অসমে কি বিজেপির বিষম কাঁটা সিএএ?

কংগ্রেসের পাশাপাশি নতুন দুই দলও হয়ে উঠতে পারো বিজেপির কাঁটা। অসম নির্বাচনে (Assam Assembly election) অমিত শাহদের অস্ত্র অখন শুধুই উন্নয়ন।

অসমে কি বিজেপির বিষম কাঁটা সিএএ?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 27, 2021 | 5:45 PM

গুয়াহাটি: অসমের ইতিহাসে বিজেপির (BJP) শাসনের ইতিহাস একেবারেই দীর্ঘ নয়। ২০১৬-তেই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে প্রথম ক্ষমতার মসনদে বসে পদ্ম ব্রিগেড। ফলে সেদিক থেকে দেখলে, এবারেই প্রথম অসমে পরীক্ষার মুখে শাসক বিজেপি। ২০২১-এ যে ক’টি রাজ্যের ভোট (Assam Assembly election) ঘোষণা হয়েছে তার মধ্যে একমাত্র অসমেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তাই সেখানে আপাত দৃষ্টিতে বিজেপির লড়াই কিছুটা সহজ বলে কেউ কেই মনে করলেও বিগত পাঁচ বছরে বিজেপি-র শাসনকালে জল গড়িয়েছে অনেক দূর।

শুক্রবারই অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি অসমের ভোটের নির্ঘণ্টও ঘোষণা করেছে দিল্লির নির্বাচন সদন। তিন দফায় ভোট হবে এই রাজ্যে, মোট আসন সংখ্যা ১২৬ । তবে এবার বিরোধী হিসেবে শুধু কংগ্রেস বা পরিচিত দলগুলি নয়, সামনে এসেছে আরও দুই নতুন দল। আর সেই দুই দলের উত্থান ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে’র প্রতিবাদের জেরে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার পাশাপাশি অচেনা বিরোধীদেরও এবার সামলাতে হবে শাসক শিবিরকে।

উত্তর-পূর্বের সীমান্তবর্তী এই রাজ্যে বিগত পাঁচ বছরে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’। ২০১৯-এ এই আইন কার্যকর হয়। এই আইনের বলে ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। এই আইন পাশ হওয়ার আগে থেকেই অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে তীব্র বিরোধিতা সামনে আসে। আইন কার্যকর হলে ওই রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলেই দাবি বিক্ষোভকারীদের।

২০১৯-এর ডিসেম্বরে অসমে এই আইনের প্রতিবাদে পথে নামে মানুষ। আর সেই বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে মৃত্য়ু হয় পাঁচজনের। সেই বিক্ষোভ আন্দোলন থেকেই উত্থান দুই রাজনৈতিক দলের – অসম জাতীয় পরিষদ ও রাইজোর দল। এই দুই দল এবার যৌথভাবে নির্বাচনে লড়ছে।

দুই রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই পুঁজি জোগাড় করতে অভিনব পন্থা নিয়েছে। দুই দলের মুখ লুরিনজ্যোতি গগই ও অখিল গগইকে টাকা জোগাতে বহু কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে টাকা তুলে দিচ্ছেন। এই প্রক্রিয়াতে ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ওঠা অনিশ্চিত হলেও প্রথা বিরোধী এই ক্রাউডফান্ডিং-এর ধারনা যে বেশ অন্যধারার জনসংযোগের মাধ্যম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তহবিল সংগ্রহের এই কৌশলের মাধ্যমেই তাঁরা যে মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে মিশতে চান না তা স্পষ্ট করেছেন দুই গগৈ।

অন্যদিকে, কংগ্রেস এআইডিইউএফ ও তিনটি বামপন্থী দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তৈরি করেছে ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স’। অসমের বাঙালি মুসলিম বাসিন্দা, যাঁরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় সোচ্চার, তাঁদের সমর্থন নিয়ে আশাবাদী এআইডিইউএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল। সুতরাং তাদেরও অস্ত্র ওই আইনের বিরোধিতা। সম্প্রতি এক বিশেষ প্রচারে সিএএ-বিরোধী ‘গামোসা’ সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। সাদার উপর লাল সুতোয় বোনা অসমের ঐতিহ্যবাহী কাপড়ই গামোসা নামে পরিচিত। তাঁদের দাবি, এক সপ্তাহে এক লক্ষ ‘গামোসা’ জোগাড় করেছেন তাঁরা। সুতরাং অ্যান্টি-সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতাই যে এবার অসমের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে, তা স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: Tamil Nadu Election 2021: তুরুপের তাস ভন্নিয়ার সংরক্ষণ! বিজেপির পর শাসক-জোটে যোগ দিল পিএমকে, আসন রফার আলোচনা আজ

তাহলে বিজেপির হাতে এবার অস্ত্র কি? সব দল যখন একই ইস্যুতে এককাট্টা, বিজেপির হাতে তখন একটাই অস্ত্র উন্নয়ন। পাশাপাশি অসমের সংস্কৃতি রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও বারবার শোনা যাচ্ছে পদ্ম প্রচারের আঙিনা থেকে। এআইডিইউএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলকে অসমের শত্রু বলে ইতিমধ্যেই দাগিয়ে দিয়েছেন অসমের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। অমিত শাহ বলেছেন, ‘ক্ষমতার লোভে এআইডিইউএফ-এর সঙ্গে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস। এতে অসমের কোনও উন্নয়ন হবে না।’ উল্লেখ্য, এবার বিজেপির সঙ্গে জোটে নেই বোরো পিপলস ফ্রন্ট। এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা এই বিপিএফ ২০১৬-তে বিজেপির হাত ধরে। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল, বিজেপি-বিপিএফ সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৬০টি আসন, সঙ্গে থাকা অসম গণ পরিষদের হাতে ছিল ১৩টি আসন। বিপিএফ পেয়েছিল ১১টি আসন।