Caste Census: জাতিগত আদমসুমারি নিয়ে কপটতা করছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস, ইতিহাস তাই বলছে
বিজেপির নিশানা, আসলে জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারি নিয়ে রাহুল গান্ধী নোংরা খেলা খেলছেন। এই ধরনের ভণ্ডামি তাঁর অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
নয়া দিল্লি: আদমসুমারি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। বিজেপির নিশানা, আসলে জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারি নিয়ে রাহুল গান্ধী নোংরা খেলা খেলছেন। এই ধরনের ভণ্ডামি তাঁর অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে দাবি জানিয়েছে বিজেপি। এর আগে কংগ্রেস সরকারই এই ধরনের জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারিকে ‘অবাস্তব’ তকমা দিয়েছিল। এমনকি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও এর বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু, এখন রাহুল গান্ধী এটা নিয়ে কপটতা শুরু করেছেন এবং সব সীমা ছাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রের শাসক দল।
জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারি নিয়ে রাহুল গান্ধী ও তাঁর দল যে কপটতা করছেন, তা দেশ তথা কংগ্রেসের প্রথম প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পূর্বতন সমস্ত কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর জমানার দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী- কেউই জাতির ভিত্তিতে জনগণনার পক্ষে ছিলেন না। যেমন-
জওহরলাল নেহরু- দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জওহরলাল নেহরু ১৯৫১ সালে প্রথম জাতির ভিত্তিতে গণনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তবে তিনি কখনও চাননি, দেশে জাতির ভিত্তিতে গণনা হোক। ২০১১ সালে যখন বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয়, তখনই প্রকাশ্যে আসে যে, ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জওহরলাল নেহরু প্রথম জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে তিনি শেষপর্যন্ত এটি খারিজ করে দেন। নেহরু থেকে প্রফুল্ল প্যাটেল- সকলেই জাতিগত আদমসুমারির বিপক্ষে ছিলেন। আজ যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালিত হচ্ছে, সেই সময় জাতিগত আদমসুমারী কাম্য নয়।
জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারির পক্ষে রাহুল গান্ধীর যুক্তি, বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণির সংখ্যার ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া উচিত। কিন্তু, জওহরলাল নেহরুও এটা করতে চাননি। তিনি সংরক্ষণ নয়, শিক্ষার মাধ্যমে ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। এপ্রসঙ্গে ১৯৬১ সালের ২৭ জুন সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠিও দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সেই চিঠিতে তিনি স্পষ্টত সংরক্ষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। চিঠিতে নেহরু লিখেছিলেন, “আমি বিশেষত, চাকরির ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের সংরক্ষণ দেওয়া অপছন্দ করি। আমরা যদি সাম্প্রদায়িক ও জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের দিকে অগ্রসর হই তাহলে প্রথমসারির উজ্জ্বল ও যোগ্য ব্যক্তিদের পাব না, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির লোকেদের পাব। আমি চাই, আমার দেশ সবদিক থেকে প্রথম শ্রেণির হোক। সংরক্ষণের পথে হাঁটা কেবল দেশ পিছিয়ে দেবে না, সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে।” তাই স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহরু জাতিগত-গণনা বাতিল করে দেন।
ইন্দিরা গান্ধী- জওহরলাল নেহরু জাতিগত-গণনা বাতিল করলেও ১৯৮১ সালে ইন্দিরা গান্ধী উল্টো পথ নেন। তাঁর সরকার আদমসুমারির ব্যাপারে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ নেয়। যা দেশকে পিছন দিকে ঠেলে দেয় এবং জ্বলন্ত উনুনের উপর বসায়।
রাজীব গান্ধী- ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর তাঁর উত্তরসূরী রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অবশ্য মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টকে ‘ক্ষতিকর কীট ও দেশকে বিভাজনকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে ইউপিএ জমানায় মন্ত্রিসভার প্রধান ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সময়ও জাতিগত আদমসুমারি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু, কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হননি। অর্থাৎ কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে এই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা ছিল। তারপর ২০১০ সালে কংগ্রেস সরকারই সংসদে জাতিগত আদমসুমারিকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদম্বরম নেহরুর অবস্থানই নিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে এই বিষয়ে চিঠি দিয়ে জাতিগত-আদমসুমারির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, এটা হলে ‘বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি হবে।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনও জনতা দলের সাংসদ আলি আনোয়ারের এক চিঠির জবাবে জানিয়েছিলেন, “ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় নিহিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চেতনাকে সামনে রেখে জাতপাতের ভিত্তিতে সম্প্রদায়গত পার্থক্য না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পরবর্তীতে চিদম্বরমের পুত্র থেকে কংগ্রেস নেতা-নেত্রী আনন্দ শর্মা, পি.কে বনশল, প্রিয়া দত্ত, মীরা কুমার প্রবলভাবে জাতিগত আদমসুমারির বিরোধিতা করেছিলেন। এটা দেশকে ৫০ বছর পিছনে ঠেলে দেবে বলে জানান প্রিয়া দত্ত।
কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, জাতিগত গণনা করেছিল। যদিও সেটা প্রকাশ করেনি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসের আপত্তিজনক অবস্থান এবং ভণ্ডামি।