Arvind Kejriwal: মাত্র সাড়ে দশ বছরেই আঞ্চলিক দল থেকে জাতীয় দল আপ, ‘বিস্ময়কর’ বললেন কেজরীবাল
Arvind Kejriwal: গতকাল নির্বাচন কমিশনের তরফে আপকে জাতীয় দলের তকমা দেওয়া হয়েছে। এরপরই অরিবন্দ কেজরীবাল বলেন, 'বিস্ময়কর'।
নয়া দিল্লি: জাতীয় দলের তকমা পেল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। সোমবার নির্বাচন কমিশনের তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পরই আপের জাতীয় আহ্বায়ক তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরিবন্দ কেজরীবালের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘এটি বিস্ময়কর ঘটনা’। তিনি এর জন্য দলীয় কর্মীদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন। আর বলেছেন, “এত কম সময়ে এই প্রাপ্তি বিস্ময় ছাড়া আর কিছু নয়।”
গতকাল নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দিল্লি, গোয়া, পঞ্জাব ও গুজরাট-এই চার রাজ্যে নির্বাচনী পারফরমেন্সের ভিত্তিতে আপকে জাতীয় দলের তকমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনের এই বিবৃতির পরই আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, দেশের জনগণ অনেক বড় দায়িত্ব দিল।
কেজরীবালের প্রতিক্রিয়া:
নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত আপ নেতারা। কেজরীবাল হিন্দিতে টুইটে লেখেন, “এত কম সময়ে জাতীয় দল? এটি একটি অলৌকিক ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়। সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন। দেশের কোটি কোটি মানুষ আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। মানুষ আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেন। জনগণ আজ আমাদের এই বিশাল দায়িত্ব দিয়েছে। ভগবান আমাদের এই দায়িত্বটি ভালভাবে পালন করার জন্য আশীর্বাদ করুন।”
এদিকে দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “এটা আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয়। জনগণের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব হত না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা চাই ঈশ্বর অরবিন্দ কেজরীবালকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিক।”
ভগবন্ত মানের প্রতিক্রিয়া:
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান টুইটে জানান, “আম আদমি পার্টির অধিনায়ক অরবিন্দ কেজরীবালজির স্বপ্নকে অভিনন্দন। কোটি কোটি সদস্যকে অভিনন্দন। কঠোর পরিশ্রমের ফল মিলেছে… আম আদমি পার্টির বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী… ”
আপের উত্থান:
২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর গঠিত হয় আম আদমি পার্টি। সাড়ে দশ বছরেই আঞ্চলিক দল থেকে জাতীয় দল হয়ে উঠল এই আপ। বিগত বছরগুলিতে মূলত দিল্লিতেই নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছে আম আদমি পার্টি। পাশাপাশি গত বছর দিল্লির বাইরে দলের বিস্তারে প্রথম উদ্যত হন কেজরীবাল। পঞ্জাবে নির্বাচনে লড়ে জয়ও পান। আর এই পঞ্জাব জয়ই তাঁদের রাজনৈতিক গ্রাফে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে দেশের দুটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে আপ।
তবে উল্লেখ্য, বারবর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হলেও লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিবাসীর ভরসা রাখতে ব্য়র্থ হয়েছে আম আদমি পার্টি। এখনও পর্যন্ত কোনও লোকসভা নির্বাচনেই দিল্লি থেকে একটাও আসন জিততে পারেননি ঝাড়ুর দল। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাব থেকে ৪ টি আসন জিতেছিল তারা। কিন্তু পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনেই ফের ধাক্কা খায় আপ। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পঞ্জাবে তাদের আসন সংখ্যা ৪ থেকে নেমে ১ হয়। সেই বছর লোকসভায় পঞ্জাব থেকে নির্বাচিত একমাত্র লোকসভা সাংসদ ছিলেন ভগবন্ত মান। তবে ২০২২ সালে পঞ্জাবে আপের জয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন ভগবন্ত মান। তারপর ওই একটি লোকসভা আসনও হাতছাড়া হয় আপের। ফলে এখন লোকসভায় আপের কোনও সাংসদ নেই। তবে রাজ্যসভায় ১০ জন প্রতিনিধি রয়েছে আপের। এবার জাতীয় দলের তকমা পাওয়ার পর আগামী লোকসভা নির্বাচনে আপ লোকসভায় কটা আসন পায় তাই দেখার।
একাধিক রাজ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপের:
দিল্লিতে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি রাজধানীর বাইরেও নিজেদের পদচিহ্ন ফেলার চেষ্টায় ছিল আপ। দিল্লির বাইরে পঞ্জাব, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, মেঘালয়, মণিপুর, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, রাজস্থান, তেলঙ্গানা উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে কেজীবালের দল। উক্ত রাজ্যগুলির মধ্য়ে কেবলমাত্র পঞ্জাবেই ঝাড়ুর ঝড় তুলতে পেরেছেন কেজরীবাল। তবে ব্যর্থ হয়ে লড়াইয়ের ময়দান থেকে বেরিয়ে যাননি তিনি। মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। তার ফল হিসেবে জাতীয় দলের তকমা হাশিল করল আপ। আসন্ন কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আপ। গতকালের এই প্রাপ্তির পর এক আপ নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়ার পর কর্নাটকে তাদের লড়াইটা আরও দৃঢ় হবে।
জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়ার শর্ত:
প্রসঙ্গত, কোনও রাজনৈতিক দলকে জাতীয় দল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এক, লোকসভা নির্বাচনে ৪ টি রাজ্যে অন্ততপক্ষে ৬ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পেতে হয়। বা লোকসভায় ৩ টি রাজ্য থেকে মোট ১১ টি আসন পেতে হবে। বা অন্ততপক্ষে চারটি রাজ্যে রাজ্য দলের মর্যাদা কুড়িয়ে নিতে হবে কোনও রাজনৈতিক দলকে। এই তিনটি শর্তের কোনও একটি পূরণ করলেই জাতীয় দলের তকমা পাবে কোনও রাজনৈতিক দল। লোকসভায় আপের আসন সংখ্যা শূন্য। তবে চারটি রাজ্যে ‘রাজ্য দল’ তকমা পাওয়ার শর্ত পূরণ করেছে অরবিন্দ কেজরীবালের দল। আর সেই স্বরূপ কমিশনের ‘পুরস্কারও’পেল আম আদমি পার্টি।