Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বিশ্লেষণ: ভারতেও হানা ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়েন্টের, কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে করোনার নতুন প্রজাতি?

কেবল মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতেই ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠাতেই ৫ জন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের খোঁজ মেলে।

বিশ্লেষণ: ভারতেও হানা 'ডেল্টা প্লাস' ভ্যারিয়েন্টের, কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে করোনার নতুন প্রজাতি?
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 21, 2021 | 2:04 PM

মু্ম্বই: দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও চিন্তা বাড়ছে ভাইরাসের নতুন নতুন প্রজাতি নিয়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আরও অভিযোজিত হয়ে পরিণত হয়েছে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে। দেশে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে মোট ২০ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলল। এরমধ্যে ৮ জনই আবার মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর থেকেই দীর্ঘ দেড় বছরে বিভিন্ন দেশে নানা রূপে অভিযোজিত হয়েছে এই ভাইরাস। এরমধ্যে ভারতে প্রথম যে প্রজাতির খোঁজ মেলে, তা ছিল বি.১.৬১৭.২, যাকে এক কথায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও বলা হয়। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য এই ভ্যারিয়েন্টই দায়ী বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেও আরও অভিযোজন হয়ে তৈরি হয়েছে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট, যা আরও বেশি সংক্রামক বলেই মনে করা হচ্ছে।

ডেল্টা প্লাসের উৎপত্তি:

নতুন ডেল্টা প্লাস বা বি.১.৬১৭.২.১ ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি হয়েছে অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন থেকেই। আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যে এন৫০১ওয়াই মিউটেশন হয়েছিল, তার সঙ্গে নতুনভাবে কে৪১৭এন মিউটেশনও হয়েছে, অর্থাৎ নতুন ডেল্টা প্লাসে ভাইরাসের দুটি অভিযোজিত রূপই রয়েছে।

কোথায় প্রথম খোঁজ মেলে?

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ ভারতেই প্রথম মিললেও ডেল্টা প্লাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। চলতি বছরের মার্চের শেষভাগে ইউরোপে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলে। গত ১৭ জুন অবধি  ভারত সহ গোটা বিশ্বে ৬৩জনের খোঁজ মেলে, যাঁরা এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। তবে সম্প্রতিই জানা যায়, ভারতে মোট ২০ জনের দেহে এই ভ্যারিয়েন্টের হদিস মিলেছে।

দেশে ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণ নিয়ে ন্যাশনাল সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর ডঃ সুজিত সিং বলেন, “তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ সহ একাধিক রাজ্য থেকে মোট ১৫-২০জন ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। করোনার এই প্রজাতিটি নতুন হওয়ায় এর উপর আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শক্তিশালী ও অতি সংক্রামক হওয়ায় এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে।”

কতটা চিন্তার কারণ এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট?

বিশেষজ্ঞদের চিন্তার অন্যতম কারণ এই ভ্য়ারিয়েন্টের দুটি মিউটেশন। সাধারণ ভাইরাসে যত অভিযোজন ঘটে, ততই তা আরও সংক্রামক রূপ ধারণ করে। সে ক্ষেত্রে ডেল্টা প্লাস যেহেতু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা অভিযোজিত প্রজাতি, তাই তা অধিক সংক্রামক হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। অ্যান্টিবডি ককটেল, যা সংক্রমণ রুখতে দারুণ ফল দেখিয়েছে, তাকেও হার মানাতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট।

যদিও জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ডঃ ভিকে পাল এখনই এই ভ্য়ারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার পক্ষে নন। তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ান সার্স কোভ-২ জিনোমিক কনসার্টিয়া (INSACOG)-র মাধ্যমে  আমরা এই ভ্য়ারিয়েন্টের অস্তিত্ব ও বৃদ্ধির উপর কড়া নজর রাখছি। এত ভাইরাল মাত্রা কত বা কতটা সংক্রামক এই নতুন ভ্য়ারিয়েন্ট, সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি এখনও। যতদিন অবধি এই তথ্যগুলি মিলছে না, ততক্ষণ অবধি এই ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের কারণ বলা যায় না।”

অন্য়দিকে, ন্যাশনাল সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর ডঃ সুজিত সিং জানান, বর্তমানে ইন্ডিয়ান সার্স কোভ-২ জিনোমিক কনসার্টিয়ায় ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণ ক্ষমতা ও প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে যে নমুনাগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা পরীক্ষা করা হবে। তিনি জানান, ইউরোপে মার্চ মাসেই এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিললেও গত ১৩ জুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জনসমক্ষে ঘোষণা করা হয়। আগামী দু-একদিনের মধ্যে কেন্দ্রের তরফেও ভারতে খোঁজ মেলা প্রথম ছয়টি ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ঘোষণা করা হবে।

মহারাষ্ট্রের উপর বিশেষ নজর:

জানা গিয়েছে, কেবল মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতেই ৫ জন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠাতেই এই পাঁচজনের খোঁজ মেলে। এরপর জুন মাসে ফের বেশ কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, সেখানে তিন জনের জিনোমে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

মহারাষ্ট্রের আক্রান্ত আটজনের বিষয়ে চিকিৎসক টিপি লাহানে বলেন, “ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত আটজনেরই মাঝারি উপসর্গ ছিল। তাঁরা সকলেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বিগত এক মাস ধরে জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি হলেও ডেল্টা প্লাস সংক্রমণের হদিস মেলেনি।”

আরও পড়ুন: ৫৩ হাজারে নেমে এল দৈনিক সংক্রমণ, আজ থেকেই শুরু হচ্ছে ১৮ উর্ধ্বদের বিনামূল্যে টিকাকরণ