Corona Virus Endemic : অতিমারি শেষে এন্ডেমিকের সূচনা? করোনার লম্বা ইনিংসে কেমন হবে আমাদের জীবন?

Covid-19 Endemic : ওমিক্রমনই কি শেষ ডেকে এনেছে করোনা অতিমারির? অনেকেই এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে, ‘কবে ফের বিনা ভয়ে মাস্কহীন ভাবে ঘুরে বেরাতে পারব?’ জবাবটা মিলবে খুব শীঘ্রই।

Corona Virus Endemic : অতিমারি শেষে এন্ডেমিকের সূচনা? করোনার লম্বা ইনিংসে কেমন হবে আমাদের জীবন?
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 18, 2022 | 10:28 AM

নয়া দিল্লি : ওমিক্রমনই কি শেষ ডেকে আনছে করোনা অতিমারির? অনেকেই এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে, ‘কবে ফের বিনা ভয়ে মাস্কহীন ভাবে ঘুরে বেরাতে পারব?’ জবাবটা মিলবে খুব শীঘ্রই। ভারত, ইউরোপ,আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বেই একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে করোনা অতিমারিতে দাড়ি পড়তে চলেছে ওমিক্রন ঢেউয়ে। তবে ওমিক্রনের পরে আদতে কী আসবে? আচমকা তুড়ি মেরে তো এই ভাইরাসকে বিশ্ব থেকে উধাও করে দেওয়া যাবে না। তবে করোনা অতিমারি বা প্যান্ডেমিক ‘এন্ডেমিকে’ পরিণত হবে বলে আশা অনেক বিশেষজ্ঞেরই। তবে এন্ডেমিকের অর্থ, কোভিড বিশ্বে থেকে যাবে। এর বিদায় নেই। তবে এর প্রভাব ততটা মারাত্মক হবে না।

কোভিড যদি জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত ঠিক কেমন হবে? এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুলের ইনফেকশন অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর জুলিয়ান হিসক্সের কথায়, ‘২০২২ সালে আমরা অতিমারির প্রায় আগের পরিস্থিতিতে ফিরতে পারব বলে আশা করছি।’ আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস আছে ভাইরাসেরই জায়গায়। তবে যা হচ্ছে, তা হল আমাদের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হচ্ছে। দুই বছর আগে যখন করোনাভাইরাস প্রথমবার বিশ্বে থাবা বসিয়েছিল, তখন আমরা নিরস্ত্র ছিলাম। আমাদের কাছে না ছিল প্রতিষেধক, না ছিল টিকা। আমরা অনভিজ্ঞ ছিলাম এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে। আর এর জেরে বাজি কারখানায় আগুন লাগার মতন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল গোটা বিশ্বে। তবে কোনও আগুন যেমন সারা জীবন ধরে জ্বলতে পারে না, তেমন এই সংক্রমণের ‘তেজ’ও কমতে বাধ্য। তবে নিজে নিজে এই ভাইরাস হার মানবে না। আমাদের একে হারাতে হবে।

আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মারণ ভাইরাসকে রুখতে সক্ষম হয়েছিলাম। খুব বেশি পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। পশ্চিম আফ্রিকাতে ইবোলাকে আমরা থমকে দিতে পেরেছিলাম। তবে করোনা যদি এন্ডেমিকে পরিণত হয়, তাহলে তা এইচআইভি, ফ্লু, মিজলস, ম্যালেরিয়া, টিবির মতো রোগের তালিকায় নাম লেখাবে। যেই এপিডেমিওলজিস্টরা রোগের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা একটি রোগকে তখনই এন্ডেমিক বলে বিবেচনা করবেন যখন সেই রোগের বিভিন্ন স্তর সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অনুমানযোগ্য হবে। এতদিন করোনার ক্ষেত্রে তেমনটা ছিল না। আচমকাই গত বছর ডেল্টা বিস্ফোরণে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। আবার এই বছরও ওমিক্রন ঢেউ ভারতকে শঙ্কিত করে তুলেছে। তবে ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন কম মারাত্মক। আর এর জন্যই অতিমারির ‘শেষ’ দেখছেন অনেকে।

কোভিড নিয়ে কতকটা অভয় প্রদান করার সুরেই লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রফেসর ডঃ আজরা ঘানিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এন্ডেমিক বলতে অনেকেই এটা বোঝাতে চাইছে যে কোভিড এখনও আছে। তবে আমাদের আর আগের মতো বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হবে না।’ তিনি দাবি করেন, একবছর আগেই করোনা টিকাকরণ শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এবং এক বছরের মধ্যেই আমরা ধাপে ধাপে আমাদের পুরোনো জীবন ফিরে পাচ্ছি। উল্লেখ্য, এই ব্রিটেনেই ওমিক্রন ঢেউ আতঙ্ক ছড়িয়েছে গত কয়েক মাস ধরে। সংক্রমণের হার দেখে অনেকেই আতকে উঠেছিলেন। ওমিক্রনের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্রিটেনের উপর কম নয়। বিধিনিষেধ জারি করা বা না করা নিয়ে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে। তেমনই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনস কোভিড লকডাউনের মাঝে পার্টি করে চাপের মুখে পড়েছিলেন। তবে রাজনীতিতে ‘ইস্যু’র আমদানি চলতেই পারে। আমাদের দেশেও এর কোনও ঘাটতি নেই। তবে মানুষের জীবনের কী হবে? আসল প্রশ্নটা তো সেখানেই।

বিশেষজ্ঞরা কোভিড অতিমারির শেষের শুরু দেখলেও একটি বিষয় নিয়ে তাঁরা সতর্ক করেছেন, এন্ডেমিক মানেই ভাইরাস কম মারাত্মক হয়ে যাওয়া নয়। ওমিক্রন হয়ত কম মারাত্মক। তবে এর পরে কোভিডের কোনও নয়া রূপ এলে যে সেটাও কম মারাত্মক হবে, এমন কথা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ম্যালেরিয়াও একটি এন্ডেমিক রোগ। তবে প্রতি বছর এই ম্যালেরিয়াতেই প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়।

ভারতে গতবছর মে মাস থেকে ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। সেই সময় দেশে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। মানুষ করোনার থাবা থেকে বাঁচতে টিকা নিতে শুরু করে। এক বছরের কম সময়েই ফের একটি ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশে। তবে বর্তমানে দেশে করোনার জেরে মৃত্যুর হার অনেক কম। গতবছর করোনা সংক্রমণের ঢেউয়ের সময়কালে যখন দিনে ৩ থেকে ৪ হাজার জন মারা যাচ্ছিলেন, সেখানে এখন ভারতে করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে খুব বেশি হলে ৩০০ থেকে ৪০০।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডের সঙ্গে যদি আমাদের বাঁচতে হয়, সেক্ষেত্রে বৃদ্ধরা এখনও সুরক্ষিত নন। সাধারণ সুস্থ সবল একজনের কোভিড হলে হয়ত তাঁর শরীরে ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ দেখা দেবে। তবে এন্ডেমিক পর্যায়তেও করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধরা প্রাণ হারাতে পারেন। তার একটি বড় কারণ হল কোমর্বিডিটি। এই আবহে যদি আমাদের ‘কোভিড জিরো’ নীতি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে আমাদের বিধিনিষেধের দিন এখনও শেষ হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের এটাও মত, যখন ফ্লু সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়, তখনও দেশে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের মৃত্যু হয়ে থাকে এর জেরে। তখন অবশ্য কেউ সেই অর্থে বিধিনিষেধ মানেন না, কেউ মাস্কও পরেন না। এই পরিস্থিতিতে আমদের কাছে প্রশ্ন হবে, আমরা কি মাস্কবিহীন ‘স্বাধীনতা’কে বেশি দাম দেব? নাকি সমাজের বৃদ্ধদের কোভিড থেকে রক্ষা করার বিষয়টি আমাদের ফোকাসে থাকবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস যদি মৌসুমী রোগে পরিণত হওয়ার প্রমাণ উপস্থাপন করে, তাহলে এই বছর শেষ হতে হতে বিধিনিষেধ অনেক শিথিল হবে। সঙ্গে করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমবে। তবে এখানে একটি আশঙ্কা রয়েছে, পরীক্ষা কমলে এটা বোঝা যাবে না যে মৌমুমী করোনা থেকে কতজন প্রাণ হারাচ্ছেন, আর সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা যাচ্ছেন।

আমেরিকা, ইউরোপের মতো স্বল্প জনবসতি দেশগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই মাস্ক ছাড়া মানুষ ঘুরে বেরান। টিকাকরণ সম্পন্ন করলে সেই ‘ছাড়’ তারা উপভোগ করেন। তবে এশিয়ার ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশগুলিতে কি সেই বিলাসিতা আছে? ভারতে করোনা টিকা নেওয়ার পরেও বহু লোক স্বেচ্ছায় মাস্ক পরেন। আবার অনেকেই সরকারি নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও মাস্ক পরেন না। তবে আমাদের এটা ভুললে চলবে না, অতিমারি শেষ হওয়ার পথে, করোনার জেরে তৈরি হওয়া ‘জরুরি অবস্থা’ এখনও চলবে বহুদিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়ে সতর্কতা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, এখনও করোনাকে এন্ডেমিক বলে ধরে নিয়ে ঢিলেমি দিলে ফল ভালো হবে না। এখনও টিকাকরণের উপর জোর দিতে হবে। এখনও সতর্ক থাকতে হবে। এখনও সহনাগরিকদের কথা ভেবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে আমাদের।

আরও পড়ুন : Covid-19 Vaccination : ফেব্রুয়ারিতে শেষ হতে পারে ১৫-১৮ বছরের টিকাকরণ, মার্চেই ১২-১৪ বছরের টিকাকরণ