Cultivation of Opium Poppy: হাজার বছর ধরে ভারতে প্রচলিত পোস্ত চাষ, তাহলে এখন কেন এত বিধিনিষেধ?
Opium Poppy farming: ভারতে কিন্তু পোস্ত চাষের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বস্তুত, সেই দশম শতাব্দী থেকেই ভারতে পোস্ত চাষ করা হয়। তাবলে এখন কেন শুধুমাত্র তিনটি রাজ্যকেই পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়?
কলকাতা: পোস্তর বড়া, আলু পোস্ত – বাঙালির ঐতিহ্যগত খাদ্যপদ। এই যুক্তি দেখিয়েই বৈধভাবে বাংলাকে পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বর্তমানে শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশ – এই তিনটি রাজ্যকেই পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, ভারতে কিন্তু পোস্ত চাষের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বস্তুত, সেই দশম শতাব্দী থেকেই ভারতে পোস্ত চাষ করা হয়। বর্তমানে, পোস্ত চাষের সঙ্গে আফিমের মতো মাদক দ্রব্যের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেও, ঐতিহাসিকভাবে পোস্ত থেকে তৈরি আফিম ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে পরিচিত। সংস্কৃত ভাষা অধ্যুষিত উত্তর ভারতের পাশাপাশি উত্তর পূর্ব ভারতেও ঔষধি গুণের জন্যই চাষ করা হত পোস্ত। সংস্কৃত ভাষায় আফিম পরিচিত ‘আহি ফেন’ নামে, আর উত্তরপূর্ব ভারতে আফিম পরিচিত ‘কানি’ নামে।
ভারতে পোস্ত বা আফিমের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘ধন্বন্তরী নিঘান্তু’ নামে সংস্কৃতে লেখা দশম শতাব্দীর এক চিকিৎসাশাস্ত্র গ্রন্থে। এই বইয়ে পোস্ত থেকে নির্গত আফিমকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুঘল আমলেও ভারতে পোস্ত চাষের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীকে মুঘল সম্রায় আকবরের সময় যে আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানেও পোস্ত চাষের উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, উত্তর ভারতের প্রায় সকল রাজ্যেই পোস্ত চাষ করা হত। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পোস্ত চাষ করা হত। তবে, সেই সময় থেকেই পোস্ত চাষের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে মুঘলরা দুর্হল হতে শুরু করেছি এবং তাদের জায়গা নিয়েছিল ইংরেজরা। ১৭৭৩ সালে ভারতে পোস্ত চাষের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি করায়ত্ব করেছিল ইংরেজ শাসকরা। স্বাধীনতার পর পোস্ত চাষের উপর নজরদারি করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে ভারত সরকার।
অর্থাৎ, ঐতিহাসিকভাবেই ভারতে পোস্ত চাষ হয়ে এসেছে। কিন্তু, তাহলে এখন কেন পোস্ত চাষের উপর এত কড়াকড়ি? কেন শুধুমাত্র তিনটি রাজ্যকেই পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়? এর পিছনে রয়েছে, ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের আয়োজিত ‘সিঙ্গল কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস’। এই কনভেনশনেই আফিমের নেশা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে অধিকাংশ দেশেই পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একমাত্র ভারতকে পোস্ত গাছ থেকে আফিমের আঠা উৎপাদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, একই সঙ্গে বেশ কিছু কঠোর শর্তও আরোপ করা হয়েছিল। সেই সকল শর্ত মানার জন্য, ১৯৮৫ সালের নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স আইনে, ভারতে পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। শুধুমাত্র সেন্ট্রাল ব্যুরো অব নারকোটিকস-এর পক্ষ থেকে যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়, তারাই পোস্ত চাষ করতে পারেন।
ভারত ছাড়া আরও ১১টি দেশে পোস্ত চাষের অনুমতি দিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সিঙ্গল কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস’। এই দেশগুলি হল অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, চিন, হাঙ্গারি, নেদারল্যআন্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তুরস্ক এবং চেক রিপাবলিক। এই দেশগুলি পোস্ত চাষ করলেও, তা থেকে আফিমের আঠা নিষ্কাশনের অনুমতি নেই এই দেশগুলির। একমাত্র ভারতের ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওই কনভেনশন। এই অনুমতি বহাল রাখতে, রাষ্ট্রপুঞ্জের আরোপিত শর্তাবলী মানতেই হবে ভারতকে। তাই ঐতিহাসিকভাবে ভারতে পোস্ত চাষ হলেও, বর্তমানে এই বিষয় নিয়ে এত কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। তবে অবৈধভাবে বিশ্বে আফিম চাষের সবথেকে বড় ক্ষেত্র হল আফগানিস্তান। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের অর্থনীতির অন্যতম উৎসই হল আফিমের চোরাচালান।