খোলা বাতাসে ছড়ায় না করোনা! আতঙ্কিত না হয়ে বোঝার চেষ্টা করুন কী বলছে নতুন গবেষণা

Coronavirus in Air: সত্যিই কি এই গবেষণার ফলাফল দেখে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, না কি এই গবেষণার তথ্যগুলিকে আরেকটু বিশ্লেষণ করে বোঝার প্রয়োজন? এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি।

খোলা বাতাসে ছড়ায় না করোনা! আতঙ্কিত না হয়ে বোঝার চেষ্টা করুন কী বলছে নতুন গবেষণা
ছবি- টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 17, 2021 | 11:41 PM

নয়া দিল্লি: করোনা সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ল্যানসেট নামক একটি সংস্থার গবেষণাপত্র। বিশ্বজোড়া খ্যাতি পাওয়া এই সংস্থার গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, করোনার ভাইরাস খোলা বাতাসেও বাহিত হয়।

প্রথমবার যখন গোটা বিশ্ব করোনার সঙ্গে লড়ছে, সেই সময়ও বেশ কয়েকটি দেশের গবেষকরা একই দাবি করেছিলেন। তখন যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রমাণের অভাবে সেই দাবিতে সিলমোহর দেয়নি। তবে এ বার ল্যানসেটের বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে ১০ টি যুক্তি বিশেষভাবে সামনে রেখেছেন, যেখানে উল্লেখ পেয়েছে কীভাবে বাতাসের মধ্যে দিয়েও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

ল্যানসেটের গবেষণায় আরও একটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। এই সংস্থা বলছে, গোটা বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে যুঝতে এই মুহূর্তে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা বদল করার প্রয়োজন। অর্থাৎ এক কথায় বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, লকডাউন বা কার্ফু জারি করা কোনও সমাধানের পথ নয়। কিন্তু, এই গবেষণার ফলাফল সামনে আসার পর জনমানসের একটা বড় অংশে ভীতি এবং আতঙ্ক মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে।

কারণ বাতাসে যদি করোনার ভাইরাস বাহিত হয়, তবে ঘরে বসেও আক্রান্ত হতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, সত্যিই কি এই গবেষণার ফলাফল দেখে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, না কি এই গবেষণার তথ্যগুলিকে আরেকটু বিশ্লেষণ করে বোঝার প্রয়োজন? এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি।

কীভাবে ছড়ায় কোভিডের ভাইরাস?

কোভিড ১৯ সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে গড়পড়তা ধারণা এটাই যে, কোনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী কাশলে, হাঁচি দিলে বা কথা বলার সময় নাক ও মুখ দিয়ে যে ড্রপলেট বের হয়, তার মাধ্যমেই অন্য আরেকজনের শরীরে এই ভাইরায় বাসা বাঁধে। সেই ড্রপলেট যে কোনও বস্তুর ওপর পড়ে থাকতে পারে। যে কারণে এই ড্রপলেট থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রথমত স্যানিটাইজার এবং দ্বিতীয়ত মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে।

ল্যানসেটের গবেষণার মূল বক্তব্য কী?

ল্যানসেটের এই নতুন গবেষণার নির্যাস যদি এক কথায় বলতে হয় তবে এর অর্থ হল, করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়াতে পারে। গবেষকরা এই জার্নালে দাবি করেছেন, বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ সংক্রমণই বাতাসে ভাইরাস ছড়ানোর কারণেই হচ্ছে। এই দাবির সমর্থনে ওই গবেষণায় দশটি যুক্তিও উল্লেখ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন হোটেলে পৃথক ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকলেও সেখানে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। এমনকি, ড্রপলেট থেকে সুরক্ষিত থাকতে পিপিই কিট পরার পরেও স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হয়েছেন ইত্যাদি…প্রভৃতি।

কী বলছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ?

ল্যানসেটের এই গবেষণার বিষয়বস্তু আরেকটু সহজভাবে বুঝিয়েছেন আমেরিকার মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফাহিম ইউনুস। তিনি নিজে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই গবেষণা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এতে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ল্যানসেটের গবেষণায় এই ভাইরাসকে ‘এয়ারবোর্ন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, যা বাতাসে ছড়ায়। চিকিৎসক ফাহিম ইউনুস সেই এয়ারবোর্ন শব্দটির অর্থ ভেঙে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

ফাহিম ইউনুস টুইটে লিখেছেন, “এয়ারবোর্ন কথার অর্থ এটা নয় যে বাইরের হাওয়া-বাতাস ভাইরাস দ্বারা দূষিত হয়ে গিয়েছে। এর অর্থ হল, ভাইরাস বাতাসে উপস্থিত থাকতে পারে। বিশেষ করে কোনও ঘরের ভেতরের আবহে, যা সেখান থেকে তা অন্য মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।” উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেছেন, “সমুদ্র সৈকত বা পার্কের মতো জায়গা এখনও সবচেয়ে সুরক্ষিত যদি শারীরিক দূরত্ববিধি পালন করা যায়।”

মার্কিন চিকিৎসকের বক্তব্য আরেকটু সহজ করে বুঝতে TV9-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পিবি মিশ্রর সঙ্গে। যিনি গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি অ্যাপোলোতে চিকিৎসা করছেন এবং বর্তমানে লাগাতার করোনা রোগীদের সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে। তাঁর মতে, ফাহিম ইউনুস নিজের টুইটে বোঝাতে চেয়েছেন যে, করোনাভাইরাস বাতাসে উড়ে বেড়ায় না। তবে বদ্ধ ঘরে বাতাসের মধ্যে বাহিত হতে পারে।

আরও পড়ুন: টেস্টিং, ট্র্যাকিং ও চিকিৎসার ওপর বিশেষ জোর, করোনা রুখতে নমোর বিশেষ বার্তা

ল্যানসেট নিজের গবেষণাপত্রে যে ১০ টি কারণের কথা উল্লেখ করেছে সেখানেও একাধিকবার এই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যে, বদ্ধ ঘরের আবহে করোনা ছড়ানোর ভয় রয়েছে। যেহেতু বাড়িঘর বা হোটেলে বদ্ধ অবস্থায় হাওয়া চলাচল খুব বেশি হয় না, সেই কারণে ভাইরাস ওই এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। কিন্তু বাইরে, অর্থাৎ প্রকৃতির মুক্ত বাতাস কখনই স্থির নয়। তা সর্বদা গতিমান এবং স্বচ্ছ। যে কারণে হাসপাতাল, হোটেল বা শপিং মলের মত জায়গা যেখানে বাতাস বদ্ধ অবস্থায় থাকে, সেখানে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। এই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার।

আরও পড়ুন: বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ফের ওয়ার্ক ফর্ম হোমের পরামর্শ, করোনার বিরুদ্ধে ১০ দাওয়াই নবান্নর