস্টের অংশ সুস্পষ্ট করতে Dye পাঠানো হয়। এর ফলে ডাক্তারটা একটি সুস্পষ্ট ছবি পান। এবার রোবোটিক হাতের সাহায্যে খুব নির্ভল ভাবে প্রয়োজনীয় অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। যা সাধারণ অপারেশনে সম্ভব ছিল না’।
রোবোটিক সার্জারির সাহায্য নিয়ে প্রথমে সিস্টটিকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর রেচনতন্ত্রের কাঠামো, রক্তনালী, মূত্রনালী অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করে পর পর সব জোড়া হয়। দীপালির এই অপারেশন না হলে ভবিষ্যতে আরও একাধিক জটিলতা আসতে পারত। হতে পারত ইউরোনেফ্রোসিস। যেখান থেকে কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে যেতে পারত। আজকাল যে কোনও জটিল এবং সূক্ষ্ম সার্জারির ক্ষেত্রে এই রোবোটিক সার্জারিরই সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।