কমছে জন্মের হার, বাড়ছে লিঙ্গ বৈষম্য, তার খেসারত দিচ্ছেন মহিলারই

নমুনা পঞ্জীকরণ ব্যবস্থার ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান আর্থ-সামাজিক নকশা বা প্যাটার্ন অনুসারে একজন মহিলার তার জীবনকালে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার গড়ে ২.২। এই হার পরবর্তী সময়ে আরও হ্রাস পেয়ে দাঁড়াতে পারে ২.১-তে।

কমছে জন্মের হার, বাড়ছে লিঙ্গ বৈষম্য, তার খেসারত দিচ্ছেন মহিলারই
ভারতে নারী-পুরুষের হারে তারতম্য বাড়ছে ।
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 8:15 AM

নিজস্ব প্রতিবেদন, ১৮ অক্টোবর: ভারতে কমছে জন্মের হার । আরও শঙ্কার বিষয়, গত এক দশকে পুরুষ-নারীর জন্মের ব্যবধান নজিরবিহীন ভাবে প্রশস্ত হচ্ছে। এই ব্যবধান চোকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিগত কয়েক বছর ধরেই ভারতে জন্মের হার হ্রাস পেয়েছে। নমুনা পঞ্জীকরণ ব্যবস্থা (sample registration system)-র ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান আর্থ-সামাজিক নকশা বা প্যাটার্ন অনুসারে একজন মহিলার তার জীবনকালে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার (Total Fertility Rate)গড়ে ২.২। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হার পরবর্তী সময়ে আরও হ্রাস পেয়ে দাঁড়াতে পারে ২.১-তে।

ভারতে রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট (Replacement Fertility Rate):

বহু মানুষের মধ্যে এমন ধারণা আছে, পরিবর্তিত জন্মের হার অর্থাত্ রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট (Replacement Fertility Rate)  স্থায়ী হলে জনসংখ্যার হারও নিয়ন্ত্রণে আসবে বা হ্রাস পাবে। তবে এমনটা মনে করেন না প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি উপদেষ্টা কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ-র অধ্যাপক জে কে সাতিয়া। তাঁদের মতে, “এটি জনসংখ্যার সার্বিক গতির উপর নয়, বরং নির্ভর করে জননে সক্ষম ১৫-৪৯ বছর বয়সী অধিক সংখ্যক মানুষের উপর।” উদাহরণ হিসাবে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে পরিবর্তিত জন্মের হার পৌঁছয় কেরলে, কিন্তু ৩০ বছর পরও এই রাজ্যে বার্ষিক জন্মহার ছিল মাত্র ০.৭ শতাংশ।

বলে রাখা ভাল, রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট (Replacement Fertility Rate) হল, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে এক মহিলার সর্বোচ্চ প্রসব করার হার। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জনসংখ্যা বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে গড়ে এক মহিলা ২.১ সন্তান প্রসব করতে পারেন। এটাই হলো রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট।

২০০০ সালে ভারতে জন্মের হার গড়ে ৩.২ ছিল। ২০১৬ সালে এক ধাক্কায় হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ২.৩-তে। ২০১৮ সালে সেই হার গিয়ে পৌঁছয় ২.২। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনে এই হার ২.১-এ গিয়ে পৌঁছতে পারে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জনসংখ্যা বিভাগের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০৬১ সালে ভারত জনসংখ্যার সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে পারে। সেই সময়ে দেশের জনসংখ্যা হবে আনুমানিক ১৬১ কোটি।

বাড়ছে লিঙ্গ বৈষম্যের হার:

নমুনা পঞ্জীকরণ ব্যবস্থা (SRS) রিপোর্টে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও শঙ্কাজনক তথ্য হল ক্রমশ ব্য়বধান বাড়ছে লিঙ্গ অনুপাতের (Sex ratio)। সাধারণত, জন্মের সময় লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০৫০জন পুরুষে নারী ১০০০ জন কিংবা প্রতি ১০০০ জন পুরুষের ক্ষেত্রে ৯৫০ জন নারী। কিন্তু নমুনা পঞ্জীকরণ ব্যবস্থার রিপোর্ট বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে । ২০১১ সালে প্রতি ১০০০ জন পুরুষে নারীর সংখ্যা ছিল ৯০৬, ২০১৮ সালে সেই সংখ্যা কমে ৮৯৯-এ দাঁড়িয়েছে।

কেরল ও ছত্তীসগঢ় ছাড়া বাকি প্রায় সব রাজ্যেই কন্যার তুলনায় পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। ইউনাইটেড পপুলেশন ফান্ড (UNFPA)-এর স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ২০২০-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে আনুমানিক লিঙ্গ অনুপাত ৯১০, যা চিন ছাড়া বাকি সব দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই কম ।

এই বিষয়ে সি রঙ্গরাজন ও জে কে সাতিয়া বলেন, “এটি অত্যন্ত চিন্তার বিষয় কারণ এটি নারী-পুরুষের সার্বিক অনুপাতে প্রভাব ফেলবে এবং বিবাহ ব্যবস্থা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে।” ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যার সমাধানে তাঁরা বলেন, “নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে, তা এই অনুপাত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। সমাজে পুত্রসন্তানের চাহিদা বেশী থাকার কারণে যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠিক করতে সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত । এর ফলে সমাজে নারীদের অবস্থান উন্নীত হবে।”

সর্বশেষে বলা যায়, বর্তমানে যুব সম্প্রদায়কে জনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন । পাশাপাশি প্রয়োজন লিঙ্গ সমতার আদর্শ বোঝানো। এর ফলে ভারত অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা হ্রাস করে স্বাভাবিক লিঙ্গ সমতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। ভারতের জনসংখ্যার ভবিষ্যত নির্ভর করছে এই সিদ্ধান্তের উপর ।