প্রথম দেখাতেই প্রেম, কিন্তু কাছে পাওয়া হল না, শহিদের স্ত্রীর দুঃখে কাঁদল গোটা ভারত

Captain Anshuman Singh's widow: আলোচনা হয়েছিল নতুন বাড়ি বানানো নিয়ে, সন্তান নেওয়া নিয়ে। আর তার পরের দিন সকালেই সেনার পক্ষ থেকে একটা ফোন এসেছিল স্মৃতি সিং-এর কাছে। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়েছিল, তাঁর স্বামী, ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন আংশুমান সিং আর নেই।

প্রথম দেখাতেই প্রেম, কিন্তু কাছে পাওয়া হল না, শহিদের স্ত্রীর দুঃখে কাঁদল গোটা ভারত
স্মৃতি সিং এবং তাঁর শহিদ স্বামী ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Jul 07, 2024 | 7:09 PM

নয়া দিল্লি: ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই রাতে তাঁদের কথা হয়েছিল। পরের ৫০ বছরে তাঁদের জীবন কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আলোচনা হয়েছিল নতুন বাড়ি বানানো নিয়ে, সন্তান নেওয়া নিয়ে। আর তার পরের দিন সকালেই সেনার পক্ষ থেকে একটা ফোন এসেছিল স্মৃতি সিং-এর কাছে। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়েছিল, তাঁর স্বামী, ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন আংশুমান সিং আর নেই। গত বছর জুলাইয়ে আগুন লেগেছিল সিয়াচেনের আর্মি মেডিকেল কর্পসের ক্যাম্পে। নিজের জীবনের পরোয়া না করে সহকর্মীদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সহকর্মীদের বাঁচাতে পারলেও, শহিদ হন তিনি। শনিবার (৬ জুন), তাঁকে মরনোত্তর কীর্তি চক্র পুরস্কারে ভূষিত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংয়ের হয়ে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর বিধবা স্ত্রী স্মৃতি সিং। আর এই পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি তাঁর আর ক্যাপ্টেন অংশুমানের সম্পর্কের বিভিন্ন অজানা কথা জানিয়েছেন তিনি। যা সকলের চোখে জল এনে দিয়েছে।

সাদা শাড়ি পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছিলেন স্মৃতি। তাঁর চোখ ছিল জলে ভরা, মুখে শোকের ছায়া স্পষ্ট। পাশে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি মঞ্জু সিং। শহিদ স্বামীকে নিয়ে দৃশ্যতই গর্বিত স্ত্রী জানান, স্বামী তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর সাধারণভাবে মৃত্যু হবে না। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর সময় আমার বুকে পিতলের চাকতি থাকবে।’ পিতলের চাকতি, অর্থাৎ, মেডাল। কার্যক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। ক্যাপ্টেন আংশুমান সিং-এর কাহিনি কোনও সাধারণ কাহিনি নয়। গত বছরের ১৯ জুলাই, সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার সেনা শিবিরের গোলাবারুদ রাখার ঘরে শর্ট সার্কিট থেকে বড়-সড় আগুন লেগেছিল। ভোর ৩টে নাগাদ ওই আগুন লাগে। ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং সেই আগুন দেখে, সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে আটকে পড়া সহকর্মীদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। চার-পাঁচজনকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। তবে, এরপরই আগুন পাশের মেডিকেল ইন্সপেকশন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন সিং সেখানেও ছুটে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি আর ফিরতে পারেননি। ২২ জুলাই, উত্তর প্রদেশের দেওরিয়া জেলার ভাগলপুরে, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাহ করা হয়েছিল।

স্মৃতি সিং জানিয়েছেন, স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথম সাত থেকে আট ঘন্টা তিনি খবরটা বিশ্বাসই করতে পারেননি। স্মৃতি বলেছেন, “বারবার ভেবেছি এটা সত্যি নয়। কিন্তু এখন আমার হাতে কীর্তি চক্র আছে। আমি বুঝতে পারছি এই খবরটাই ঠিক। এই খবরটাই সত্যি।” আসলে, একেবারে প্রেমের শুরু থেকেই স্বামী বা প্রেমিকের থেকে দূরে থাকতে হয়েছে তাঁকে। স্মৃতি জানিয়েছেন, আক্ষরিক অর্থেই প্রথম দর্শনেই প্রেম হয়েছিল তাঁদের। তিনি বলেছেন, “কলেজের প্রথম দিনই আমাদের দেখা হয়েছিল। নাটকীয় মনে হতে পারে, তবে একেবারে প্রথম দর্শনেই আমাদের প্রেম হয়েছিল। এর এক মাস পরই ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে সুযোগ পায়। তারপর থেকে, দীর্ঘ আট বছর ধরে দূরে দূরে থেকেই আমরা প্রেম চালিয়ে গিয়েছি। তারপর আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত, বিয়ের দুই মাসের মধ্যেই ওকে সিয়াচেনে মোতায়েন করা হয়।”

প্রেম জীব কিংবা বৈবাহিক জীবন, অধিকাংশ সময়ই একে অপরের থেকে দূরে ছিলেন ক্যাপ্টেন অংশুমান এবং স্মৃতি। তাই হয়তো স্বামী শহিদ হওয়ার পরও তিনি ভেবেছেন, তাঁর স্বামী দূরে কোথাও আছেন। একদিন সকালে ঘুম ভেঙে উঠে দেখবেন স্বামী ফিরে এসেছেন। কিন্তু, কীর্তি চক্র হাতে নিয়ে তিনি অবশেষে বিশ্বাস করতে পেরেছেন, স্বামী আর ফিরবেন না। তাঁদের আর বাড়ি হবে না। সন্তান হবে না। ৫০ বছর পরের জীবন, স্বপ্নই থেকে যাবে।