বদায়ূঁ গণধর্ষণকাণ্ডে পুলিসের জালে মূল অভিযুক্ত পুরোহিত, গ্রেফতার পাশের গ্রাম থেকে

বুধবারই দুই শিষ্য পুলিসের হাতে ধরা পড়লেও টিকি মিলছিল না মূল অভিযুক্তের। গোপনসূত্রে পুলিস জানতে পারে, পাশের গ্রামে এক শিষ্যের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন তিনি, সেইমতোই বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

বদায়ূঁ গণধর্ষণকাণ্ডে পুলিসের জালে মূল অভিযুক্ত পুরোহিত, গ্রেফতার পাশের গ্রাম থেকে
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 08, 2021 | 11:58 AM

লখনউ: বদায়ূঁ গণধর্ষণকাণ্ডে (Budaun Gangrape Case) অবশেষে গ্রেফতার হল মূল অভিযুক্ত। রবিবার মন্দির থেকে ফেরার পথে বছর ৫০-র এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিত ও দুই শিষ্য। ঘটনার চারদিন পর গ্রেফতার করা হল মূল অভিযুক্তকে। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক জানান, এক শিষ্যের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন ওই পুরোহিত, সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বুধবারই বাকি দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল উত্তর প্রদেশ পুলিস (Uttar Pradesh Police)।

নির্ভয়াকাণ্ডের স্মৃতি উসকে দিয়েছিল উত্তর প্রদেশের বদায়ূঁ জেলার উঘৈতি গ্রামের গণধর্ষণের ঘটনা। দিল্লিতে নির্ভয়াকে ধর্ষণের পর যেভাবে অত্যাচার করেছিল ধর্ষণকারীরা, ঠিক একইভাবে এক্ষেত্রেও ধর্ষণের পর নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বুকে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়, ভেঙে যায় পাঁজরের হার। নির্যাতিতার একটি পা-ও ভেঙে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত অবস্থাতেই তাঁকে রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে পালায় অভিযুক্তরা।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও নির্যাতিতাকে বাঁচানো যায়নি। সেই রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে পুলিসে অভিযোগ জানানোর পরও প্রথমে কোনও পদক্ষেপ না করারই অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল থেকে দেহ প্রথমে ময়নাতদন্তের জন্যও পাঠানো হয়নি। নির্যাতিতার পরিবার দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন। দেখা যায়, যে হলুদ চাদরে তাঁর মৃতদেহ ঢাকা ছিল, তা রক্তে ভিজে যাচ্ছে, বেঁকে রয়েছে একটি পা। গ্রামবাসীরা মৃতদেহ দেখতে ভিড় জমালে টনক নড়ে পুলিসের, বিকেলে দেহটি বাড়ি থেকে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লুর আশঙ্কা, কাটাছেড়া করে পরীক্ষা হবে মৃত কাকের দেহ

ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হতেই মন্দিরের পুরোহিত ও দুই শিষ্যের নাম সামনে আসে। এরপরই তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিস। বুধবারই দুই শিষ্য পুলিসের হাতে ধরা পড়লেও টিকি মিলছিল না মূল অভিযুক্তের। গোপনসূত্রে পুলিস জানতে পারে, পাশের গ্রামে এক শিষ্যের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন তিনি, সেইমতোই বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার বিবরণী দিয়ে নির্যাতিতার ছেলে বলেন, “মা নিয়মিত মন্দিরে যেতেন পুজো দিতে। রবিবারও তিনি বিকেল পাঁচটা নাগাদ মন্দিরে যান। ওঁরাই (অভিযুক্তরা) রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ গাড়িতে করে মাকে মৃত অবস্থায় এনে দোরগোড়ায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।”

তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে উঘৈতি থানার এসএইচও-কে। অন্যদিকে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যের মন্তব্য ঘিরেও শুরু হয়েছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান চন্দ্রমুখী দেবী। তিনি বেরিয়ে বলেন, “নির্যাতিতা ওই মহিলার একা বেরনো উচিত হয়নি। উনি যদি ওই সময়ে না বেরতেন, তবে এই ঘটনা ঘটতই না। উনি চাপে থাকতে পারেন কিন্তু কোন সময়ে বেরবেন, তা একজন মহিলা হিসাবে সবসময়ই বিবেচনা করে দেখা উচিত। উনি যদি না বের হতেন বা সঙ্গে কাউকে নিয়ে বের হতেন, তবে এই ঘটনা ঘটত না।”

জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যের এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয় বিতর্ক, পরিস্থিতি সামাল দিতে মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান রেখা শর্মা টুইট করে বলেন, “জানিনা কে তিনি এই কথা বলেছেন, তবে একজন মহিলার যেকোনও সময়ে , যেকোনও জায়গায় যাওয়া অধিকার রয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।”

আরও পড়ুন: ৫০ বছরের কষ্টার্জিত সম্মান এক মিনিটও লাগে না ধ্বংস করতে: আকবর