Kerala: ‘ধর্ষণে গর্ভবতী হওয়ার থেকে বেশি…’, ব্যতিক্রমী সাজা দিল কেরলের আদালত
Kerala Court: ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল ১৭ বছর বয়সী এক নাবালিকা। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল), এই মামলার তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিল কেরলের এক আদালত।
তিরুবনন্তপুরম: ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে ১৭ বছর বয়সী এক নাবালিকা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল), তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিল কেরলের এক আদালত। অভিযুক্ত যুবককে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৮৬,০০০ টাকা জরিমানা করা হল। তিরুবনন্তপুরমের ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্টের (পকসো) বিচারক সুদর্শন জানিয়েছেন, ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হওয়ার থেকে বেশি ‘মানসিক আঘাত’ কিছুতে হতে পারে না। সুদর্শন বলেন, “ধর্ষণ অত্যন্ত খারাপ কাজ। এটি যে একটি হিংসাত্মক অপরাধ তা এই মামলার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ একজন মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরের অবাঞ্ছিত লঙ্ঘন, অপর এক ব্যক্তির উপর ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণের নৃশংস প্রয়োগ।”
বিচারক সুদর্শন বলেন, “সিনেমা বা বই থেকে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের যে স্টিরিওটিপিকাল পরিস্থিতি আমরা দেখি বা উপলব্ধি করি, ধর্ষণের পীড়া আসলে তার থেকে অনেক বেশি। এটা সবসময় অন্ধকার গলিতে ঘটে না। এটা যে কোনও জায়গাতেই ঘটতে পারে, এই ক্ষেত্রে যেমন নির্যাতিতার বাড়ির ভিতরেই ঘটেছে। সবসময়, অপরাধী অপরিচিত নাও হতে পারে, কোনও পরিচিত ব্যক্তিও ধর্ষক হতে পারে। ধর্ষণের মাধ্যমে, নির্যাতিতার নিরাপত্তাবোধ, স্বমূল্য এবং সুস্থ সম্পর্ক স্থাপনের এবং বজায় রাখার ক্ষমতা কেড়ে নেয় হামলাকারী। মানসিক আঘাতের কারণে, যৌন নিপীড়ন বা যৌন হয়রানির প্রভাব কখনই স্বল্পমেয়াদি হয় না। কোনও ব্যক্তির গোটা জীবন জুড়ে তাড়া করে বেড়ায় সেই অভিজ্ঞতা।”
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২১-এর ২১ জুন। ওই সময় থেকেই ওই নাবালিকাকে ফোন করে এবং টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে হয়রানি করছিল বলে দাবি করেন নির্যাতিতার আইনজীবী। নির্যাতিতার আবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের অগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে, দু’বার নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করেছিল সে। এর ফলে ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল। ধর্ষণের কথা অন্য কাউকে জানালে তার নগ্ন ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল অভিযুক্ত। একইসঙ্গে নির্যাতিতাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
অভিযুক্তের পক্ষ থেকে আদালতে এই সকল অভিযোগের বিরোধিতা করা হয়। অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, এই ক্ষেত্রে এফআইআর দায়েরে অনেক দেরি করা হয়েছিল। অভিযোগে প্রথম ধর্ষণের তারিখও উল্লেখ করা হয়নি। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয় যে, গর্ভাবস্থার সময়কাল অনুসারে দ্বিতীয় ধর্ষণের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, নাবালিকার দেওয় সাক্ষ্যে অসঙ্গতি রয়েছে এবং তার দাখিল করা প্রমাণগুলিও দুর্বল বলে দাবি করে অভিযুক্ত।
আদালতে অভিযুক্ত পক্ষের এই সকল যুক্তি অবশ্য ধোপে টেকেনি। পকসো আদালতের সাফ জানায়, ধর্ষিতা নাবালিকার পক্ষে ঘটনার সঠিক তারিখ এবং সময় মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। যদি ধরেও নেওয়া হয়, যে নাবালিকার সন্তান দুই পক্ষের সম্মতিমূলক সম্পর্কের ফলে হয়েছে, সেই ক্ষেত্রেও তার পক্ষে দিনক্ষণ মনে রাখা অসম্ভব। আদালত আরও জানিয়েছে, যেহেতু সোনোগ্রাফির মাধ্যমে নাবালিকার গর্ভাবস্থার সময় জানা গিয়েছে, তাই সেই সময় অনুসারে দ্বিতীয় ধর্ষণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, এই যুক্তি গ্রাহ্য করা যায় না। নির্যাতিতার সাক্ষ্যের কোনও অসঙ্গতিও পাওয়া যায়নি।