সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে, জানাল কেন্দ্র

কবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন? জানাল কেন্দ্র

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে, জানাল কেন্দ্র
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 02, 2021 | 11:57 PM

নয়া দিল্লি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ করছে কেন্দ্র। ২০১৯ সালে পাশ হওয়া নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিধি প্রণয়ন এবং তা কার্যকরের জন্য কেন্দ্রকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে রাজ্যসভা এবং লোকসভার কমিটি। মঙ্গলবার সংসদে এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

এদিন লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ ভিকে শ্রীকান্দনের প্রশ্নের জবাবে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়,  গত বছরের ১০ জানুয়ারি থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা CAA কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আইনগুলি প্রস্তুতির পর্যায়ে ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যোগ করে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের রুল ফ্রেম করার জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভার সংশ্লিষ্ট কমিটি যথাক্রমে ৯ এপ্রিল এবং ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রকে। কংগ্রেস সাংসদ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে কী ভাবছে কেন্দ্র। এক বছর আগে বিল পাশ হলেও আইন তৈরির বিষয়ে কেন্দ্র কোন জায়গায় রয়েছে, তা জানতে চান শ্রীকান্দন। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র জানাল, আগামী পাঁচ মাসের মধ্যেই আইন তৈরি ও তা কার্যকরের ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে তারা। এর আগে ৯ জুলাই পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করার সময় চেয়েছিল কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত, দেশজোড়া ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল। সে বছরই ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে সিএএ কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু পরে সিএএ-এর নিয়মনীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থমকে যায়। এর কারণ, রাজনৈতিক ও অতিমারি পরিস্থিতি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অমিত শাহ জানান, করোনা অতিমারির কারণে নয়া নাগরিকত্ব আইনের রুল ফ্রেম করতে দেরি হচ্ছে। দেশে গণটিকাকরণ শুরু হলেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে। এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে গণ টিকাকরণ কর্মসূচি। এই প্রেক্ষিতে এদিন কেন্দ্র জানাল, এ ব্যাপারে চলতি বছরের জুলেই পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে সংসদীয় কমিটি।

আরও পড়ুন: এনআরসি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি: কেন্দ্র

২০১৯ সালে কেন্দ্রের নয়া নাগরিককত্ব আইনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল দিল্লি, বাংলা, অসম-সহ বিভিন্ন রাজ্য। সিএএ আন্দোলন নিয়ে খোদ রাজধানীর বুকে হিংসা ছড়ায় গত বছরের মার্চে। তাতে ৫০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক মানুষ। শেষে অতিমারি পরিস্থিতির মুখে ছেদ পড়ে শাহিনবাগ আন্দোলনে। এদিকে ভোটমুখী বাংলা ও অসমে এই নাগরিকত্ব আইনকেই নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ইস্যু করেছে বিজেপি। সিএএ-এর বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে কেন নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে এত দেরি হচ্ছে তা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মতুয়া জনসঙ্ঘের নেতা তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। মতুয়াদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য শীঘ্রই উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে সভা করতে চলেছেন অমিত শাহ। এই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে সিএএ রুল ফ্রেমের সময়সীমা জানিয়ে দিল কেন্দ্র।

একনজরে CAA:

১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর তা আগে মোট চারবার সংশোধিত হয়- ১৯৮৬ , ২০০৩, ২০০৫ এবং ২০১৫ সালে। নয়া নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান শরণার্থীকে এ দেশে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ওই তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম-সহ অন্য়ান্য ধর্মের শরণার্থীর জন্য CAA লাগু হবে না। মূলত এ নিয়েই কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ যা, সবাইকে সমানভাবে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে তা লঙ্ঘন করছে এই আইন। পাশাপাশি তাদের এও বক্তব্য, যদি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়াই এই আইনের লক্ষ্য হয়, তাহলে কয়েকটি দেশকে বেছে নেওয়া এবং ধর্মকে মানদণ্ড করার বিষয়টি ঠিক নয়।