ডিসেম্বরের মধ্যেই ভারতে মিলবে এই ৮ টিকা! জেনে নিন সবকটি ভ্যাকসিনের বৃত্তান্ত

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষেই ভারতে কমপক্ষে ২০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ় উপলব্ধ হবে। কিন্তু কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে সামনে উঠে এসেছে মূল আটটি ভ্যাকসিনের নাম।

ডিসেম্বরের মধ্যেই ভারতে মিলবে এই ৮ টিকা! জেনে নিন সবকটি ভ্যাকসিনের বৃত্তান্ত
অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: May 15, 2021 | 4:16 PM

নয়া দিল্লি: টিকার হাহাকার দেশজুড়ে। ফোনের কলারটিউন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার, সকল মহল থেকেই সর্বদা টিকা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু টিকা কোথায়? এই পরিস্থিতি টিকার জোগান সামাল দিতে অন্যান্য সংস্থারও মুখাপেক্ষি হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। শুক্রবার থেকেই হায়দরাবাদে রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন দেওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী মাস থেকে আরও একাধিক সংস্থার ভ্যাকসিনের প্রয়োগ প্রক্রিয়াও ধীরে ধীরে শুরু হতে চলেছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষেই ভারতে কমপক্ষে ২০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ় উপলব্ধ হবে। কিন্তু কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে সামনে উঠে এসেছে মূল আটটি ভ্যাকসিনের নাম। যা ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই ভারতে পাওয়া যাবে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই আট ভ্যাকসিনের সাত সতেরো….

২০২১-এর মধ্যে ভারতের ভাঁড়ারে কোন টিকার কত ডোজ়?

Vaccine-1

অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস

কোভিশিল্ড

অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিন বর্তমানে তৈরি করছে সেরাম ইন্সটিটিউট। পৃথিবীর বৃহত্তম এই ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থার তৈরি টিকাতেই বেশিরভাগে চাহিদা মিটছে ভারতের। দুই ডোজ়ের ব্যবধান কমপক্ষে তিন মাস করে দিলে এর কার্যকারিতার হার ৯০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে উল্লেখ পেয়েছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের রিপোর্টে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই কমপক্ষে ৭৫ কোটি কোভিশিল্ড তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সেরাম।

কোভ্যাক্সিন

স্বদেশি এই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথমে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও এখন তা কেটে গিয়েছে। এই ভ্যাকসিন আজীবন রক্ষাকবচ দিতে সক্ষম কি না সেটা জানতে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ভারত বায়োটেকের তরফে জানানো হয়েছে, দুই ডোজ় একমাসের ব্যবধানে প্রয়োগ করলে এর কার্যকারিতার হার কমপক্ষে ৮১ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। চলতি বছরের মধ্যেই ৫৫ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ় তৈরি করার টার্গেট নিয়েছে ভারত বায়োটেক।

স্পুটনিক

পৃথিবীর প্রথম করোনা টিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা রাশিয়ার এই ভ্যাকসিন ভারতের তৃতীয় করোনা ভ্যাকসিন হিসেবে প্রয়োগ করা শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে। এই ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ়ের কার্যকারিতার হার প্রায় ৯২ শতাংশ। খুব শিগগির দেশেও স্পুটনিক উৎপাদন শুরু হবে। এই ভ্যাকসিনের আরেকটি সংস্করণ রয়েছে যা স্পুটনিক লাইট হিসেবে পরিচিত। এর একটি ডোজ়ই করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড় তুলতে সক্ষম বলে দাবি প্রস্তুতকারকদের। বছরের শেষে অন্তত ১৫.৬ কোটি স্পুটনিকের ডোজ় তৈরির বিষয়ে আশাবাদী নির্মাণকারী সংস্থাও।

নোভাভ্যাক্স

মার্কিন সংস্থার এই করোনা টিকা তৈরিরও বরাত নিয়েছে সেরাম ইন্সটিটিউট। ভারতে এই ভ্যাকসিন বিক্রি হবে কোভোভ্যাক্স নামে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এর কার্যকারিতার হার ৯৬.৪ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। যা শেষ হলে এই বছরের শেষে কম করে ২০ কোটি ডোজ় কোভোভ্যাক্স তৈরি করতে পারবে বলে জানিয়েছে সেরাম।

ন্যাজাল ভ্যাকসিন (ভারত বায়োটেক)

কোভ্যাক্সিন ছাড়াও আরও একটি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চালাচ্ছে ভারত বায়োটেক। তবে এটি সূচ এবং সিরিঞ্জের মাধ্যমে নয়, শুধুমাত্র ড্রপারের মাধ্যমে নাকে দিলেই হবে। এর কমপক্ষে ১০ কোটি ডোজ় এই বছরের মধ্যেই তৈরির বিষয়ে আশাবাদী এই সংস্থা। যদিও বর্তমানে এই প্রতিষেধকের ট্রায়াল প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকবে বলে আগে থেকেই ভারত বায়োটেক জানিয়েছে রেখেছে। তবে অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় এটা অনেকটাই সস্তা হবে।

বায়ো ই-সাব ইউনিট ভ্যাকসিন

হায়দরাবাদের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা বায়োলজিক্যাল ই লিমিটেডের এই ভ্যাকসিনের এখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। আগামী অগস্ট মাসেই এই টিকা ভারতের বাজারে চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ৩০ কোটি ডোজ় ভারতের বাজারে চলে আসবে।

জাইডাস ক্যাডিলা ডিএনএ ভ্যাকসিন

আহমেদাবাদের সংস্থা জাইদাস ক্যাডিলার ভ্যাকসিন আগামী মাসেই ভারতের বাজারে চলে আসতে পারে বলে খবর। বর্তমানে ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর এর তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। মে মাসের শেষেই ভারতীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড এই ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়ে দিতে পারে, এমন ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছে। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের পর এটি হতে চলেছে দ্বিতীয় স্বদেশি টিকা। প্রতি মাসে কমপক্ষে এক কোটি ডোজ় উৎপাদনের মাধ্যমে বছরের শেষে ৫ কোটি ডোজ় ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে আশাবাদী এই সংস্থাও।

জেনোভা এমআরএনএ ভ্যাকসিন

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তৃতীয় স্বদেশী ভ্যাকসিন হতে পারে পুনের সংস্থা জেনোভা বায়োফার্মাসিউটিক্যালসের এমআরএনএ ভ্যাকসিন। গত ডিসেম্বর মাসেই মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমতি পেয়ে গেলেও এখনও তা শুরু করে উঠতে পারেনি এই সংস্থা। তবে তারা আশাবাদী, এই কম সময়ের মধ্যেই ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে বছরের শেষে অন্তত ৬ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ় তৈরি করা সম্ভব হবে।