যুদ্ধবিমান নিয়ে চিনের ধাপ্পাবাজি ফাঁস করলেন ভারতের বায়ুসেনা প্রধান!
গত ডিসেম্বরে চিনের আকাশে দুটি জে-৩৬ যুদ্ধবিমানের ছবি ফলাও করে সে দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। সেই ছবি দেখে দুনিয়া জুড়ে হইচই পড়ে যায়। বেজিং দাবি করে এগুলি সিক্সথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান।

বছরের গোড়ার দিকেই লালফৌজ হুঙ্কার দিতে শুরু করেছিল, বেজিংয়ের হাতে নাকি এসে গেছে সর্বাধুনিক সিক্সথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান। যুদ্ধ বাঁধলে আকাশে নাকি চিনকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা আর কারও নেই। চিনা সেনার এই দাবি ফলাও করে প্রকাশ করে চিনা সংবাদমাধ্যমও। কিন্তু সেসব প্রচারকে ঢক্কানিনাদ বলে কার্যত উড়িয়ে দিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার চিফ অফ দ্য এয়ার স্টাফ এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। স্পষ্ট করলেন, ভাঁড়ারে শুধুমাত্র যুদ্ধবিমান থাকাটাই যথেষ্ট নয়। দরকার উপযুক্ত রণকৌশলও। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ নিয়ে অযথা বেশি হইচই হচ্ছে বলেও তাঁর মত।
ভারতের কাছে এই মুহূর্তে ফোর্থ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান রয়েছে। চিনের সঙ্গে কি টেক্কা দিতে পারবে ভারত? এই প্রশ্নের উত্তরে বায়ুসেনার চিফ অফ দ্য এয়ার স্টাফ বলেন, ”চিন দাবি করছে তাদের নাকি সিক্সথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান রয়েছে। যদিও সেই দাবি কতটা সত্যি, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সিক্সথ জেনারেশন নামে একটা যুদ্ধবিমান রয়েছে আর সেটা উড়তে পারে, এটাই সব নয়। তার দক্ষতা থাকতে হবে। বিভিন্ন রকমের কার্যকারিতা থাকতে হবে। তাকে যুদ্ধের ময়দানে নামার মতো দক্ষ হতে হবে।”
এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংয়ের মতে, যুদ্ধের মতো পরিস্থিতে পড়লে শুধু প্রযুক্তি বাঁচাবে না, বাঁচাবে উপস্থিত বুদ্ধি ও দক্ষতা। প্রতি মুহূর্তে রণকৌশল বদলাতে হয়। ভারতের কাছে সিক্সথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান এখনই না থাকলেও ভারতীয় বায়ুসেনার দক্ষতা সিক্সথ জেনারেশনের মতোই। চিনের মোকাবিলা করতে সেটাই যথেষ্ট বলেও কার্যত হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন বায়ুসেনা প্রধান। তাঁর পরামর্শ, প্রযুক্তিগত ফারাক মেটাতে হলে আধুনিক রণকৌশলকে হাতিয়ার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সিক্সথ জেনারেশন ক্রিউ রয়েছে। চিনের মোকাবিলায় সেটাই যথেষ্ট। আমরা আকাশে বুঝে নিতে পারব।’

ভাইরাল চিনা যুদ্ধবিমানের সেই ছবি
সহজ করে বললে, যুদ্ধবিমানের জেনারেশন যত বাড়ে, সেগুলি ততই আধুনিক হয়ে ওঠে। যেমন ভারতের কাছে রয়েছে ফোর্থ জেনারেশনের রাফাল, তেজস। হ্যাল তৈরি করছে ফিফ্থ জেনারেশনের অ্যামকা বা অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট। চিনের কাছে দু’রকমের ফিফ্থ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান রয়েছে। একটি চেংডু জে-২০ ও আরেকটি শেনইয়াং জে-৩৫। চিনের দাবি এগুলি ফিফ্থ জেনারেশনের মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর চেয়ে বেশি কার্যকরী। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্তারা।
তাঁদের দাবি, চিনা মিডিয়া বরাবরই কমিউনিস্ট পার্টির প্রোপাগান্ডাকে প্রচার করে। গত ডিসেম্বরে চিনের আকাশে দুটি জে-৩৬ যুদ্ধবিমানের ছবি ফলাও করে সে দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। সেই ছবি দেখে দুনিয়া জুড়ে হইচই পড়ে যায়। বেজিং দাবি করে এগুলি সিক্সথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা চিনের দাবিকে উড়িয়ে না দিলেও এটাও মানছেন যে চিন, অধিকাংশ সময়ই ফাঁপা প্রচার করে বিরোধীদের চাপে রাখতে চায়। এটাও আধুনিক রণকৌশলের একটা অংশ যাকে বলে মাইন্ড গেম। এই মুহূর্তে ভারত ও আমেরিকা দুই দেশই চিনা বায়ুসেনার সক্ষমতার উপর কড়া নজর রেখে চলেছে। তবে আত্মতুষ্টির যে কোনও জায়গা নেই সেটাও স্পষ্ট করে, হ্যালকে যুদ্ধবিমান তৈরিতে দেরি করার জন্য বকাঝকাও করেন বায়ুসেনা প্রধান।





