বিমানে বসেও মনে হচ্ছিল তালিবানরা যদি উড়ান আটকে দেয়, রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা শোনালেন আফগান তরুণ আবদুল্লা

Afghanistan: রবিবার দিল্লিতে ফেরার বিমান ছিল আবদুল্লার। দেশের পরিস্থিতি খারাপ। তবু ভাবতে পারেননি এত তাড়াতাড়ি রাজধানীটাও দখলে নিয়ে নেবে তালিব-শক্তি।

বিমানে বসেও মনে হচ্ছিল তালিবানরা যদি উড়ান আটকে দেয়, রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা শোনালেন আফগান তরুণ আবদুল্লা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 17, 2021 | 8:31 PM

নয়া দিল্লি: দিল্লিতে পড়াশোনা করে বছর কুড়ির তরুণ আবদুল্লা। যেদিন কাবুল দখল করল তালিবানরা, সেদিনই দেশ থেকে ভারতে ফেরার বিমান ছিল তাঁর। দুপুরই দুপুরই বেরিয়ে পড়েন বিমানবন্দরের পথে। তাঁর গাড়িও বিমানবন্দরের দিকে এগোচ্ছে, ওদিকে তালিবানরাও এগিয়ে চলেছে আবদুল্লার মুলুকের দিকে। সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতাই জানালেন এই আফগান যুবক।

রবিবার দিল্লিতে ফেরার বিমান ছিল আবদুল্লার। দেশের পরিস্থিতি খারাপ। তবু ভাবতে পারেননি এত তাড়াতাড়ি রাজধানীটাও দখলে নিয়ে নেবে তালিব-শক্তি। সেদিন রাস্তাঘাটে মারাত্মক ভিড়। মনে হচ্ছিল গোটা দেশটাই যেন বিমানবন্দরে ছুটে চলেছে, জানান আবদুল্লা। আফগানি এই তরুণের কথায়, একটা সময় কাবুলের রাস্তায় গাড়ির নড়াচড়াই বন্ধ হয়ে যায়। তিনিও নেমে পড়েন, হাঁটা লাগান বিমানবন্দরের পথে। বিমানবন্দরে পৌঁছেই শোনেন আড়াই ঘণ্টা পিছিয়ে গিয়েছে উড়ানের সময়। সেখানে তখন থিক থিক করছে মানুষের ভিড়। পাগলের মতো লোকজন বিমানে উঠতে মরিয়া।

আবদুল্লার কথায়, “১২৯ জনের মতো যাত্রী ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে। বিমানে উঠে বসার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত একটা আশঙ্কা কাজ করছিল ভিতরে। খুব চিন্তা হচ্ছিল। কারণ, বিমানে ওঠার আগে অবধি বিমানবন্দরের যে ছবিটা দেখলাম তা জীবনে কখনও দেখিনি। এমন যে হতে পারে তা ভাবতেও পারি না। এরই মধ্যে মোবাইল ফোনে বেসে আসছে তালিবানদের কাবুল দখলের খবর।”

যতক্ষণ বিমানবন্দরে বিমান দাঁড়িয়ে সে এক ভয়াবহ চিত্র সেখানে। কী যে করছে মানুষ বিমানে উঠবে বলে! বেঁচে থাকার কী করুণ আর্তি মানুষের মধ্য়ে সেদিন দেখলেন আবদুল্লা। বলছিলেন, “এমনও মানুষ ছিলেন যাঁদের কাছে ভিসা নেই। এমনকী পাসপোর্টটা পর্যন্ত নেই। অথচ বিমানে উঠেই ছাড়বেন। বাচ্চা, বুড়ো, মহিলা! কী অবস্থা প্রত্যেকের।”

যাঁরা নিরাপদে বিমানে উঠে বসতে পেরেছেন আবদুল্লার মতো, তাঁদের মুখে শুধুই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে। কেউ কেউ দারুণ খুশি, কারণ তাঁরা একটা সুরক্ষিত দেশের পথে উড়ে যাচ্ছেন। কারও চোখে আবার জল, প্রিয়জনকে যে এই বিপদের মধ্যেই রেখে যেতে হচ্ছে। ‘অনেকে আবার আমার মতো উদ্বিগ্ন বিমানের উড়ানটা ঠিকমতো হবে কি না ভেবে’, বলছিলেন আবদুল্লা। মনে ভয়, যদিও বিমানবন্দরেও তালিবান হানা দেয়। বিমান যদি উড়তে না দেয়। ততক্ষণে দুবাইয়ের একটি বিমান বাতিলও ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে।

রবিবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ কাবুল থেকে দিল্লি পৌঁছয় AI-244 বিমানটি। ‘এয়ারপ্লেন’ মোড থেকে মোবাইল ফোন নর্মাল মোডে আনতেই বাড়ি থেকে মিসড কল। সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিয়ে ফোন করেন আবদুল্লা। প্রথমে মা, তারপর ছেলের সঙ্গে কথা বলেন বাবা। দু’পক্ষই জানায়, ‘ঠিক আছি’। মা-বাবা আফগানিস্তানেই রয়ে গিয়েছেন আবদুল্লার। জানালেন, যা পরিস্থিতি এখন পালাতে চেষ্টা করাটা ঝুঁকির। তার থেকে বাড়িতে বসে থাকাটা নিরাপদ। যদিও তা যে কতদিনের জন্য নিরাপদ, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আবদুল্লারও। আরও পড়ুন: গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠবে কান্না! কাবুল বিমানবন্দরে একা একা কেঁদে চলেছে শিশুটি, খোঁজ নেই মা-বাবার