Agnipath Facts: সত্যিই কি অনিশ্চিত ‘অগ্নিবীর’দের ভবিষ্যত? ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে যাবতীয় ভুল ধারণা দূর করল কেন্দ্র

Agnipath scheme, Myths vs Facts: অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আপত্তি জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তারাও। এই প্রকল্প নিয়ে যাবতীয় ভ্রান্ত ধারনা এবং অস্পষ্টতা দূর করল কেন্দ্রীয় সরকার।

Agnipath Facts: সত্যিই কি অনিশ্চিত 'অগ্নিবীর'দের ভবিষ্যত? 'অগ্নিপথ' নিয়ে যাবতীয় ভুল ধারণা দূর করল কেন্দ্র
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 16, 2022 | 9:53 PM

নয়া দিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের জন্য অগ্নিপথ প্রকল্প চালু করার পরই, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সেনায় নিয়োগের এই নয়া পদ্ধতি নিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার হিংসাত্মক আন্দোলন দেখা গিয়েছে বিহারে। বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশেও। শুধু চাকরি প্রার্থীরাই নন, নয়া নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া জওয়ানরাও। আসলে, এই প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। অনেকগুলি বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে মানুষের মনে। এই অবস্থায়, বৃহস্পতিবার অনানুষ্ঠনিকভাবেই এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিষয়ে কিছু সত্য তুলে ধরল কেন্দ্রীয় সরকার।

‘অগ্নিপথ’ নিয়ে সবথেকে বেশি উদ্বেগ রয়েছে, ‘অগ্নিবীর’দের ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকেই প্রশ্ন, চাকরির মেয়াদের চার বছরের পর তাঁরা কী করবেন? এই বিষয়ে সরকার জানিয়েছে, পরিষেবা শেষে যে অগ্নিবীররা উদ্যোগপতি হতে চায়, তাদের একটি আর্থিক প্যাকেজ এবং ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হবে। যারা আরও পড়াশোনা করতে চায়, তাদের দ্বাদশ শ্রেণির সমমানের সার্টিফিকেট এবং ব্রিজিং কোর্স করার সুযোগ দেওয়া হবে। চাকরি করতে চাইলে তাদের সিএপিএফ এবং রাজ্য পুলিশে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের কর্মসংস্থানের বেশ কিছু ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অনেকে আবার বলছেন, অগ্নিপথের ফলে বাহিনীতে তরুণদের নিয়োগের সুযোগ কমবে। পাশাপাশি, বর্তমানে স্থায়ী নিয়োগ পদ্ধতিতে, একটি রেজিমেন্টের সৈনিকদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়। নয়া ব্যবস্থায় সেই বন্ধন তৈরি হবে না। এদিন সরকার জানিয়েছে, কার্যক্ষেত্রে অগ্নিপথ নিয়োগ ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীতে তরুণদের চাকরির সুযোগ বাড়বে। আগামী কয়েক বছরে অগ্নিবীরদের নিয়োগে সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত জওয়ানদের সংখ্যা দাঁড়াবে বর্তমান সময়ের প্রায় তিনগুণ। আর, রেজিমেন্টাল ব্যবস্থারও কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। নয়া ব্যবস্থায় জওয়ানদের মধ্যে বন্ধন বরং আরও মজবুত হবে। কারণ, চার বছরের অস্থায়ী চাকরির শেষে সেরা অগ্নিবীরদের বিভিন্ন রেজিমেন্টে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তাদের অনেকে আবার মনে করছেন, স্বল্পমেয়াদি নিয়োগে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যাবে। তবে সরকার সাফ জানিয়েছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সামরিক বাহিনীতে এই ধরনের স্বল্পমেয়াদী নিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে। কাজেই, এই ব্যবস্থাটি ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা সেনাবাহিনীকে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং চটপটে করে তোলে। এছাড়া, চার বছর পর সেনাবাহিনীতে পুনর্নিয়োগের আগে অগ্নিবীরদের কর্মক্ষমতা ফের পরীক্ষা করা হবে। তাই সেনাবাহিনী অফিসার ব়্যাঙ্কের নিচের পদেও পরীক্ষিত জওয়ানদের পাবে।

অগ্নিপথ ব্যবস্থায় সাড়ে সতেরো থেকে একুশ বছর বয়সীদের নিয়োগ দেওয়া হবে। অনেকে দাবি করছেন, এত কম বয়সীরা সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য যথেষ্ট পরিণত নয়। তাছাড়া, বাহিনীতে অত্যন্ত বিশ্বস্ত জওয়ানদের প্রয়োজন। এই তরুণরা সেই প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে কিনা, তাই নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সরকার জানিয়েছে, বিশ্বের বেশিরভাগ সেনাবাহিনীই যুবকদের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বাহিনীতে কখনই অভিজ্ঞদের তুলনায় তরুণদের সংখ্যা বেশি হবে না। বরং, অগ্নিপথ প্রকল্পের ফলে বাহিনীতে তরুণ ও অভিজ্ঞদের সুষম ভারসাম্য তৈরি হবে।

কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবার এক কদম এগিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অগ্নিবীররা ভারতীয় সমাজকে বিপদে ফেলতে পারে। মেয়াদ শেষে তারা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে পারে। সরকার এর কড়া জবাব দিয়েছে। কেন্দ্রের মতে এই ধারণা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নীতি ও মূল্যবোধের চরম অপমান। কেন্দ্রের মতে, যে তরুণরা চার বছর ধরে উর্দি গায়ে তুলবে, তারা সারা জীবনই দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। বর্তমান সময়েও সশস্ত্র বাহিনী হাজার হাজার জওান অবসর গ্রহণ করেন। তারা কখনও দেশবিরোধী যোগদানের কোনো কোনও কাজে যুক্ত হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই।

এই বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে সরকার কোনও পরামর্শ করেনি বলে, সশস্ত্র বাহিনীর অনেক প্রাক্তন কর্তাই হতাশা প্রকাশ করেছেন। সরাসরি এর জবাব না দিলেও সরকার জানিয়েছে, বিগত দুই বছর ধরে সশস্ত্র বাহিনীতে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বদলের বিষয়ে বিস্তৃত পরামর্শ করা হয়েছে। কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, এই নয়া নিয়োগ প্রস্তাবটি তৈরি করেছে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ মিলিটারি অফিসারস’। অনেক প্রাক্তন কর্তারাও এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে দাবি করেছে কেন্দ্র।