Marital Rape: ‘অপরাধের ক্ষেত্রে সম্পর্ক গুরুত্ব পায় না’, স্বামীকে ‘ধর্ষক’ বলার ক্ষেত্রে কোন যুক্তি দিলেন বিচারপতি শাকধের?

Marital Rape: ভারতীয় আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা যায় না। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি মামলা হয় দিল্লি হাইকোর্টে।

Marital Rape: 'অপরাধের ক্ষেত্রে সম্পর্ক গুরুত্ব পায় না', স্বামীকে 'ধর্ষক' বলার ক্ষেত্রে কোন যুক্তি দিলেন বিচারপতি শাকধের?
বিচারপতি রাজীব শাকধের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 12, 2022 | 5:22 PM

নয়া দিল্লি : শুধুমাত্র বিয়ের রীতি সম্পূর্ণ হয়েছে বলেই একজন পুরুষ একজন মহিলাকে ‘ধর্ষণ’ করতে পারে, এমন মতের বিরোধিতা করেন অনেকেই। বিভিন্ন সময় এই ইস্যুতে মামলা হলেও ভারতীয় আইনে এখনও অপরাধ হিসেবে মান্যতা পায়নি বৈবাহিক ধর্ষণ। তাই বিবাহিত পুরুষের বিরুদ্ধে স্ত্রী অভিযোগ আনলে, তাতে কোনও শাস্তি হয় না স্বামীর। সম্প্রতি এমনই একটি মামলা হয় দিল্লি হাইকোর্টে। আর সেই মামলায় এক বিচারপতি বৈবাহিক ধর্ষণ-কে মান্যতা দেওয়ার বিপক্ষে মত প্রকাশ করেন ও অন্যজন পক্ষে।

বিচারপতি রাজীব শাকধের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন স্বামী হোক বা অন্য কেউ, ধর্ষণের অপরাধ সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়া উচিত। ভারতীয় আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ অপরাধ বলে গণ্য করা না হলেও, একাধিক যুক্তি দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন স্বামীকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করতে আইনে কোনও বাধা নেই।

বিচারপতি রাজীব শাকধের কী কী যুক্তি দিলেন?

১. আইনের ৩৭৫ ধারায় ব্যতিক্রম রয়েছে। স্বামী যদি ১৮ বছরের কম বয়সী স্ত্রী-কে যৌনতায় বাধ্য করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম প্রযোজ্য। তবে তা ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে না। ব্যতিক্রম এই কারণেই রাখা হয়েছে, যাতে স্ত্রী-কে যৌনতায় বাধ্য করলে স্বামীকে সম্পূর্ণভাবে ধর্ষণের শাস্তি না দেওয়া হয়। কিন্তু ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন একজন মহিলাকে হেনস্থা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। আর তাতে যদি একজন স্বামী ছাড় পান, তাহলে অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়া হয়ে যায়।

২. নতুন করে কোনও অভিযোগকে তখনই অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয়, যদি অপরাধের পরিস্থিতি বদলে যায়। সেই অভিযোগের পরিধির মধ্যে যদি একজন স্বামী পড়েন, তাহলেও ব্যতিক্রম প্রযোজ্য হবে।

৩. ধর্ষণের মূল আইনে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর মধ্যে কোনও নির্দিষ্ট সম্পর্কের কথা বলা হয়নি। একজন অপরিচিত পুরুষ থেকে শুরু করে লিভ-ইন পার্টনারও এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। স্বামীর কথা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে পরে। ২০১৩-র সংশোধনীতে স্বামীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিচ্ছেদ হওয়ার পর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে কী বিধান দেওয়া হবে, তারও উল্লেখ রয়েছে।

৪. ভারতে যে কোনও অপরাধ সংক্রান্ত আইনে অভিযুক্ত বা অপরাধীর সঙ্গে অভিযোগকারিণীর সম্পর্ক খতিয়ে দেখা হয় না। অপরাধ কী, সেটাতেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। শাস্তিযোগ্য অপরাধে শাস্তি দেওয়ার কথাই বলা আছে আইনে, সম্পর্ক যাই হোক না কেন।

কী বলছেন সমাজকর্মীরা?

অধ্যাপিকা নন্দিনী ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে জানান, বৈবাহিক ধর্ষণের আইন আসুক, কিন্তু তা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। তাঁর দাবি, একজন পুরুষের ইচ্ছা করছে না অথচ স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা মেটাতে হয়, এমন ঘটনাও ঘটেই থাকে। তাঁর কথায়, ‘পুরুষের মন বলে যে একটা বস্তু আছে, সেটা আমরা মানি না।’ তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে মহিলাদেরই ছোট করা হচ্ছে। মেয়েদেরও যে শারীরিক চাহিদা থাকা স্বাভাবিক, সেটা মানা হচ্ছে না। এগুলোর বাইরে বেরনো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, একজন মহিলা তখনই এরকম একটি অভিযোগ আনতে পারেন, যখন তাঁর পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়। কারণ তিনি বুঝে যান যে তাঁর আর ওই সম্পর্ক থেকে পাওয়ার কিছু নেই। ওই অভিযোগ আনার পর যে স্বামীর পরিবারে আর ফিরে যেতে পারবেন না, সেটাও বুঝে যান ওই মহিলা। তাই বৈবাহিক ধর্ষণের আইন যদি আনা হয়, তাহলে মহিলারা তার অপব্যবহার করবেন না বলেই মনে করেন তিনি।