চিরাগের চালে ‘সেকেন্ড বয়’ নীতীশ, বললেন, “এ জয় মোদীর”

TV9 বাংলা ডিজিটাল: নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ! এই প্রবচনে নাকা কেটে ফেলাটা সাধারণত নির্বুদ্ধিতা হিসাবেই বিবেচিত হয়। তবে যদি যাত্রা ভঙ্গ করার তাৎপর্যের তুলনায় নাক কাটার ক্ষতটা নেহাতই লঘু হয়, তবে তাকে নির্বুদ্ধিতা হিসাবে দাগানোটাই আদপে নির্বুদ্ধিতা। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Elections 2020) ফলাফল সামনে আসার পর ‘বাপ কা বেটা’ চিরাগের দূরদর্শিতা […]

চিরাগের চালে 'সেকেন্ড বয়' নীতীশ, বললেন, এ জয় মোদীর
চিরাগ পাসওয়ান
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 11, 2020 | 11:35 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ! এই প্রবচনে নাকা কেটে ফেলাটা সাধারণত নির্বুদ্ধিতা হিসাবেই বিবেচিত হয়। তবে যদি যাত্রা ভঙ্গ করার তাৎপর্যের তুলনায় নাক কাটার ক্ষতটা নেহাতই লঘু হয়, তবে তাকে নির্বুদ্ধিতা হিসাবে দাগানোটাই আদপে নির্বুদ্ধিতা। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Elections 2020) ফলাফল সামনে আসার পর ‘বাপ কা বেটা’ চিরাগের দূরদর্শিতা সম্পর্কে এমনটাই উপলব্ধি অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের।

এ মুহূর্তে ঝুলিতে একটি মাত্র আসন থাকলে কী হবে অকুণ্ঠ প্রশংসায় নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) ভরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ঘাটতি নেই চিরাগ পাসোয়ানের (Chirag Paswan)। বিহার নির্বাচনের ফল বেরনোর পর লোক জনশক্তি পার্টির প্রধানের গলায় এখন শুধুই মোদীর জয়গান। টুইট করে তিনি জানিয়ে গিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরই আস্থা প্রদর্শন করেছে বিহারের মানুষ। বিজেপির উপর মানুষের ভরসা যে একটুও কমেনি, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। এই জয় একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরই।

ইভিএম খুলে দেখা গিয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (LJP)। গত নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা বেশি, কিন্তু আসন একটা কম। তবে এসব পরিসংখ্যান নেহাতই সংখ্যাতত্ত্বের কচকচানি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৬% ভোটটা বড় কথা নয়, চিরাগ আসলে ‘ওভার বাউন্ডারি’ মেরেছেন নীতীশের ভোটে ভাগ বসিয়ে। ভোট শতাংশ প্রসঙ্গে চিরাগের সাফাই, “একা লড়ে ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছি। প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ ‘বিহার প্রথম, বিহারি প্রথম’ স্লোগানে বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছেন। আগে আমাদের বলা হতো ‘পিছিয়ে পড়া দল’। মানে কারও সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারি না। আমরা সেই স্পর্ধা দেখিয়েছি।” এখানে বলে রাখা যাক, চিরাগ যে ‘স্পর্ধা’ দেখিয়েছেন, এ কথা মেনে নিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।

চিরাগের পিতা রামবিলাস পাসোয়ান (Ram Vilas Paswan)সম্পর্কে চালু রসিকতাটা ছিল এমন যে কেন্দ্রে সরকার বদলায়, কিন্তু ক্যাবিনেটের একটি মুখ অপরিবর্তিত থাকে। তিনি রামবিলাস পাসোয়ান। ইউপিএ-ই হোক অথবা এনডিএ সরকার, সর্বত্রই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নীলবাতি গাড়ির সওয়ার রামবিলাস। আর এখন রাজনৈতিক কারবারিরা বলছেন, বাবার মতোই হাওয়া বুঝে চলেন চিরাগও। কারণ, বিহারে শুধুমাত্র নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধেই লড়তে দেখা গিয়েছে এলজেপি-কে। আর এই সিদ্ধান্তের অভিঘাতে গতবারের তুলনায় মাত্র একটি আসন হাতছাড়া হয়েছে এলজেপি-র কিন্তু জেডিইউ-কে হারাতে হয়েছে একাধিক আসন। ফলে অনেক দিক থেকেই ‘যাত্রাভঙ্গ’ হয়েছে নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar)। ভোটের হিসাব বলছে, এলজেপি নীতীশের দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিলে কমপক্ষে আরও ৩৩টি আসন তির চিহ্নের ঝুলিতে যেত।

তাই বিহারে এনডিএ জোটে বিজেপি-র বৃহত্তম দল হয়ে ওঠার পিছনে চিরাগের ‘কৌশলী চালই’ কাজ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বলে রাখা যাক, জেডিইউ-র দেওয়া সব কটি আসনেই (১২২) প্রার্থী দিয়েছেন চিরাগ পাসোয়ান। অন্যদিকে, হাতেগোনা ১৫টি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে এলজেপি। আত্রি, চাকাই, দ্বারভাঙ্গা, গাইঘাট-সহ কমপক্ষে ৩৩টি আসনে কম ব্যবধানে হারতে হয়েছে জেডিইউ-কে। সে সব জায়গায় ভোট ভাগাভাগিতে প্রত্যক্ষ অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে চিরাগের এলজেপি। অর্থাৎ এই সব আসনে জেডিইউ জিততে পারলে এনডিএ-তে তারাই একক বৃহত্তম দল হতে পারত।

তাছাড়া প্রার্থী নির্বাচনেও বাজিমাত করেছেন চিরাগ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এলজেপি-র অধিকাংশ প্রার্থীরাই হলেন আরএসএস ও বিজেপি ঘনিষ্ঠ। এঁদের মধ্যে রাজেন্দ্র সিং, রামেশ্বর চৌরাশিয়া, দিও রঞ্জন সিংরা আরএসএস ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অনেক জায়গায় উচ্চবর্ণের প্রার্থীও দাঁড় করানো হয়েছে। এর ফলে, জেডিইউ-র পাশাপাশি আরজেডি-রও ভোট ভাগ হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। লালুপ্রসাদের দলের ভোট কাটার সুফলও ভোগ করেছে বিজেপি। ‘ভক্ত হনুমান’ চিরাগ নিজের নাক কেটে নীতীশের যাত্রাভঙ্গ ঘটিয়ে আনুগত্য প্রদর্শন করে দিয়েছেন, এবার তাঁর কী প্রাপ্তি ঘটে সেটাই এখন দেখার।