ঘরেও পরতে হবে মাস্ক! রোগীর কেমন অবস্থায় নেবেন কী ব্যবস্থা? জারি নতুন গাইডলাইন

মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে রোগীদের। হালকা, মাঝারি এবং গুরুতর অসুস্থ যারা, প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুই শীর্ষ চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে।

ঘরেও পরতে হবে মাস্ক! রোগীর কেমন অবস্থায় নেবেন কী ব্যবস্থা? জারি নতুন গাইডলাইন
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Apr 23, 2021 | 4:58 PM

নয়া দিল্লি: সংক্রমণের সুনামি কম হওয়ার কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে প্রত্যেকদিনই উত্তরোত্তর নতুন রেকর্ড গড়ছে নোবেল করোনাভাইরাস। সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে নিজেকে অভিযোজিত করে নতুন রূপেও ধরা দিচ্ছে এই তা। শুক্রবারে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছাপিযে গিয়েছে ৩ লক্ষের বেশি। এই অবস্থায় কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন গাইডলাইন জারি করেছে দিল্লির এইমস এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চ তথা আইসিএমআর।

গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবিত হয়েছিলেন বেশি বয়সের মানুষ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কমবয়সী যুবক যুবতীদেরও নিজের কবলে নিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে এইমস এবং আইসিএমআর-এর পক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন জারি করে বলা হয়েছে, কীভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে হবে। মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে রোগীদের। হালকা, মাঝারি এবং গুরুতর অসুস্থ যারা, প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুই শীর্ষ চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে।

হালকা উপসর্গের ক্ষেত্রে কী করণীয়…

নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তির শরীরে করোনার হালকা উপসর্গ দেখা যায় তবে ততক্ষণাৎ হোম আইসোলেশন চলে যেতে হবে। এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক এবং ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরে থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যাতে বজায় থাকে এবং ঘরের ব্যবহৃত জিনিসগুলি যাতে স্যানিটাইজ করা হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। যদি নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয় এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

মাঝারি উপসর্গ হলে কী করবেন…

যদি কোন ব্যক্তির মাঝারি উপসর্গ দেখা যায়; অর্থাৎ জ্বর, গা হাত পা ব্যথা-সহ নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়াই শ্রেয়। হাসপাতালে যদি শয্যা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা মেপে নেওয়া আবশ্যক। ওই সময়ের মধ্যে যে কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আক্রান্তের বুকের এক্সরে করে সেটাও চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করা উচিত…

যদি কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তাকে অবিলম্বে আইসিইউতে ভর্তি করাতে হবে। যতক্ষণ না আইসিই-তে তাঁকে ভর্তি করা যায়, ততক্ষণ নিরন্তর অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনও রোগীকে কী ওষুধ দেওয়া যায় সেটাও এদিনের নতুন গাইডলাইনে উল্লেখ করেছে এইমস ও আইসিএমআর। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধই যেন ব্যবহার না করা হয়, এটাও বলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’, কতটা ভয়ঙ্কর এই ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’?

যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতেই হবে…

সামান্য বা হালকা উপসর্গের রোগীদের শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত। যদি অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নীচে নেমে যায়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, বা অক্সিজেনের নেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। কোনওভাবে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নীচে নেমে গেলে তা অত্যন্ত সংকটজনক। এই অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন।

বয়স ৬০-এর বেশি, তার সঙ্গে যাদের ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, রক্তচাপ, হাইপারটেনশন, ফুসফুসের সমস্যা বা লিভারের কোনও জটিলতা রয়েছে, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এমন রোগীদের মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। তাই এই ধরনের কোমর্বিডিটি যাদের রয়েছে, তাঁদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে রেমডেসিভিরের চাহিদা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেলেও নতুন গাইডলাইনে জানানো হয়েছে, এই ইঞ্জেকশন তাঁদেরই দেওয়া যাবে যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ডিএ বাড়বে না কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের, মিলবে না বকেয়াও, করোনার ধাক্কায় পকেটে কোপ

দেশে যেভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, এই অবস্থার কথা মাথায় রেখে শুক্রবার এই নতুন গাইডলাইন জারি করেছে এইমস এবং আইসিএমআর। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যদি কারোর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয় তবে সবার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। নিজেই নিজের চিকিৎসা করতে যাবেন না। হালকা উপসর্গের ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় চিকিৎসা করা হলেও তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করাই কাম্য।