বাজারে অমিল রেমিডেসিভির, বিনামূল্যে বিতরণ হচ্ছে বিজেপি কার্যালয় থেকে!
বিজেপি সভাপতি সি আর পাটিল বলেন, "সুরাট ও গুজরাটের অন্যান্য শহরের যে সমস্ত রোগীরা এই ওষুধ জোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছেন, তাঁরা বিজেপি অফিসে আসতে পারেন। চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র, চিকিৎসকের নম্বর ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানালেই বিনামূল্যে তাঁদের এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে।"
সুরাট: দেশজুড়ে যেখানে করোনা টিকার পাশাপাশি চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমিডেসিভির ওষুধের আকাল দেখা দিয়েছে, সেখানেই বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে এই ওষুধ। কোথা থেকে এই ওষুধ আসছে এবং কীভাবেই বা সরকারের অনুমতি ছাড়াই রাজনৈতিক দলের কার্যালয় থেকে বিলি করা হচ্ছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
রবিবার একটি ভিডিয়ো বার্তায় গুজরাটের বিজেপি নেতা যগনেশ দাভে বলেন, “স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় সুরাটে বিজেপির তরফে বিনামূল্যে রেমিডেসিভির ইঞ্জেকশন বিলি করা হচ্ছে। আমাদের দলীয় সভাপতি সিআর পাটিলের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গুজরাট ও বাইরে থেকে এই ইঞ্জেকশনগুলি কিনেছেন। সুরাটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ, যাঁদের এই ওষুধের প্রয়োজন, তাঁদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।”
যদিও সরকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও একক ব্যক্তি এই ওষুধ কিনতে পারেন না। মূলত এটি জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সরাসরি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয় রেমিডেসিভির। ওষুধের দোকান থেকে এই ওষুধ কিনতে গেলে নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশন দেখাতে হয় যেখানে করোনা চিকিৎসার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। ওষুধ প্রয়োগের আগে রোগীকে একটি কনসেন্ট ফর্মেও স্বাক্ষর করতে হয়।
আহমেদাবাদের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা জ়াইডাস গত ৫ এপ্রিল থেকে একটি হাসপাতালের ফার্মাসির মাধ্যমে রেমিডেসিভিরের প্রতি ফাইল ৮৯৯ টাকায় বিক্রি করা শুরু করে। ১২ এপ্রিল অবধি স্টক রয়েছে বলে জানানো হলেও শুক্রবার রাতেই তা স্টক আউট হয়ে যায়। এ দিকে, একইদিনে বিজেপির তরফ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।
বিজেপি সভাপতি সি আর পাটিল বলেন, “আমরা জা়ইডাসের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ইঞ্জেকশন কেনার ব্যবস্থা করেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার ইঞ্জেকশন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুরাট সহ গুজরাটের অন্যান্য শহরের যে সমস্ত রোগীরা এই ওষুধ জোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছেন, তাঁরা বিজেপি অফিসে আসতে পারেন। চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র, চিকিৎসকের নম্বর ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানালেই বিনামূল্যে তাঁদের এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে।”
তবে বিতর্কের মুখে পড়তেই রাতারাতি অবস্থান বদল করেন তিনি। জানান, ওনাদের বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ইঞ্জেকশন জোগাড় করেছে। সেই ওষুধই বিজেপি কার্যালয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপাণীকেও এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সুরাটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণেই পাটিল রেমিডেসিভির ইঞ্জেকশন জোগাড় করেছেন। তিনি কোথা থেকে জোগাড় করেছেন, সেই বিষয়ে তিনিই সঠিক জবাব দিতে পারবেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্য আলাদাভাবে ওষুধ জোগাড়ের ব্যবস্থা করছে। সরকারি স্টক থেকে একটিও ইঞ্জেকশন বাইরে দেওয়া হয়নি।”
এ দিকে, গোটা ঘটনার সমালোচনা করে এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেন, “গোটা দেশজুড়েই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রেমিডেসিভিরের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি গুজরাটেও। কিন্তু বিজেপির তরফে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে যে তাদের কার্যালয় থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধের বিতরণ রাজ্য সরকারের করা উচিত, রাজনৈতিক দল কেন করছে? আরও বড় প্রশ্ন হল এই ঘাটতির মাঝেও বিজেপি কীভাবে ওষুধ জোগাড় ও বিলি করছে?”
আরও পড়ুন: ‘ক্যাবিনেট বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত’, লকডাউন ঘিরে ধোঁয়াশা দূর করলেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী