Sleep Paralysis: অবশ শরীরে কে যেন বুকে চেপে বসে আছে! ঘুমের মধ্যে এমন কেন হচ্ছে জানেন?

Sleeping: স্লিপ হাইজিন রক্ষা করা, মানসিক সমস্যা থাকলে তার সঠিক চিকিৎসা করানোও প্রয়োজন। স্লিপ প্যারালাইসিস-এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার এগুলিই একমাত্র উপায়।

Sleep Paralysis: অবশ শরীরে কে যেন বুকে চেপে বসে আছে! ঘুমের মধ্যে এমন কেন হচ্ছে জানেন?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 02, 2022 | 11:38 PM

অজান্তে কে যেন অ্যানাস্থেটিক ড্রাগ ঢুকিয়ে দিয়েছে রক্তে! হাত তো দূরস্থান, সামান্য আঙুল নাড়ানোর মতো অবস্থাও নেই! অথচ চেতনা লুপ্ত হয়নি! পাশ ফেরাও যেন অসম্ভব! হার্টবিট বাড়ছে লাফিয়ে। কে যেন বুকের ওপর বসে আছে চেপে! প্রচণ্ড আতঙ্কে চিৎকার করাও সম্ভব হচ্ছে না। কী আশ্চর্য কথা বলার ক্ষমতাও যেন চলে গিয়েছে— ঘুম (Sleeping) আসার আগে কিংবা ঘুম ছিন্ন হওয়ার সময় কি আপনারও এমনই অনুভূতি হয়? একাধিকবার এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ইতিমধ্যেই? জানেন কি এই সমস্যাকে বলে স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis ) ! অস্থায়ী এই সমস্যায় ভুগছেন প্রায় ১ কোটি মানুষ!

দুই ধরনের স্লিপ প্যারালাইসিস আছে। ক) কোনও ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়ার পর হতে পারে হিপনোগজিক স্লিপ প্যারালাইসিস। খ) ঘুম থেকে ওঠার সময়ে হতে পারে প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস। স্লিপ প্যারালাইসিস সমস্যাটি জীবনসংশয়ী না হলেও, কিছু মানুষের বুকে চাপ ও দমবন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। স্লিপ প্যারালাইসিস-এর সময় হঠাৎ করেই শরীর চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়া এবং কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার মতো অনুভূতি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত নারকোলেপ্সির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই ধরনের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। এছাড়া ঘুম কম হওয়া, মাইগ্রেন কিংবা উদ্বেগে ভোগা ব্যক্তিদেরও এমন অভিজ্ঞতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া নিয়মিত মদ্যপান করেন এমন লোকও স্লিপ প্যারালাইসিসে ভুগতে পারেন। তবে সমস্যাটি যে কারও হতে পারে। দেখা গিয়েছে, সারাবিশ্বের ৮ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ তাঁদের জীবৎকালের কোনও না কোনও সময়ে এহেন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন!

স্লিপ প্যারালাইসিসের উপসর্গ

গভীর ঘুম থেকে আধ জাগা অবস্থায় হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা বাকশক্তিরহিত হওয়া কিন্তু স্লিপ প্যারালাইসিসের মূল লক্ষণ নয়। কেউ কেউ স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় গুঞ্জন ধ্বনি, হিসহিস শব্দ বা একটানা বিদ্যুৎ-এর তারে ঘষা লাগার আওয়াজ শুনতে পান বলেও দাবি করেছেন। কেউ কেউ আবার কারও গলার আওয়াজ কিংবা ফিসফিস করে কথা বলার শব্দও শোনেন! চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও কোনও ব্যক্তি দাবি করেন যেন তার বুকে কেউ বসে আছে! মাথায় তীব্র ব্যথার মতো লক্ষণের কথাও কেউ কেউ বলে থাকেন।

এই ধরনের লক্ষণগুলি সাধারণত তীব্র আতঙ্কের মতো আবেগের সঙ্গেও যুক্ত থাকে। কেউ কেউ বলেন, তাঁদের মনে হয় কে যেন তাঁদের বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে দিচ্ছে। সারা শরীরে যেন বয়ে যাচ্ছে মৃদু বিদ্যুতের তরঙ্গ। স্লিপ প্যারালাইসিস-এর সমস্যার সাধারণত রোগীরা নিজেরাই বুঝতে পারেন। সাধারণত ২ থেকে ৩ মিনিট অবধি স্লিপ প্যারালাইসিস-এর অবস্থা বজায় থাকে। সাধারণত গভীর ঘুমে এলিয়ে পড়া কিংবা তীব্র আতঙ্কে জেগে ওঠার মধ্যে দিয়ে সমগ্র পর্বটির অন্ত হয়। অবশ্য কেউ কেউ স্লিপ প্যারালাইসিসের পরে অলীক কিছু প্রত্যক্ষ করা, উদ্বেগ বোধ করার মতো অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন।

কেন হয়?

একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়ার পরেও তাঁর ব্রেনের একটা অংশ তখনও সক্রিয় থাকলে এমন ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কেন স্লিপ প্যারালাইসিস-এর ঘটনা ঘটে তা পরিষ্কারভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কিছু বিষয়ের সঙ্গে স্লিপ প্যারালাইসিসের যোগ মিলেছে—

• ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ।

• প্রতিদিন সঠিক সময়ে ঘুমাতে না যাওয়ার মতো ঘটনা।

• নারকোলেপ্সি (এই সমস্যায় একজন ব্যক্তির ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার চক্র বিঘ্নিত হয়ে যায়। ফলে কোনও ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর পরেও দিনে উঠে প্রবল শ্রান্ত অনুভব করেন। এমনকী কথা বলতে বলতে বা মিটিং চলতে চলতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়তেও দেখা যেতে পারে ওই ব্যক্তিকে!)।

• পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার ( কোনও দুর্ঘটনার পরে সেই ঘটনার রেশ মনে দীর্ঘদিন ধরে থেকে যাওয়ার ফলে উদ্ভূত উদ্বেগ)।

• উদ্বেগজনিত রোগ।

• প্যানিক ডিসঅর্ডার।

• বংশে স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার ইতিহাস থাকলে।

চিকিৎসা

স্লিপ প্যারালাইসিস দৈনন্দিন জীবনযাপনে কতখানি প্রভাব ফেলছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা। প্রধান চিকিৎসা হল, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এছাড়া ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করাও অন্যতম চিকিৎসা। স্লিপ হাইজিন রক্ষা করার জন্য, রোজ রাতে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। এছাড়া সঠিক সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে ও সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বেড রুমে কোনও চড়া আলো জ্বললে চলবে না। আশপাশে চড়া শব্দ হলেও চলবে না। এছাড়া ঘুম থেকে ওঠার সময় মুখে যেন সূর্যালোক পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সারাদিনের মধ্যে কিছুটা সময় গায়ে একটু রোদও লাগাতে হবে।

সন্ধেবেলায় কোনও ভারী খাবার খাওয়া যাবে না। সেইসঙ্গে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে ডিনার সেরে ফেলাও জরুরি। যতটা সম্ভব সন্ধেবেলা মদ্যপান, কফি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন আধঘণ্টা এক্সারসাইজ করতেই হবে। তবে ঘুমাতে যাওয়ার ঘণ্টাদুয়েক মধ্যে কোনওরকম শরীরচর্চা করা যাবে না।

মনে রাখবেন—

এগুলির সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন, স্লিপ প্যারালাইসিসের পিছনে অন্যান্য অসুখ যেমন নারকোলেপ্সি কিন্তু স্লিপ প্যারালাইসিস-এর পর্বের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। স্লিপ হাইজিন রক্ষা করা, মানসিক সমস্যা থাকলে তার সঠিক চিকিৎসা করানোও প্রয়োজন। স্লিপ প্যারালাইসিস-এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার এগুলিই একমাত্র উপায়।