জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে বাচ্চার, চিকিৎসকের পা ধরে মায়ের কান্না ‘আমার ছেলেটাকে একটু দেখুন’

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ফিরোজাবাদ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের রিপোর্টই ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে।

জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে বাচ্চার, চিকিৎসকের পা ধরে মায়ের কান্না 'আমার ছেলেটাকে একটু দেখুন'
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 06, 2021 | 10:15 AM

লখনউ: দু-তিনদিন আগেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিল ১২ বছরের ছেলেটির। প্রথমে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার চেষ্টা করলেও ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেই ছুটে এসেছিলেন হাসপাতালে। ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলেন, কারণ চারিদিকে সবাই জ্বরের রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবার শিশু।

ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয় অপেক্ষা করতে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছিল অপেক্ষা করতে করতে, এদিকে ছেলের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এক চিকিৎসককে আসতে দেখেই তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়লেন মা। চিকিৎসকের পা ধরে অনুরোধ করলেন, একবার যেন তাঁর ছেলেকে দেখা হয়, অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পর রবিবার অবশেষে ফিরোজাবাদের ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই কিশোরকে।

উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশে ভয়াবহ আকার নিয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। সবথেকে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে ফিরোজাবাদে, সেখানে বিগত ১০ দিনেই ৪০টি শিশু সহ মোট ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণেই রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারও ফিরোজাবাদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলি উপচে পড়ছিল রোগীতে। ১২ বছরের ওই কিশোর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় তাঁর পরিবারকে মাটিতে বসেই কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। এরপরই ছুটে আসেন চিকিৎসকরা। এক ব্যক্তি পাঁজকোলা করে ওই কিশোরকে ভিতরে নিয়ে যায়, চিকিৎসকরা প্রাথমিক যাচাইব করেই ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দেন।

ফিরোজাবাদ মেডিক্য়াল কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সঙ্গীতা আনেজা জানান,  ধীরে ধীরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। হাসপাতালে বর্তমানে ৫৪০ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। আরও রোগী আসছে। শয্যা সঙ্কট দেখা দেওয়ায় এক বিছানায় দুইজনকে ভর্তি নিলেও কেউ অভিযোগ করছেন না। সবাই কেবল নিজেদের পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে চাইছেন কোনওমতে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ফিরোজাবাদ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের রিপোর্টই ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রবল জ্বর, খিঁচুনি, রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং শরীরে জল শুকিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে উত্তর প্রদেশের বিভি্ন্ন জেলায় অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। প্রথমে অজানা জ্বর বলে মনে করা হলেও উপসর্গগুলি দেখে ডেঙ্গু বলে মনে করা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর খোঁজ মিলছে ফিরোজাবাদ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি থেকেই। ফিরোজাবাদে বিগত ১০ দিনেই ৪৫টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরই বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেয় উত্তর প্রদেশ সরকার। কেন্দ্রের তরফেও চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানো হয়।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় দলের সেই রিপোর্টে ডেঙ্গুর পাশাপাশি স্ক্রাব টাইফাস বা বুস টাইফাসের কারণে জ্বর আসার প্রমাণ মিলেছে। পরীক্ষায় একাধিক নমুনায় সবজি বা ঝোপঝাড়ে পাওয়া যাওয়া এই পোকার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। একইসঙ্গে রাজ্যে এনসেফালাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো জটিল রোগেও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। আরও পড়ুন: দিদি বলছিল মোবাইল কিনে দেওয়ার নামে কী দুষ্কর্ম করেছে বাবা! শুনতে পেয়েই খালে ঝাঁপ দিল ভাই